ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। এখন এটি কার্যকর হলে কাউকে গ্রেপ্তার করে থানায় নেওয়ার সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির পরিবার, বন্ধু বা আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানাতে হবে। কোনো অবস্থায় এ সময় ১২ ঘণ্টার বেশি নেওয়া যাবে না।
আজ বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘ফৌজদারি কার্যবিধি (দ্বিতীয় সংশোধনী) অধ্যাদেশ, ২০২৫’–এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্ত জানান আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এ সময় অন্যান্য কিছু সিদ্ধান্ত জানান স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশ সংবিধান ও ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিকটস্থ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করতে হয়। অন্যদিকে কাউকে গ্রেপ্তার করার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর পরিবার ও স্বজনদের জানাতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে।
ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধনের বিষয়বস্তু সাংবাদিকদের জানানোর সময় আদালতের রায় এবং বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শের কথা উল্লেখ করেন আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন এই সংশোধনী কার্যকর হওয়ার পর থেকে যে পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার করতে যাবেন, তাঁর যথাযথ পরিচিতি থাকতে হবে, নেমপ্লেট থাকতে হবে, আইডি কার্ড থাকতে হবে। যে ব্যক্তি গ্রেপ্তার হচ্ছেন, তিনি চাহিবামাত্র তাঁকে পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। এটি বাধ্যতামূলক। এরপর তাঁকে যখন থানায় নিয়ে আসা হবে, তখন যত দ্রুত সম্ভব গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির পরিবার, বন্ধু বা আইনজীবীকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানাতে হবে কী কারণে, কোন মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং গ্রেপ্তার ব্যক্তি এখানে আছেন। এটি করতে কোনো অবস্থাতেই ১২ ঘণ্টার বেশি সময় নেওয়া যাবে না। এর মধ্যে জানাতেই হবে।
আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তির শরীরে যদি কোনো আঘাতের চিহ্ন থাকে, তিনি যদি বলেন অসুস্থ বোধ করছেন, তাহলে অবশ্যই সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসাসুবিধা দিতে হবে।
যে পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার করতে যাবেন, তাঁর যথাযথ পরিচিতি থাকতে হবে। নেমপ্লেট থাকতে হবে, আইডি কার্ড থাকতে হবে। যে ব্যক্তি গ্রেপ্তার হচ্ছেন, তিনি চাহিবামাত্র তাঁকে পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। এটি বাধ্যতামূলক।
সংশোধনী অনুযায়ী প্রতিটি গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে বিস্তারিত লিখিত তথ্য থাকতে হবে। কাকে, কেন, কী অভিযোগে, কোন আইনে, পরিবারের কার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, কে গ্রেপ্তার করেছে—এসব বিস্তারিত লিখিত থাকতে হবে। যে সংস্থাই গ্রেপ্তার করুক, তাদের সংশ্লিষ্ট অফিসে সব তথ্য থাকতে হবে। এ ছাড়া নিয়মিতভাবে পুলিশ সদর দপ্তর, প্রতিটি পুলিশ সুপারের কার্যালয় ও থানায় গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের তালিকা থাকবে।
৫৪ ধারায় গ্রেপ্তারের বিষয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন
৫৪ ধারায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানান আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, যদি সন্দেহের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়, তাহলে যিনি গ্রেপ্তার করবেন, তাঁকে নিশ্চিত হতে হবে যে তাঁর সামনে অপরাধ ঘটেছে এবং বিশ্বাস করার কারণ আছে যে তিনিই (সন্দেহভাজন) অপরাধটি করেছেন। ৫৪ ধারায় কেন গ্রেপ্তার করা হলো, তা লিখিতভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে। এখানে সুনির্দিষ্টভাবে বলতে হবে, কেন তাঁর (আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য) মনে হলো এই লোক অপরাধ করেছেন। এটি আমলযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে। আর আমলযোগ্য নয় এমন অপরাধের ক্ষেত্রেও এটা করতে হবে। একই সঙ্গে তাঁকে সন্তুষ্ট হতে হবে যে গ্রেপ্তার না করলে লোকটি পালিয়ে যেতে পারেন। এ দুটি শর্ত পূরণ হলে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করা যাবে।
এ ছাড়া অনলাইনে বেইল বন্ড সাবমিট এবং ডিজিটাল সমনের ব্যবস্থা রাখার বিধানও রাখা হয়েছে সংশোধনীতে।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা মনে করি, এই আইন যদি সঠিকভাবে প্রতিপালন করা যায়, তাহলে ইচ্ছামতো মানুষকে গ্রেপ্তার করে হয়রানি, গ্রেপ্তার করে অস্বীকার করা, মানুষকে গুম করা, সেগুলো বন্ধের ক্ষেত্রে এটি যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।’