সকালে সবাই, বিকেলে অর্ধেক

৩২ নম্বর ওয়ার্ডের মশকনিধনকর্মী ১৫ জন। গতকাল সকালে কাজ করেন সবাই। বিকেলে কাজ করেন ৮ জন।

উড়ন্ত মশা মারতে ধোঁয়া দিচ্ছেন মশকনিধনের কর্মী। গতকাল বিকেলে মোহাম্মদপুরের হুমায়ুন সড়কে
ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে মশকনিধনকর্মী আছেন ১৫ জন। গতকাল মঙ্গলবার সকালের পালার কাজে তাঁদের সবাই ছিলেন। তবে বিকেলের পালার কাজে তাঁদের মধ্যে ৭ জন ছিলেন না। উত্তর সিটিতে সকাল ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করতে প্রতিটি ওয়ার্ডে ওষুধ ছিটানোর কথা। আর বিকেল চারটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত (সূর্যাস্তের আগে এক ঘণ্টা, পরে এক ঘণ্টা) উড়ন্ত মশা মারতে ওষুধ ছিটানো বা ফগিং করার কথা।

ঢাকা উত্তর সিটির ওয়েবসাইটে দেওয়া তালিকা অনুযায়ী, গতকাল সকাল আটটায় ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদপুর এলাকার ইকবাল সড়কে মশকনিধনকর্মীদের ওষুধ ছিটানোর কথা ছিল। কিন্তু আধা ঘণ্টা অপেক্ষার পরও কোনো কর্মীকে দেখা যায়নি। পরে মোটরসাইকেলে করে ঘুরতে ঘুরতে পৌনে নয়টার দিকে রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এলাকায় পাওয়া গেল দুই কর্মীকে।

বাকি কর্মীরা কোথায়, তা জানতে এই প্রতিবেদক মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন এই ওয়ার্ডে নিয়োজিত মশকনিধনের কাজে নিয়োজিত সিটি করপোরেশনের সুপারভাইজার রাকিবুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, অন্য কর্মীরা মোহাম্মদপুরের হ‌ুমায়ুন সড়ক, স্যার সৈয়দ সড়ক, ইকবাল সড়ক এবং আসাদ অ্যাভিনিউ এলাকায় ওষুধ ছিটাচ্ছেন। তাঁর কথা শুনে এই প্রতিবেদক আবার যান হ‌ুমায়ুন সড়কে। সেখানে গিয়ে তিনজন কর্মীকে মশার ওষুধ ছিটাতে দেখা যায়। অন্য ১০ জনের মধ্যে স্যার সৈয়দ সড়কে ৩ জন, ইকবাল সড়ক এলাকায় ৫ জন এবং আসাদ অ্যাভিনিউ সড়ক এলাকায় দুজন কর্মীকে ওষুধ দিতে দেখা যায়। কর্মীরা দুপুর ১২টার দিকে ওষুধ ছিটানো শেষ করেন।

মশকনিধনকর্মীরা দেরিতে কাজ শুরু করেন কেন, তা জানতে চাইলে রাকিবুল ইসলাম জানান, সাড়ে সাতটা থেকে আটটার মধ্যে কর্মীরা লালমাটিয়া হাউজিং সোসাইটি মাঠসংলগ্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে আসেন। ওষুধ ও ছিটানোর যন্ত্র নিয়ে এর পর এলাকার উদ্দেশে রওনা দেন। তাই পৌঁছাতে একটু সময় লাগে।

এই কর্মীদেরই বিকেলের পালায় একই ওয়ার্ডের একই এলাকায় কাজ করার কথা। বিকেলে সাড়ে পাঁচটার দিকে প্রথমে হ‌ুমায়ুন সড়কে যান এই প্রতিবেদক। তখন দুজন কর্মীকে ওষুধ (ফগিং) ছিটাতে দেখা যায়। তাঁরা বলেন, সকালে উপস্থিত সবাই বিকেলের পালায় কাজে আসেননি।

এ বিষয়ে সুপারভাইজার রাকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সাতজন কর্মী বিকেলে আসেননি। তাঁদের মধ্যে একজনের বাড়ি মানিকগঞ্জে। সকালে কাজ করে প্রায়ই তিনি বাড়িতে চলে যান। আর নারায়ণগঞ্জের ভুলতা থেকে আসেন একজন। বয়সের কারণে দুই পালায় কাজ করার মতো শারীরিক সক্ষমতা তাঁর নেই। বাকি পাঁচজনের মধ্যে তিনজন মশা মারার ওষুধ আনতে গুলশানে সিটি করপোরেশনের ভান্ডার শাখায় গেছেন। তাই বিকেলে তাঁদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। অন্য দুজন কর্মী কেন কাজে আসেননি, সেটি তাঁকে জানানো হয়নি।

উত্তর সিটির স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ৫৪টি ওয়ার্ডে মশকনিধনে বিশেষ অভিযান চালানো হয়েছে। ছাদবাগানে মশার প্রজননস্থল শনাক্ত করতে ব্যবহার করা হয়েছে ড্রোন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মসজিদগুলোতে দেওয়া হয়েছে ঘোষণা। স্থানীয় বিভিন্ন হাউজিং সোসাইটি, কল্যাণ সমিতি ও বাড়ির মালিক সমিতিকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।

চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩ সাল) মশকনিধন কার্যক্রম বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে মশার ওষুধ কেনা বাবদ ব্যয় ৪০ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরে (২০২১-২২) ব্যয় হয়েছিল ৫৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।

উত্তর সিটির ২৭ নম্বর ওয়ার্ডেও (ফার্মগেট, রাজাবাজার) মশকনিধনের সব কর্মী কাজে যোগ দেন না। এই ওয়ার্ডে গতকাল ১৫ জন কর্মীর মধ্যে বিকেলে কাজে ছিলেন নয়জন। আর সকালে ছিলেন ১৪ জন। এই ওয়ার্ডের দুজন মশকনিধনকর্মী প্রথম আলোকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

তাঁরা বলেন, একজন মশকনিধনকর্মী কখনোই কাজে আসেন না। তিনি ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদুর রহমানের কার্যালয়ে কাজ করেন। এই ওয়ার্ডে নিয়োজিত মশকনিধনের কাজের সুপারভাইজার মো. রবিন নিজেই কাজে অনিয়মিত বলে জানান মশকনিধনকর্মীরা। পাঁচ দিন ধরে তাঁর দেখা পাচ্ছেন না কর্মীরা।

এ বিষয়ে মো. রবিন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, নিজের ও পরিবারের অন্য সদস্যদের অসুস্থতার কারণে তিনি কাজে যেতে পারেননি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন তিনি।