প্রধানমন্ত্রীর ছবিসংবলিত ব্যানার ছিঁড়েছে, বাম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা

সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে এই ব্যানার টাঙানো হয়েছে মেট্রোরেল স্টেশন উদ্বোধন উপলক্ষে। ব্যানারটি ছেঁড়ার ঘটনায় ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়েছে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরাছবি: প্রথম আলো

মেট্রোরেলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন উদ্বোধন সামনে রেখে ক্যাম্পাসের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তাঁর ছবি ও মেট্রোরেলের ছবিসংবলিত ব্যানার স্থাপন করেছে ছাত্রলীগ। কতিপয় যুবক এই ব্যানারের কয়েক জায়গা ছিঁড়েছেন। এর জন্য বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের দায়ী করে তাঁদের মারধর করেছেন ছাত্রলীগ নেতা–কর্মীরা। বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর দাবি, ভাঙচুরের সঙ্গে তারা জড়িত নয়।

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে এ ঘটনা ঘটে। বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের উদ্যোগে আজ সেখানে মশালমিছিল ও সমাবেশ ছিল।
ঘটনার বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী প্রথম আলোকে বলেন, গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের মশালমিছিল টিএসসি থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ও শাহবাগ ঘুরে টিএসসিতে ফিরে আসে। রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শেষ হওয়ার কথা ছিল। মিছিল রাজু ভাস্কর্যের কাছে এলে বাম সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের একটি অংশ উত্তেজিত হয়ে ছাত্রলীগের স্থাপিত প্রধানমন্ত্রীর ছবিসংবলিত ডিজিটাল ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে। একপর্যায়ে টিএসসিতে অবস্থান করা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে তাঁদের পেটাতে শুরু করেন।

আগামীকাল বুধবার টিএসসি এলাকায় মেট্রোরেলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। আজ রাত আটটার দিকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে গিয়ে দেখা যায়, ছবিসংবলিত ব্যানারের বিভিন্ন অংশ ছেঁড়া হয়েছে। ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী সেখানে অবস্থান করছেন। এদিকে ভাঙচুরের প্রতিবাদে রাত পৌনে নয়টা থেকে টিএসসি এলাকায় বিক্ষোভ করছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

জোটের কর্মসূচিতে থাকা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় সভাপতি সালমান সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজুর সন্ত্রাসবিরোধী চেতনাকে ঢেকে দেওয়ার জন্য রাজু ভাস্কর্যের সামনে প্রধানমন্ত্রীর ছবি রাখা হয়েছে। তাই আমরা রাজু ভাস্কর্যের উল্টা পাশে মিলন চত্বরে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিই। কিছু অজ্ঞাতপরিচয় ছেলে রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে ছবি ভাঙচুর করে। ছাত্রলীগ মনে করেছে যে এটা আমাদের মিছিল থেকে হয়েছে। তাই তারা আমাদের ওপর হামলা করে। আমাদের সঙ্গে থাকা মশালমিছিলের লাঠি ও তাদের সঙ্গে থাকা লাঠি ও কাঠের টুকরা দিয়ে আমাদের নেতা-কর্মীদের পেটানো হয়। হামলায় আমাদের ৮-১০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।’

গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কেউ প্রধানমন্ত্রীর ছবিসংবলিত ব্যানার ছিঁড়েননি বলে দাবি করেন সালমান সিদ্দিকী। এই হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্রলীগ হামলা করল। এ ঘটনা প্রমাণ করে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক চেতনা ছাত্রলীগ ধারণ করে না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবেগ-অনুভূতি হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ছবি ও মেট্রোরেলের ছবিসংবলিত প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন ভাঙচুর করা হয়েছে। বাম ছাত্রসংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন ও তাদের সহযোগীরা সেখানে আগুন জ্বালানোরও চেষ্টা করেছে। এ ধরনের কার্যকলাপে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়েছে। যারা কাজটি করেছে, তাদের দ্রুত ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত।’