মানবতাবিরোধী অপরাধ: বাঘারপাড়ার চার রাজাকারের মৃত্যুদণ্ড

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল
ফাইল ছবি

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যশোরের বাঘারপাড়ার চার রাজাকারকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল আজ রোববার এ রায় দেন। অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম।

চার আসামি হলেন মো. আমজাদ হোসেন মোল্লা, মো. ওহাব মোল্লা, মো. মাহতাব বিশ্বাস, মো. ফসিয়ার রহমান মোল্লা। চার আসামির মধ্যে আমজাদ হোসেন ছাড়া অপর তিন আসামি পলাতক। রায় উপলক্ষে আজ আমজাদকে কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। রায়ের পর তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে এ নিয়ে গত এক যুগের বেশি সময়ে ৫২টি মামলার রায় এল। এসব মামলায় দণ্ডিত আসামির সংখ্যা ১৩৮।

আজ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী ও রেজিয়া সুলতানা। আসামিপক্ষে ছিলেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম ও আবদুস সাত্তার পালোয়ান।

রায়ের পর রেজিয়া সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে অপহরণ, আটক, নির্যাতন, ছয়জনকে হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক চারটি অভিযোগ আসামিদের বিরুদ্ধে আনা হয়। রায়ে চারটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমজাদ মোল্লা বাঘারপাড়া থানার রাজাকার কমান্ডার এবং অপর তিন আসামি রাজাকার বাহিনীর সদস্য ছিলেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম প্রথম আলোকে বলেন, ট্রাইব্যুনালের রায়ে আসামি সংক্ষুব্ধ। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে নির্ধারিত ৩০ দিনের মধ্যেই আপিল করা হবে। কেননা, আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে দালাল আইনে ১৯৭২ সালে আটটি মামলা হয়েছিল, সব কটি মামলায় তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে অব্যাহতি পান।

এদিকে ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে এ পর্যন্ত শীর্ষ পর্যায়ের সাত আসামির দণ্ড কার্যকর হয়েছে। এর মধ্যে ছয়জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আর আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগ করছেন জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া আসামিরা হলেন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা আবদুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও মীর কাসেম আলী। এ ছাড়া মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি কার্যকর হয়েছে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর।

উল্লেখ্য, ট্রাইব্যুনালের যাত্রা শুরু হয় ২০১০ সালের ২৫ মার্চ। ট্রাইব্যুনালের যাত্রা শুরুর পর দুই বছরের মাথায় ২০১২ সালের ২২ মার্চ আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়, যা ট্রাইব্যুনাল-২ নামে পরিচিতি পায়। ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দুই ট্রাইব্যুনালকে একীভূত করে আবার একটি ট্রাইব্যুনাল করা হয়। এখন একটি ট্রাইব্যুনালে (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১) চলছে বিচার কার্যক্রম।