ঢাবির জগন্নাথ হলে ৭৩ মণ্ডপে সরস্বতী পূজা উদ্‌যাপন

জ্ঞান ও বিদ্যার দেবী সরস্বতীর পূজা শেষে একটি শিশুকে হাতেখড়ি দিচ্ছেন পুরোহিত। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল মাঠেপ্রথম আলো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হলে উদ্‌যাপিত হলো হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব সরস্বতীপূজা। জ্ঞান ও বিদ্যার দেবী সরস্বতীর কৃপা লাভের আশায় জগন্নাথ হলের মাঠে মণ্ডপে মণ্ডপে বাণী অর্চনা, আরতি ও ভক্তদের পুষ্পাঞ্জলিতে আরাধনা করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

হলের পুরো মাঠের চারপাশে বিভিন্ন অনুষদ, বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের ৭১টি এবং হলের উপাসনালয়ের পাশের পুকুরে একটি ও হলের কর্মচারীদের আরেকটি মণ্ডপে সকাল থেকেই উপাসনা শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী–শিক্ষক ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পূণ্যার্থীদের ভীড় ছিল মণ্ডপে মণ্ডপে।

হলের মাঠে ঘুরে দেখা যায়, নানা কারুকাজে সেজেছে মণ্ডপগুলো। জগন্নাথ হলের উপাসনালয় প্রাঙ্গণ সংলগ্ন পুকুরে স্থাপন করা হয়েছিল সবচেয়ে বড় সরস্বতি প্রতিমা। চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের বানানো এই প্রতিমা প্রতি বছর পুণ্যার্থীদের নজর কাড়ে। বাঁশ-বেতের বিভিন্ন অংশ জুড়ে দিয়ে এই প্রতিমা বানানো হলেও সৃজনশীল সাজসজ্জার কমতি ছিল না তাতে।

উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ তাদের মণ্ডপের দেয়ালিকায় বাংলাদেশের মানচিত্র ফুটিয়ে তুলেছে। মাছারাঙা পাখির আদলে সেজেছিল গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের পূজা মন্ডপ। পায়রা, গোলক ও দাঁড়িপাল্লা দিয়ে দেয়ালিকা সাজিয়েছিল শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগ। এভাবে প্রতিটি মণ্ডপ সেজেছিল বৈচিত্র্যময় নানান সাজে।

জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী রুদ্র নাথ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরস্বতী পূজায় দেবীর আরাধনায় সবাই ব্যস্ত থাকে। এ সময় আমাদের হল একটি মিলনমেলায় পরিণত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন আসেন। সরস্বতী পূজা উপলক্ষে আমাদের হলে প্রতি বছর বড় জনসমাগম হয়। উৎসব আনন্দে আমরা দুইদিন মেতে থাকি।’

দুপুরের দিকে জগন্নাথ হলে সরস্বতী পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে আসেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। মণ্ডপ পরিদর্শনের সময় তাঁরা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় পূজার সার্বিক পরিস্থিতির খোঁজখবরও নেন তাঁরা।

জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ ও পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি দেবাশীস পাল বলেন, জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আমরা বৈষম্যহীন ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ার এক মহান প্রত্যয় গ্রহণ করেছি। এবারের সরস্বতী পূজা তাই এক ভিন্ন আঙ্গিকে আয়োজন করা হয়েছে।

পূজা উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক মিঠুন কুমার সাহা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান করছে। প্রয়োজনীয় লোকবল ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে পুলিশ, বিজিবি ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ জন্য হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবার প্রতি ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’