হাজার কারাবন্দীর মধ্যে কেন একজনের মাথায় লাল টুপি

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারছবি: প্রথম আলো ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দীর সংখ্যা পাঁচ হাজারের কম। এর মধ্যে হাজতিদের (যাঁদের মামলা বিচারাধীন) গায়ে থাকে সাধারণ পোশাক। আর কয়েদিদের (যাঁদের সাজা হয়েছে) পরনে থাকে বিশেষ পোশাক—সাদার ওপর ডোরাকাটা, মাথায় সাদা টুপি। কিন্তু বন্দীদের মধ্যে একজন আলাদা। তাঁর মাথায় সাদা নয়, আছে লাল টুপি। নাম ফরহাদ হোসেন (৩৫)।

হত্যা মামলায় কারাবন্দী থাকাকালে তিন বছর আগে কারাগারের দেয়াল টপকে পালিয়ে গিয়েছিলেন ফরহাদ। পালানোর কারণে কারাবিধি অনুযায়ী ফরহাদের মাথায় ‘লাল টুপি’ পরিয়ে দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সেলে আছেন তিনি। কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

কারা বিধি অনুযায়ী, যেসব বন্দী পালিয়ে গিয়ে ধরা পড়েন, তাঁদের মাথায় ‘লাল টুপি’ ও শাস্তির কারণে রেয়াদ–সুবিধাবঞ্চিত বন্দীদের নীল রঙের টুপি পরানো হয়।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কারাবিধি অনুযায়ী কারাগার থেকে পালানোর কারণে বন্দী ফরহাদ হোসেনকে ‘লাল টুপি’ পরানো হয়েছে। এ কারাগারে তিনিই একমাত্র ‘লাল টুপি’ পরিহিত বন্দী।

২০২১ সালের ৬ মার্চ চট্টগ্রাম কারাগার থেকে পালানোর তিন বছর আগেও অন্য এক মামলায় কারাগারে থাকা অবস্থায় পালানোর চেষ্টা করেছিলেন তিনি। ওই সময়ে ফরহাদ কারাগারের ড্রেনে ও ছাদে আত্মগোপনে ছিলেন। পরে তাঁকে খুঁজে বের করে কারা কর্তৃপক্ষ। এরপর ওই মামলায় তিনি জামিনে মুক্তি পান।

চট্টগ্রাম কারাগার থেকে আদালতে হাজিরা দিতে আসা ১০ জন বন্দীর সঙ্গে গত সোমবার কথা হয় প্রথম আলোর। তাঁরা জানিয়েছেন, হাজার হাজার বন্দীর মধ্যে একজনকে সহজে চেনা যায়। কারণ, তাঁর মাথায় লাল টুপি রয়েছে।

আরও পড়ুন

২০২১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে সদরঘাট থানার এসআরবি রেলগেট এলাকায় আবুল কালাম আবু নামের এক ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীর বুকে ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে। পরদিন সকালে কালাম চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যান। ওই ছুরিকাঘাতের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি কারাগারে আসেন ফরহাদ।

কারাবিধি অনুযায়ী কারাগার থেকে পালানোর কারণে বন্দী ফরহাদ হোসেনকে ‘লাল টুপি’ পরানো হয়েছে। এ কারাগারে তিনিই একমাত্র ‘লাল টুপি’ পরিহিত বন্দী।
–মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক

কারা সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ৬ মার্চ ভোর সোয়া ৫টায় তৎকালীন কারারক্ষী নাজিম উদ্দিন কর্ণফুলী ভবনের বিশেষ ওয়ার্ডের (দুর্ধর্ষ বন্দীদের ওয়ার্ড) তালা খোলার পর কৌশলে পালিয়ে যান বন্দী ফরহাদ হোসেন। ওই দিন ট্রেনে প্রথমে ঢাকা, পরে নরসিংদীতে ফুফুর বাড়িতে চলে যান। ৯ মার্চ ভোরে নরসিংদী জেলায় ফুফুর বাড়ি থেকে জেলপালানো ফরহাদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে নগরের কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার
ছবি: প্রথম আলো ফাইল ছবি

২০২১ সালের ৬ মার্চ চট্টগ্রাম কারাগার থেকে পালানোর তিন বছর আগেও অন্য এক মামলায় কারাগারে থাকা অবস্থায় পালানোর চেষ্টা করেছিলেন তিনি। ওই সময়ে ফরহাদ কারাগারের ড্রেনে ও ছাদে আত্মগোপনে ছিলেন। পরে তাঁকে খুঁজে বের করে কারা কর্তৃপক্ষ। এরপর ওই মামলায় তিনি জামিনে মুক্তি পান।

তারও আগে ২০১৬ সালে ছিনতাইয়ের আরেকটি মামলায় কারাগারে থাকা অবস্থায় পালানোর চেষ্টা করেছিলেন ফরহাদ। বর্তমানে মামলাটি নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বন্দী ফরহাদের বিরুদ্ধে কারাগার থেকে পালানোর ঘটনায় দায়ের করা মামলা ও আগের দুটি মামলা (একটি হত্যা মামলা) বিচারাধীন। এসব মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ফরহাদকে কড়া পাহারায় রাখা হয়েছে, যেন তিনি আর কারাগার থেকে পালাতে না পারেন।