হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি পেল রাষ্ট্রপক্ষ

হাইকোর্টফাইল ছবি

মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়সসীমা নির্ধারণ করে জারি করা পৃথক গেজেট-পরিপত্র অবৈধ ঘোষণার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার অনুমতি পেয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) মঞ্জুর করেছেন আপিল বিভাগ।

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ আজ রোববার এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে হাইকোর্টের রায়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বলা হয়েছে।

পৃথক পরিপত্র ও গেজেটের মাধ্যমে ১৩ বছর এবং পরে সাড়ে ১২ বছর মুক্তিযোদ্ধাদের নূন্যতম বয়সসীমা নির্ধারণকে কেন্দ্র করে সম্মানী ভাতা নিয়ে জটিলতায় মুক্তিযোদ্ধাদের করা পৃথক ১৫টি রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৯ সালের ১৯ মে হাইকোর্ট ওই রায় দেন। এ–সংক্রান্ত রায়ের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল পৃথক লিভ টু আপিল করে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন; সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অবন্তী নূরুল ও এম সাইফুল আলম। রিট আবেদনকারী মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন ও আইনজীবী ওমর সাদাত।

রিট আবেদনকারী পক্ষ জানায়, ২০১৪ সালের জুনে এক সার্কুলারে মুক্তিযোদ্ধার ন্যূনতম বসয়সীমা ১৩ বছর নির্ধারণ করা হয়। এরপর ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর ‘মুক্তিযোদ্ধা এর সংজ্ঞা ও বয়স নির্ধারণ’ করে গেজেট করা হয়। এতে বলা হয়, ‘মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নতুন করে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তারিখে ন্যূনতম ১৩ বছর হতে হবে।’ ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি এটি সংশোধন করে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়স হতে হবে ১২ বছর ৬ মাস। এসবের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে মুক্তিযোদ্ধারা হাইকোর্টে পৃথক রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট বিভিন্ন সময়ে রুল দেন। রুলের ওপর একসঙ্গে শুনানি শেষে ২০১৯ সালের ১৯ মে হাইকোর্ট ওই রায় দেন। রায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স নির্ধারণে সরকারকে সীমিত ক্ষমতা দেওয়া–সংক্রান্ত ২০১৮ সালের বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট আইনের ২(১১) বিধানে অংশবিশেষ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হয়। রিট আবেদনকারীদের বন্ধ করা সম্মানী ভাতাদি চালু করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়।

মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়সসীমা নির্ধারণ করে সরকারের জারি করা পৃথক গেজেট-পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট ওই রায় দিয়েছিলেন বলে জানান রিট আবেদনকারীদের অন্যতম আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন। আপিল বিভাগের আদেশের পর তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ওই রায়ের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের করা লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেছেন আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের রায়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন। ফলে হাইকোর্টের রায়ের পর রিট আবেদনকারী মুক্তিযোদ্ধা যাঁরা সম্মানী ভাতা পাচ্ছেন, তাঁদের ভাতা তুলতে বাধা নেই। তবে রিট আবেদনকারী যাঁরা ভাতা পাচ্ছেন না, তাঁরা ভাতা পাবেন না।