রূপপুরের সরঞ্জামবাহী রুশ জাহাজ এখন চীনের পথে

রাশিয়ার জাহাজ উরসা মেজর
ছবি: সংগৃহীত

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সরঞ্জাম বহনকারী রাশিয়ার জাহাজ উরসা মেজর এখন চীনের পথে রয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতে পণ্য খালাসে ব্যর্থ হওয়ার পর জাহাজটি শেষ পর্যন্ত চীনের কোনো বন্দরে রূপপুরের সরঞ্জাম খালাস করতে পারে। চীন থেকে ওই সরঞ্জাম পরে বাংলাদেশে আনা হতে পারে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র গতকাল রোববার প্রথম আলোকে এ তথ্য জানিয়েছে। সূত্র আরও জানায়, সম্প্রতি রাশিয়ার পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে জানানো হয়, রূপপুরের সরঞ্জামবাহী জাহাজ উরসা মেজর বঙ্গোপসাগর ছেড়ে গেছে। সেটি রাশিয়ার বন্ধুপ্রতিম তৃতীয় কোনো দেশের বন্দরে ভিড়বে এবং সেখানে পণ্য খালাস হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে জানান, রাশিয়া সরাসরি কোনো দেশের নাম উল্লেখ করেনি। তবে আভাস দিয়েছে যে রূপপুর প্রকল্পের সরঞ্জাম চীনে খালাস হতে পারে।

এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গতকাল দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমাদের কাছে তাজ্জব লেগেছে যে রাশিয়া জেনেশুনে নিষেধাজ্ঞা আছে, এমন জাহাজের নাম পরিবর্তন করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পণ্য পাঠিয়েছে। আমরা এটি আশা করিনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি, রাশিয়া এখন নিষেধাজ্ঞা নেই, এমন একটি জাহাজে পণ্যগুলো পাঠাবে।’

আব্দুল মোমেন জানান, রাশিয়ার ৬৯টি জাহাজ যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে। এর বাইরে তাদের কয়েক হাজার জাহাজ রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের ভালো সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, ‘আমরা রাশিয়াকে বলেছি, তাদের যেসব জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আছে, সেগুলো ছাড়া অন্য যেকোনো জাহাজে পাঠাতে পারে। নিষেধাজ্ঞা আছে, এমন জাহাজ আমরা গ্রহণ করতে চাই না।’

মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকা উরসা মেজর নামের জাহাজটি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সরঞ্জাম নিয়ে গত ২৪ ডিসেম্বর মোংলা বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। তার আগে ২০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে জানানো হয় যে জাহাজটি আসলে উরসা মেজর নয়। এটি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা জাহাজ স্পার্টা-৩।

বিষয়টি যাচাই করার পর বাংলাদেশ জাহাজটিকে বন্দরে ভিড়তে নিষেধ করে। পরে জাহাজটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া বন্দরে যায়। সেখানে রূপপুরের সরঞ্জাম খালাসের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু জাহাজটি ভারতের অনুমতি পায়নি। এ অবস্থায় ১৬ জানুয়ারি ভারতের জলসীমা ছেড়ে যায় জাহাজটি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরকালে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আলোচনার সময় (১৫ জানুয়ারি) তিনি কর্মকর্তাদের জানান, রাশিয়ার জাহাজটির ওপর থাকা মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কথা ভারতকেও জানানো হয়েছে। জাহাজটি সে দেশে ভিড়তে না দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ভারতেও জাহাজটি পণ্য খালাস করতে পারবে না, এটা বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের আশ্বস্ত করে যান মার্কিন এই জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক।

রাশিয়ার কারিগরি সহায়তা ও ঋণে পাবনার রূপপুরে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করছে সরকার। ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১০৫ টাকা ধরে)।