ছয় আরব দেশের সঙ্গে জ্বালানি ও খাদ্যনিরাপত্তায় সহযোগিতা বাড়বে

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও জিসিসির মহাসচিব নায়েফ ফালাহ এম আল-হাজরাফ সমঝোতা স্মারকে সই করেন
ছবি: সংগৃহীত

উপসাগরীয় দেশগুলোর সহযোগিতা সংস্থার (জিসিসি) সঙ্গে বাংলাদেশের অংশীদারত্ব সংলাপের বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এই সমঝোতা স্মারক সইয়ের মধ্য দিয়ে তেলসমৃদ্ধ ছয়টি আরব দেশের জোটের সঙ্গে জ্বালানি ও খাদ্যনিরাপত্তা, জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোসহ নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সহযোগিতার নতুন দুয়ার উন্মুক্ত হলো।

গতকাল শুক্রবার বাহরাইনের রাজধানী মানামায় অনুষ্ঠিত মানামা ডায়ালগ-২০২২ এর ফাঁকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও জিসিসির মহাসচিব নায়েফ ফালাহ এম আল-হাজরাফ সমঝোতা স্মারকে সই করেন।

রিয়াদভিত্তিক এই জোটের সদস্যরা হলো সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন ও ওমান। গত বছর বাংলাদেশ সরকার রিয়াদে অবস্থিত জিসিসি সচিবালয়ের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে, যা এই সমঝোতা স্মারক সইয়ের মধ্য দিয়ে একটি পরিকাঠামো পেল।

রিয়াদ থেকে বাংলাদেশ দূতাবাসের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সমঝোতা স্মারক সইয়ের আগে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জিসিসির মহাসচিব দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠক শেষে জিসিসি মহাসচিবকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে তিনি তা গ্রহণ করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, জিসিসির সঙ্গে বাংলাদেশের সমঝোতা সইয়ের মধ্য দিয়ে জ্বালানিনিরাপত্তা, খাদ্যনিরাপত্তার পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। এই সমঝোতা স্মারক সইয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-জিসিসি সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করার লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশাবাদ জানান তিনি।

সমঝোতা স্মারকটি সইয়ের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে জিসিসির মহাসচিব নায়েফ ফালাহ এম আল-হাজরাফ বলেন, সমঝোতা স্মারকটি দুই পক্ষের মধ্যে বিভিন্ন খাতে যৌথ কর্মপরিকল্পনা, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ এবং কারিগরি দল, যৌথ বাণিজ্য পরিষদ গঠনের সুযোগ তৈরি ও সহযোগিতাকে এগিয়ে নিতে আইনি কাঠামো হিসেবে কাজ করবে।

আব্দুল মোমেন বলেন, জিসিসিভুক্ত দেশগুলোতে কর্মরত প্রায় ৫০ লাখ বাংলাদেশি অভিবাসী জিসিসি ও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখছে। এসব দেশে আরও বেশি দক্ষ অভিবাসী কর্মী নিয়োগের আরও সুযোগ রয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রেমিট্যান্স বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান উৎস। তবে মানি লন্ডারিং বা অবৈধ পথে অর্থ প্রেরণ বাংলাদেশ ও জিসিসি দেশগুলোর অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। মানি লন্ডারিং ও অবৈধ পথে অর্থ প্রেরণ বন্ধ করার বিষয়ে জিসিসির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার আহ্বান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে জিসিসি দেশগুলো ও মধ্যপ্রাচ্য বিশ্বের অন্যতম জ্বালানি জোগানদাতা অঞ্চল এবং বিশ্বরাজনীতিতে বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা সবার জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জিসিসিভুক্ত দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি জ্বালানিনিরাপত্তা কাঠামো তৈরির বিষয়ে মহাসচিবের সঙ্গে আলোচনা করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘খাদ্যনিরাপত্তা সব দেশের জন্য একটি অভিন্ন অগ্রাধিকার। বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষিভিত্তিক এবং আমরা খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি।’ বাংলাদেশ জিসিসি সদস্যদেশ ও বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করতে ইচ্ছুক বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তৈরি পোশাক, পাট, চামড়াজাত পণ্য, চা ও ওষুধ রপ্তানি করে থাকে। চাল, সবজি ও মিঠাপানির মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয়। বর্তমানে বাংলাদেশ জিসিসি দেশগুলোতে অনেক পণ্য রপ্তানি করছে। জিসিসির বাজারে বাংলাদেশের মানসম্পন্ন পণ্যের রপ্তানি আরও বৃদ্ধি করার সুযোগ রয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। জিসিসির সঙ্গে বাংলাদেশের একটি অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি করার কথা বিবেচনা করার অনুরোধ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

বাংলাদেশ প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য রাজনৈতিক ও মানবিক সহায়তার জন্য বাংলাদেশ জিসিসি সদস্যদেশগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশ এই সমস্যার কারণ এবং মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনে জিসিসির সহযোগিতা চায়।

এ সমঝোতা স্মারক সইয়ের সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস, বাহরাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নজরুল ইসলাম ও অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।