চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাসের কাজ বন্ধের নির্দেশ

ছবি: আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মাত্রার সতর্কতা ‘অ্যালার্ট-৩’ জারি করা হয়েছে। এই সতর্কতা অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানো-নামানো ও খালাসের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বন্দরে কার্যক্রমে যুক্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আজ শনিবার এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘রিমালের’ প্রভাবে আবহাওয়া অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বন্দরকে ৬ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলার পর এই সতর্কতা জারি করল বন্দর কর্তৃপক্ষ। অ্যালার্ট-৩ অনুযায়ী জেটিতে অবস্থানরত জাহাজগুলোকে সাগরে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা। তবে তা এখনই কার্যকর করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক আজ রাতে প্রথম আলোকে জানান, জোয়ারের সময় বন্দর জেটিতে জাহাজ আনা-নেওয়া করা হয়। এ জন্য রোববার সকাল ১০টায় জোয়ারের সময় জেটিতে থাকা সব জাহাজ সাগরে পাঠানো হবে।

ওমর ফারুক আরও বলেন, দ্বিতীয় মাত্রার সর্বোচ্চ সতর্কতা অনুযায়ী বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানো-নামানো ও খালাসের কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে যেসব কাজ অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় রয়েছে, সেগুলো দ্রুত শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ নতুন করে পণ্য খালাস বা ওঠানো-নামানোর কাজ হবে না।

ঘূর্ণিঝড়ের সময় জেটি থেকে কেন জাহাজ সাগরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, তা জানতে চাইলে ওমর ফারুক বলেন, বড় জাহাজগুলো জেটিতে থাকলে ঢেউয়ের কারণে জেটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে সাগরে জাহাজগুলো ইঞ্জিন চালু রেখে ঢেউ বা ঝড়ের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করে ভাসতে পারে। এ জন্য সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়াতে বড় জাহাজগুলো সাগরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বন্দর কর্মকর্তারা জানান, দুর্যোগ মোকাবিলায় কখন কী করতে হবে, তা ঠিক করতে বন্দরের নিজস্ব প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এই সতর্কতা জারি করেছে কর্তৃপক্ষ। ১৯৯২ সালে বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রণীত ‘ঘূর্ণিঝড়-দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী পুনর্বাসন পরিকল্পনা’ অনুযায়ী, আবহাওয়া অধিদপ্তরের সংকেত অনুযায়ী চার ধরনের সতর্কতা জারি করে বন্দর।

আরও পড়ুন

এই নীতিমালা অনুযায়ী, আবহাওয়া অধিদপ্তর ৩ নম্বর সংকেত জারি করলে বন্দর প্রথম পর্যায়ের সতর্কতা বা অ্যালার্ট-১ জারি করে। আবহাওয়া অধিদপ্তর ৪ নম্বর সংকেত জারি করলে বন্দর অ্যালার্ট-২ জারি করে। বিপৎসংকেত ৫, ৬ ও ৭ নম্বরের জন্য বন্দরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সতর্কতা অ্যালার্ট-৩ জারি করা হয়। মহাবিপৎসংকেত ৮, ৯ ও ১০ হলে বন্দরেও সর্বোচ্চ সতর্কতা বা অ্যালার্ট-৪ জারি করা হয়। সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি হলে বন্দর জেটিতে অবস্থানরত জাহাজগুলোকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

সতর্কতা অনুযায়ী, ছোট নৌযানগুলো নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া বন্দরের পণ্য ও কনটেইনার ওঠানো-নামানোয় যুক্ত ক্রেনগুলো সুরক্ষিত করার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। আজ শনিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবির প্রথম আলোকে, গভীর নিম্নচাপটি সন্ধ্যা ছয়টার দিকেই ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’-এ পরিণত হয়েছে। এ কারণে পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারকে ৬ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

তরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি সন্ধ্যা ছয়টায় পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৬৫ কিলোমিটার, মোংলা থেকে ৪০৫ কিলোমিটার, কক্সবাজার থেকে ৪০০ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৫৫ কিলোমিটার দূরে ছিল।

আরও পড়ুন