মুক্তচিন্তাকে ভয় পাইয়ে দিতে প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের ওপর হামলা: শিরীন পারভীন হক
দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে হামলা করা হয়েছে। এর দায় সরকার এড়াতে পারে না। গণমাধ্যমের ওপর এই আক্রমণের মানে হচ্ছে সবার ওপর আক্রমণ। সম্মিলিতভাবে এই শক্তিকে রুখে দিতে হবে।
আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে পুড়ে যাওয়া প্রথম আলোর কার্যালয় পরিদর্শনের সময় এ কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত সাবেক নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক, সাবেক শ্রমবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন। তাঁরা বলেন, এ ধরনের আঘাতের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদ করতে হবে। ঘটনার এক দিন পরই প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার আবারও সংবাদ প্রকাশ করে ঘুরে দাঁড়ানোয় তাঁরা আশাবাদী হয়েছেন বলে মন্তব্য করেন।
হামলার শিকার প্রথম আলোর কার্যালয় পরিদর্শনের সময় তাঁদের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য সুমাইয়া ইসলাম, শ্রমবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য এ কে এম নাসিম। তাঁদের কাছে হামলার ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ, হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন ও বাণিজ্য বিভাগের সম্পাদক সুজয় মহাজন।
শিরীন পারভীন হক বলেন, ‘ওই রাতে হামলার ঘটনা দেখে আমার বুক ভেঙে গেছে। প্রথম আলো বা ডেইলি স্টার শুধু নয়, যেকোনো গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ করার অর্থ হচ্ছে আমাদের সবার ওপর আক্রমণ। বিবেকের ওপর আক্রমণ। আমাদের মুক্তচিন্তার যে জায়গাটুকু রয়েছে, সেটাকে সংকীর্ণ করে দেওয়া। ভয় পাইয়ে দেওয়া। তবে হামলার ঘটনার এক দিন পর পত্রিকা দুটি আবারও প্রকাশ পেয়েছে। টেবিলে পত্রিকা দুটো দেখে আবার সাহস পেয়েছি। এভাবেই ঘুরে দাঁড়াতে হবে। আমি খুব আশাবাদী হয়েছি।’
এ সময় সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রথম আলো, ডেইলি স্টার বা যেকোনো সংবাদমাধ্যমের ওপর আক্রমণের মানে হচ্ছে সমাজকে, বিবেককে পঙ্গু করে দেওয়ার ব্যাপার। এটা পরিকল্পিত আক্রমণ। এটা বিচ্ছিন্ন বা মব বা উন্মত্ত গোষ্ঠীর বলে মনে করেন না। দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই আক্রমণ।
সুস্থ সংস্কৃতি এবং মানুষের সুখ-দুঃখ ও বেদনার কথা বারবার তুলে ধরে প্রথম আলো যেভাবে নাড়া দেয়, সেটাকে স্তব্ধ করে দিতে এ হামলা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, এ হামলার শিকড় অনেক গভীরে। এই শিকড় উৎপাটন করতে হলে শুধু একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে আন্দোলিত হলে হবে না, নাগরিক সমাজ ও সামাজিক ব্যবস্থাকে একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।
একটি সংগঠিত শক্তি বারবার আমাদের বিবেক ও সংস্কৃতিকে আঘাত করছে উল্লেখ করে সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে আঘাত করেছে। এর বিরুদ্ধে যার যার জায়গা থেকে প্রতিবাদ করা দরকার। আবার সম্মিলিতভাবেও প্রতিবাদ করা দরকার।’ তিনি বলেন, ‘প্রথম আলো আমার কাছে শুধু একটি পত্রিকা নয়, এটি আমাদের সংগ্রামের পথে চলার, সমাজ বিনির্মাণের অংশ। এর ওপর আঘাত এসেছে, সবাইকে সম্মিলিতভাবে তা রুখতে হবে।’
প্রথম আলো, ডেইলি স্টার এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনের ওপর আক্রমণ শুধু তাদের ওপর আক্রমণ নয়, গোটা জনগোষ্ঠীর মননের ওপর আক্রমণ বলে মন্তব্য করেন বাসদ নেতা রাজেকুজ্জামান রতন। তিনি বলেন, এটাকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। রাষ্ট্র এর দায় এড়াতে পারে না। রাষ্ট্রের ক্ষমতায় যখন যিনি থাকেন, তাঁর দায়িত্ব রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গকে সুচারুভাবে পরিচালনা করা এবং সুরক্ষা দেওয়া।
এই হামলা বহুদিন পর্যন্ত ভাবাবে উল্লেখ করে রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, এই আঘাতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি, সংবাদমাধ্যমের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মত প্রচারের পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, ‘প্রথম আলোকে ধন্যবাদ, তারা নুইয়ে পড়েনি। ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। ধ্বংসস্তূপ থেকে নতুন করে প্রথম আলো উঠে দাঁড়াবে।’