অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা দিয়ে রোগী হয়রানি করবেন না: রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ আজ সোমবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সমাবর্তনে স্বর্ণপদকপ্রাপ্তদের পদক প্রদান করেন
ছবি: পিআইডি

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ অপ্রয়োজনীয় বড় বড় টেস্ট দিয়ে রোগীদের হয়রানি না করতে চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আজ সোমবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘বড় ডাক্তার হয়ে অপ্রয়োজনীয় বড় বড় টেস্ট দিয়ে রোগীদের হয়রানি করবেন না...অসুস্থ ও অসৎ প্রতিযোগিতা পরিহার করতে হবে।’

তিনি চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও সেবার মনোভাব নিয়ে দায়িত্বশীল আচরণ করার জন্যও জোর তাগিদ দেন। রাষ্ট্রপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয় আচার্য আবদুল হামিদ চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিএসএমএমইউয়ের সেবাদান পদ্ধতি সহজ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘বিএসএমএমইউর আউটডোরে প্রায়ই সকালে ল্যাবরেটরি বিভাগ খোলা হয় না বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এর ফলে রোগীদের রিপোর্ট সংগ্রহে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।’

মনে রাখবেন, ডিগ্রি অর্জনের পেছনে আপনাদের মা-বাবা, অভিভাবক ও শিক্ষকদের যেমন অবদান রয়েছে, তেমনি রয়েছে এ দেশের খেটে খাওয়া মানুষেরও বড় অবদান। তাই যাদের কারণে আপনাদের রুটিরুজি, তাদের প্রতি আপনাদের আরও যত্নবান হওয়া উচিত।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ

সক্ষমতার দিক থেকে বিএসএমএমইউকে ‘সেন্টার অব এক্সিলেন্স’ হিসেবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, এ প্রতিষ্ঠানের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক। জাতির পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধরনের অবহেলা, দায়িত্বহীনতা ও প্রশাসনিক দুর্বলতার সুযোগ নেই। চিকিৎসার নামে সাইনবোর্ডসর্বস্ব ও দালালনির্ভর সব ধরনের প্রতারণা বন্ধ করতে প্রশাসনিক উদ্যোগের সঙ্গে চিকিৎসকদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান আবদুল হামিদ।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ আজ সোমবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সম্মানসূচক ডিগ্রি (পিএইচডি) প্রদান করেন
ছবি: পিআইডি

তিনি বলেন, কিছু অসাধু ও প্রতারক চিকিৎসকের জন্য যাতে চিকিৎসার নামে গোটা চিকিৎসক সমাজের সুনাম ক্ষুণ্ন না হয়, সেদিকেও সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। পত্রপত্রিকায় প্রায়ই দেখা যে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা হাসপাতাল ক্লিনিকগুলো রোগীদের জিম্মি করে ব্যবসা করে। অনেক সময় দালালদের খপ্পরে পড়েও রোগীরা, বিশেষ করে গ্রাম থেকে আসা রোগীরা চরম হয়রানির শিকার হন।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, চিকিৎসাসেবার সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বাংলাদেশেও বিদেশের মতো বাণিজ্যিক নামের (Trade Name) পরিবর্তে সাধারণ নাম (Generic Name) চালু করার বিষয়টি ভাবতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ এই সমাবর্তনে ‘সমাবর্তন বক্তা’ হিসেবে বক্তব্য দেন ভারতের ইউনিভার্সিটি সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রাজ-বর্ধন আজাদ।

ডিগ্রিপ্রাপ্ত গবেষক, চিকিৎসক ও নার্সদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘মনে রাখবেন, ডিগ্রি অর্জনের পেছনে আপনাদের মা-বাবা, অভিভাবক ও শিক্ষকদের যেমন অবদান রয়েছে, তেমনি রয়েছে এ দেশের খেটে খাওয়া মানুষেরও বড় অবদান। তাই যাদের কারণে আপনাদের রুটিরুজি, তাদের প্রতি আপনাদের আরও যত্নবান হওয়া উচিত।’ তিনি বলেন, বেসরকারি খাতে থাকা হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোকে অবশ্যই গুণে-মানে সমৃদ্ধ হতে হবে। চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সব সুযোগ–সুবিধা থাকতে হবে।

দেশে অনেক স্বনামধন্য চিকিৎসক, চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান থাকা সত্ত্বেও প্রতিবছর প্রায় ২৫ লাখ বাংলাদেশি চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাচ্ছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমাদের ভাবতে হবে আসল সমস্যাটা কোথায়। রোগীর আস্থা অর্জনে একজন ডাক্তারকে সবার আগে ভালো শ্রোতা হতে হবে।’

দেশে অনেক স্বনামধন্য চিকিৎসক, চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান থাকা সত্ত্বেও প্রতি বছর প্রায় ২৫ লাখ বাংলাদেশি চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাচ্ছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, ‘আমাদের ভাবতে হবে আসল সমস্যাটা কোথায়। রোগীর আস্থা অর্জনে একজন ডাক্তারকে সবার আগে ভালো শ্রোতা হতে হবে।’ রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, রোগী ও তাদের আত্মীয়স্বজনদেরও মনে রাখতে হবে যে চিকিৎসকেরা আল্লাহ বা ভগবান নন। তাঁরাও মানুষ। তাঁরা কেবল চিকিৎসাসেবা দিতে পারেন। তাই রোগীর কিছু হলেই চিকিৎসকদের দায়ী করবেন আর হাসপাতাল ভাঙচুর করবেন—এটাও কাম্য নয়। এ জন্য চিকিৎসক, রোগী ও আত্মীয়স্বজনদের আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে।

 রাষ্ট্রপতি বলেন, কিছু অসাধু ও প্রতারক চিকিৎসকের জন্য যাতে চিকিৎসার নামে গোটা চিকিৎসক সমাজের সুনাম ক্ষুণ্ন না হয়, সেদিকেও সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। পত্রপত্রিকায় প্রায়ই দেখা যে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা হাসপাতাল–ক্লিনিকগুলো রোগীদের জিম্মি করে ব্যবসা করে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বিএসএমএমইউয়ে উপাচার্য মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, সহ–উপাচার্য (শিক্ষা) মোশাররফ হোসেন, সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) ছয়েফ উদ্দিন আহমদ ও সহ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) মো. মনিরুজ্জামান খান, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আতিকুর রহমান ও প্রক্টর মো. হাবিবুর রহমান।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ আজ সোমবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা রাজবর্ধন আজাদকে ক্রেস্ট প্রদান করেন
ছবি: পিআইডি

সমাবর্তনে তিনজনকে সম্মানসূচক পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হয়। তাঁরা হলেন সূচনা ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ, বিএসএমএমইউর সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট মো. নজরুল ইসলাম এবং বিশিষ্ট অর্থোপেডিক সার্জন কাজী শহিদুল আলম।

চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ৩৫ জনকে ‘চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক’ প্রদান করা হয়।