ধর্ষণের ‘বিচার’ সালিসে, সাজা হচ্ছে জরিমানা, চড়থাপ্পড়

অলংকরণ: আরাফাত করিম

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে প্রতিবেশী এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। পরে সালিস বসে। অভিযুক্ত ব্যক্তির কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ‘জরিমানা’ আদায় করা হয়। সেই টাকা ভুক্তভোগী শিশুর বাবার হাতে তুলে দেওয়া হয়। এতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি ওই বাবা। বিচারের আশায় সপ্তাহ দুয়েক এর-ওর কাছে ধরনা দেন। পরে গত ২৬ নভেম্বর থানায় গিয়ে মামলা করেন তিনি।

গত সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) মুঠোফোনে কথা হয় ভুক্তভোগী শিশুটির বাবার সঙ্গে। তিনি জানান, ধর্ষণের ঘটনা ঘটে গত ১০ নভেম্বর। ওই দিন তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বাড়িতে মেয়ে একাই ছিল। এ সুযোগে প্রতিবেশী অপু সরকার (৩২) বাড়িতে ঢুকে তাঁর মেয়েকে ধর্ষণ করেন। পরে এ নিয়ে সালিস হয়।

সালিসের আরেকটি ঘটনার কথা জানা যায় ঢাকার ধামরাইয়ে। গত ৭ ডিসেম্বর সেখানকার এক পোশাকশ্রমিক দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। এ ঘটনা সালিসের মাধ্যমে নিষ্পত্তির চেষ্টা হয়। যদিও পরে মামলা হয়েছে।

মুফতি নন, এমন কেউ কোনো সালিসে ফতোয়া দিতে পারবেন না। আর ফতোয়া নিয়ে উচ্চ আদালতের রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ফতোয়ার মাধ্যমে দোররা মারা, বেত্রাঘাত ইত্যাদি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না।
মুফতি মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান মুফতি

এ বিষয়ে ধামরাই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নির্মল কুমার প্রথম আলোকে বলেন, ‘তদন্তের সময় শুনেছি, সালিস হয়েছিল। কিন্তু আমাদের কাছে কেউ স্বীকার করেনি। মামলার দুই আসামির মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

শুধু এ দুটি ঘটনা নয়, দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধর্ষণের অভিযোগে সালিসে মীমাংসা করার ঘটনা ঘটছে। বেসরকারি সংস্থা মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) তথ্যানুসারে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত আইন ও বিচারবহির্ভূত সালিসে শাস্তি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩টি সালিস হয়েছে ধর্ষণের ঘটনায়।

এ ছাড়া ধর্ষণচেষ্টার ঘটনার ১১টি এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে ভুক্তভোগীর বিয়ে দেওয়ার একটি সালিসের কথা জানা গেছে। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত খবর সংকলিত করে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে এমএসএফ।

এ বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত আইন ও বিচারবহির্ভূত সালিসে শাস্তি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩টি সালিস হয়েছে ধর্ষণের ঘটনায়। এ ছাড়া ধর্ষণচেষ্টার ঘটনার ১১টি এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে ভুক্তভোগীর বিয়ে দেওয়ার একটি সালিসের কথা জানা গেছে।

সালিসে বেআইনি সাজা

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু সালিসে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নামমাত্র সাজা দেওয়া হচ্ছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জরিমানা করা, চড়থাপ্পড় দেওয়া কিংবা জুতাপেটা করা হচ্ছে। সালিসকারীরা এ জন্য ‘কমিশন’ বা আর্থিক সুবিধা নেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

কোটালীপাড়ায় ধর্ষণের শিকার শিশুটির বাবা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সালিসে বিচারের নামে সময়ক্ষেপণ করায় আসামি ১০ হাজার টাকা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে।’

তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, ধর্ষণের ঘটনা জানার পরপরই মামলা করেননি কেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের গ্রামে কোনো ঘটনা ঘটলে আগে মাতবরদের জানানোর নিয়ম চালু আছে।’

ধর্ষণ হচ্ছে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধ। এটা এতটাই গুরুতর অপরাধ যে রাষ্ট্র বাদী হয়ে মামলা করতে পারে এবং শাস্তি হতে হবে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে। এ ধরনের অপরাধ মীমাংসা করা বা শাস্তি দেওয়ার এখতিয়ার সালিসকারীদের নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সালিসে ধর্ষণের বিচারের রায় নারীর বিপক্ষে যায়।
সুলতানা কামাল, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী

এ বিষয়ে কোটালীপাড়া থানার আওতাধীন ভাঙারহাট পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, ওই গ্রাম বেশ প্রত্যন্ত। শহর থেকে বেশ দূরে, বিলের মধ্যে। অনেক সময় অপরাধ সংঘটিত হলে গ্রামের লোকেরা পুলিশ ও প্রশাসনের সহায়তা না নিয়ে নিজেরাই সমাধানের চেষ্টা করেন। ধর্ষণের এ ঘটনায় যাঁদের নাম সালিসকারী হিসেবে এসেছে, তাঁদের কেউই সালিসের কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেননি।

গত ৫ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় এক প্রতিবন্ধী মেয়েকে (৮) ধর্ষণের অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয় সালিসে। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও চড়থাপ্পড় দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। ভুক্তভোগী শিশুটির বাবা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সমাজে চলতে হবে। সালিসের রায় মেনে নিয়েছি।’ এ নিয়ে আর কথা বলতে রাজি হননি তিনি।

এ ঘটনায় সালিস করেছিলেন ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য আলমাছ উদ্দিন সরকার। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ধর্ষণের অভিযোগ ছিল ভুয়া। থানায় অভিযোগ করতে গেলে ফেরত পাঠানো হয়। এরপরই সালিস বসে।’

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু সালিসে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নামমাত্র সাজা দেওয়া হচ্ছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জরিমানা করা, চড়থাপ্পড় দেওয়া কিংবা জুতাপেটা করা হচ্ছে। সালিসকারীরা এ জন্য ‘কমিশন’ বা আর্থিক সুবিধা নেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

ঘটনা ‘ভুয়া’ হলে বিচার করলেন কেন, এমন প্রশ্নে আলমাছ উদ্দিন সরকার বলেন, ‘মেয়েটির পরিবার খুব চাপ দেওয়া শুরু করেছিল। তাই সালিসের মাধ্যমে ছেলেটিকে ১০ হাজার টাকা দিতে বাধ্য করা হয়েছে।’

অন্যদিকে ধামরাইয়ে পোশাকশ্রমিক ধর্ষণের ঘটনায় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বোরহান উদ্দিন সালিস করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বোরহান উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ধর্ষণের শিকার মেয়েটি তার বাড়িওয়ালা মাইনুল ও আরেক ভাড়াটে হেলালের বিরুদ্ধে ধর্ষণের কথা আমাকে জানিয়েছিল। আমি তখন ভুক্তভোগী মেয়েটিকে থানায় যেতে বলি। সালিস বা টাকা নিয়ে সমঝোতার কোনো ঘটনা ঘটেনি।’

ঢোল পিটিয়ে ‘সমাজচ্যুত’

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে দুটি ছেলে-মেয়ে তাঁদের বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। মেয়েটি অপ্রাপ্তবয়স্ক। মেয়ের মা ছেলেটির বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা করেন। এ মামলা করার ক্ষেত্রে গ্রামের দুই নারী মেয়েটির মাকে সহায়তা করেন।

অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়া ছেলেটির মামা গোলাম মোস্তফা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। গত জুলাই মাসে তিনি সালিস ডেকে তাঁর ভাগনের সঙ্গে মেয়েটির বিয়ের উদ্যোগ নেন। ওই সময় মেয়ের মাকে মামলা করতে পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়া দুই নারীর বিরুদ্ধে ‘অবৈধ ব্যবসা’ করার অভিযোগ তোলা হয়। সালিসে তাঁদের ২০ হাজার টাকা করে ‘জরিমানা’ করা হয়।

এখানেই শেষ নয়, পুরো গ্রামে ঢোল পিটিয়ে ওই দুই নারীকে ‘সমাজচ্যুত’ করার ঘোষণা দেওয়া হয়। বলা হয়, ওই দুই নারীর সঙ্গে গ্রামের কেউ কথা বলতে পারবেন না, মিশতে পারবেন না। এমনকি ওই দুই নারীর সঙ্গে গ্রামের কেউ এক যানবাহনে উঠতে পারবেন না। পরে ‘দণ্ডপ্রাপ্ত’ এক নারী জরিমানার অর্ধেক পরিশোধ করে ‘সমাজচ্যুত’ হওয়া থেকে রক্ষা পান।

‘সমাজচ্যুত’ অপর নারীর সঙ্গে ২০ ডিসেম্বর কথা হয়। তিনি বলেন, ‘জরিমানার টাকা দিতে না পারায় সমাজচ্যুত ছিলাম। পরে মানবাধিকারকর্মীরা ঘটনা জেনে এলাকায় এলে সমাজচ্যুত করার আদেশ তুলে নেওয়া হয়।’ ভুক্তভোগী ওই নারী আরও বলেন, ‘গ্রামে প্রায়ই সালিসে এমন জরিমানা করা হয়। জরিমানার টাকা দিয়ে উন্নয়ন করবে বলে, কিন্তু কোনো উন্নয়ন হতে দেখি না।’

সালিসকারী ইউপি সদস্য গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে কাছে ভুল স্বীকার করেন। তিনি বলেন, তিনি ভুল করেছিলেন। এভাবে কাউকে আর সমাজচ্যুত করবেন না। ওই নারীর জরিমানার টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।

সালিসের পর আত্মহত্যা

ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টা ছাড়াও অন্যান্য অভিযোগে সালিসের ঘটনা ঘটেছে। এমএসএফের তথ্যানুসারে, গত ১১ মাসে ৫টি বিবাহবর্হিভূত সম্পর্কের ঘটনায় হিল্লা বিয়ের সিদ্ধান্ত না মানায় একঘরে করার ১টি ঘটনা, চরিত্রহীন অপবাদ দেওয়ার ২টি ঘটনা, প্রেমের ১টি ঘটনা, যৌন হয়রানির ২টি ঘটনা, চুরির ২টি ঘটনা, সামাজিক প্রথা না মানায় একঘরে করার ২টি ঘটনা, পারিবারিক বিরোধের ২টি ঘটনা, হত্যার ২টি মোট ১৯টি ঘটনায় সালিস হয়েছে। এর মধ্যে সালিসের পর দুজন আত্মহত্যা করেন।

দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলায় এক গৃহবধূর সঙ্গে স্থানীয় এক ব্যক্তির প্রেমের সম্পর্কের অভিযোগ তুলে গত ২০ আগস্ট সালিস করা হয়। সালিসে ওই ব্যক্তিকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানার টাকা তুলে দেওয়া হয় গৃহবধূর ভাশুরের হাতে। সালিস থেকে কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে ফিরে ওই গৃহবধূ টাকা ফেরত চাইলে ভাশুর দিতে অস্বীকৃতি জানান।

ওই দিন মধ্যরাতে গৃহবধূ কীটনাশক ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ওই গৃহবধূর মা।

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চিরিরবন্দর থানার এসআই শাহ আলম প্রথম আলোকে বলেন, সালিসে একদিকে গৃহবধূর চরিত্র নিয়ে কথা হয়, অন্যদিকে জরিমানার নামে যে অর্থ আদায় করা হয়, সেটিও গৃহবধূকে দেওয়া হয়নি। অপমানে-ক্ষোভে গৃহবধূ আত্মহত্যা করেন। মামলার প্রাথমিক তদন্তে সালিস করা ব্যক্তি, ভাশুরসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।

একই ধরনের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ তুলে এ বছরের এপ্রিলে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার এক গৃহবধূকে ঝাড়ু দিয়ে ‘প্রতীকী বেত্রাঘাত’ করা হয়। ওই ঘটনায় পর চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

ফতোয়াকে অবৈধ ঘোষণা করে ২০০১ সালের জানুয়ারি মাসে উচ্চ আদালত রায় দেন। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হলে ২০১৫ সালে বিচারবহির্ভূত ফতোয়াকে অবৈধ ঘোষণা বহাল রেখে বলা হয়, ধর্মীয় আইনবিশেষজ্ঞ বা ফিকাহশাস্ত্রে অগাধ জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি শুধু ফতোয়া দিতে পারবেন।

আরও পড়ুন

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান মুফতি ও শরিয়াহ আইনবিশেষজ্ঞ মুফতি মোহাম্মদ আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, মুফতি নন, এমন কেউ কোনো সালিসে ফতোয়া দিতে পারবেন না। আর ফতোয়া নিয়ে উচ্চ আদালতের রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ফতোয়ার মাধ্যমে দোররা মারা, বেত্রাঘাত ইত্যাদি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। শাস্তির বিষয় এলে আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে। ধর্ষণ, হত্যার মতো ঘটনায় প্রচলিত আইনে বিচার হতে হবে। যেখানে–সেখানে গ্রাম্য সালিস ডেকে ফতোয়া দেওয়া রুখতে গণমাধ্যমের বেশি করে প্রচার চালানো উচিত।

‘ধর্ষণের বিচার করার এখতিয়ার সালিসের নেই’

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুলতানা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ধর্ষণ হচ্ছে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধ। এটা এতটাই গুরুতর অপরাধ যে রাষ্ট্র বাদী হয়ে মামলা করতে পারে এবং শাস্তি হতে হবে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে। এ ধরনের অপরাধ মীমাংসা করা বা শাস্তি দেওয়ার এখতিয়ার সালিসকারীদের নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সালিসে ধর্ষণের বিচারের রায় নারীর বিপক্ষে যায়।

আরও পড়ুন

পরিবারগুলো কেন সালিসের দ্বারস্থ হয়, জানতে চাইলে সুলতানা কামাল বলেন, ঘটনা ঘটার পর আইন সম্পর্কে সচেতনতা না থাকা এবং মেয়ের ‘সম্ভ্রমহানি’র ভয়ে অনেক পরিবার বুঝে উঠতে পারে না ধর্ষণ-পরবর্তী কী পদক্ষেপ নেবে তারা। তাদের এ সময়ের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে গ্রামের মাতবর শ্রেণি ও স্বার্থান্বেষী মহল বোঝাতে থাকে, আইনের দ্বারস্থ হলে অনেক ঝামেলা পোহাতে হবে। তারা সালিস করে একটা বিচার পাইয়ে দেবে। বিচার করিয়ে দেওয়ার নামে সালিসকারীরা দুই পক্ষ থেকে কমিশনও নেন।

সুলতানা কামালের মতে, বিচার চাওয়ার জন্য সহজে আইনের কাছে পৌঁছাতে না পারা ও দীর্ঘসূত্রতায় বিচারব্যবস্থার প্রতি অনাস্থার কারণেও আদালতের পরিবর্তে সালিসের দ্বারস্থ হন অনেকে। আইন ও বিচারবহির্ভূত সালিসের বিরুদ্ধে পর্যবেক্ষণব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।

আরও পড়ুন

তবে পারবারিক মনোমানিল্য বা স্থানীয় ছোটখাট বিষয়ে সালিস হতে পারে বলে মত দেন সুলতানা কামাল। তিনি বলেন, পারিবারিক সমস্যা সমাধানে সালিস করতে আদালতেরও অনুমোদন আছে। সালিশ যেন নারীবান্ধব হয়, সে ব্যবস্থা নিতে হবে নীতিনির্ধারকদের। নারীবান্ধব সালিসের মাধ্যমে নারী নির্যাতন রোধ করে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা অনেকখানি সম্ভব।

আরও পড়ুন