ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: জিয়া হলের প্রাধ্যক্ষের অপসারণ চায় বাম ছাত্রসংগঠনগুলো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেনের পদত্যাগের দাবিতে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর সমাবেশছবি: আসিফ হাওলাদার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেনকে ‘দলকানা প্রাধ্যক্ষ’ বলে আখ্যা দিয়ে তাঁর পদত্যাগ দাবি করেছে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো। ওই ছাত্রকে ‘হেনস্তাকারী’ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বিচারও দাবি করেছে তারা। ‘রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড ও জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার’ অভিযোগে এক ছাত্রকে পুলিশে দিয়েছিলেন প্রাধ্যক্ষ বিল্লাল হোসেন।

আজ রোববার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এক সমাবেশে ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতারা এসব দাবি জানান। জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ, ছাত্র নির্যাতনে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার ও গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস নিশ্চিতের দাবিতে ‘প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনসমূহ’–এর ব্যানারে বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা-কর্মীরা এ সমাবেশের আয়োজন করেন।

সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি শিমুল কুম্ভকার বলেন, ‘দেশ ভয়াবহ ফ্যাসিবাদে ডুবে আছে। এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে যে একটা দলের বাইরে কেউ কোনো কথা বলতে পারবে না, করলেই সে জামায়াত-শিবির ও বিএনপি। বিভিন্ন বাহিনীর দ্বারা গুম-খুন-হত্যাকাণ্ড করা হচ্ছে। সরকারের পোষা সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয়ের হল নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা ছাত্রদের নিষ্পেষণ করছে। ছাত্রলীগের তৈরি করা সন্ত্রাসী কাঠামোর মধ্য দিয়ে গিয়ে ছাত্ররা সন্ত্রাসী হয়ে ওঠে। এ ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় আমরা কখনো চাই না।’

শিমুল আরও বলেন, হল প্রাধ্যক্ষ যেখানে অভিভাবক হওয়ার কথা, সেখানে জিয়া হলের প্রাধ্যক্ষ তাঁর ছাত্রকে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড ও জঙ্গিবাদে সংশ্লিষ্টতার কথা বলে পুলিশে সোপর্দ করলেন। কিন্তু পরে পুলিশ বলল, ওই অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাহলে প্রাধ্যক্ষ কিসের ভিত্তিতে এটা করলেন? দলকানা ও ছ্যাঁচড়া এই প্রাধ্যক্ষকে অপসারণ করতে হবে। মেফতাহুল মারুফকে হেনস্তা করা ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বিচার করতে হবে।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (বাসদ) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রাজীব কান্তি রায় বলেন, জিয়া হলের ঘটনাই প্রথম ঘটনা নয়, অন্যান্য হলেও এমন ঘটনা নিয়মিতই ঘটছে। কিছু প্রকাশিত হচ্ছে, বেশির ভাগই আড়ালে থেকে যাচ্ছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা না থাকায় তাঁদের বাধ্য হয়ে কথিত অবৈধ ছাত্র হিসেবে গণরুমে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। গণরুম বিলুপ্ত করে তাঁদের আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। হলগুলোয় খাবারের দাম বেড়েছে। যে টাকা দিয়ে আগে শিক্ষার্থীরা এক মাস চলতে পারতেন, এখন সেই টাকা দিয়ে ১৫ দিনও চলতে পারছেন না। এত সমস্যা নিয়ে যে বেঁচে আছেন, সেটাই অনেক বেশি।

রাজীব কান্তি রায় আরও বলেন, ‘গণতান্ত্রিক বোধসম্পন্ন মেফতাহুল মারুফ ন্যায্য কথা বলেছে। কিন্তু ক্ষমতাসীনেরা তা গ্রহণ করতে পারেনি। তারা ক্ষমতা হারানোর ভয় পায়, সামান্য কথায় কেঁপে ওঠে। মেফতাহুলের স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকারের বিরুদ্ধে যারা ব্যবস্থা নিয়েছে, তারা অন্যায় করেছে। হল প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব কোনো অভিযোগ এলে প্রথমত প্রশাসনিক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া। তা না করে জিয়া হলের প্রাধ্যক্ষ সোজা থানায় পাঠিয়ে দিলেন মেফতাহুলকে। তারা নাকি আমাদের অভিভাবক-গুরুজন! এমন বিশ্ববিদ্যালয় আমরা চাই না। আমরা চাই শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ।’

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আরাফাত সাদের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে ছাত্র ফেডারেশনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অর্থ সম্পাদক আরমানুল হক ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য জাবির আহমেদ বক্তব্য দেন।

গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে মেফতাহুল মারুফ নামের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ওই ছাত্রকে পুলিশে সোপর্দ করে হল কর্তৃপক্ষ। মামলার ‘পর্যাপ্ত উপাদান’ না পেয়ে গত শুক্রবার দুপুরে তাঁকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। মেফতাহুলকে মুক্ত করে শাহবাগ থানা থেকে টিএসসিতে যাওয়ার পথে সেদিন দুপুরে হামলার শিকার হন ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা সালেহউদ্দিন সিফাত ও আহনাফ সাইয়্যেদ খান। পরিষদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এ হামলার সঙ্গে জড়িত। তবে পুরো ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন।

মেফতাহুল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি মেসেঞ্জার গ্রুপে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে একযোগে সিরিজ বোমা হামলা ও ছাত্রলীগের কর্মসূচির কারণে দুর্ভোগ নিয়ে আলোচনার পর প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে তাঁকে পুলিশে দেন হল প্রাধ্যক্ষ মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন। তিনি দাবি করেছিলেন, মেফতাহুলের বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড ও জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার’ প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে মেফতাহুলকে পুলিশে সোপর্দ করেন প্রাধ্যক্ষ। পদত্যাগের দাবি ওঠার পর ইতিমধ্যে প্রাধ্যক্ষ দাবি করেছেন, তিনি সঠিক কাজই করেছেন।