সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই হচ্ছে বইমেলা, চলছে জোর প্রস্তুতি

অমর একুশে বইমেলার প্রস্তুতি
ফাইল ছবি

অমর একুশে বইমেলার আর দুই সপ্তাহও বাকি নেই। চলছে মেলার অবকাঠামো নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রস্তুতিমূলক কাজ। অধিবর্ষের (লিপইয়ার) জন্য এবারের বইমেলা হতে যাচ্ছে ২৯ দিনের।

এবারের বইমেলার বিন্যাস গতবারের মতোই থাকছে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) কাছে মেট্রোরেল স্টেশনের ফটকের জন্য মেলার প্রবেশপথ ও বাইরে বেরোনোর পথ গতবারের চেয়ে কয়েক হাত দূরে হতে পারে।

গত বছরের বইমেলায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের দিকের প্রবেশপথটি সপ্তাহে দুই দিন খোলা থাকত। এবার তা মেলা চলাকালে পূর্ণ সময় খোলা রাখার অনুমতি পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে মেলা পরিচালনা কমিটি। এ ছাড়া এই বছর বইমেলার নীতিমালা নতুন করে প্রণয়ন করা হয়েছে। এর ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিকভাবে কয়েকটি নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যেমন বইমেলার পর্যবেক্ষণ (পূর্বপ্রস্তুতি) কমিটি গঠন করা হয়েছে; করা হয়েছে বইমেলা শৃঙ্খলা কমিটি।

গত মঙ্গলবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, মেলার বেষ্টনী নির্মাণের কাজ চলছে। প্রতিবারের মতো এ বছরও বইমেলায় খাবারের দোকান থাকছে। তবে চুলা না জ্বালানোর শর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পেছনে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের কাছে অল্প পরিসরে এ ব্যবস্থা হবে বলে জানিয়েছে পরিচালনা কমিটি।
অমর একুশে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘অমর একুশে বইমেলা নীতিমালা আইন উপদেষ্টার পরামর্শের ভিত্তিতে নতুন করে প্রণয়ন করা হয়েছে। ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে মেলার সার্বিক ব্যবস্থাপনাসহ মেলা পরিচালনা করে এসেছে। পরে মেলার পরিসর বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে সব কাঠামোসহ অন্যান্য কিছু অংশ সম্পন্ন করা হতো।’

মুজাহিদুল ইসলাম জানান, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের বিভিন্ন অসহযোগিতা ও সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এবার পুরো মেলার দায়িত্ব বাংলা একাডেমি একাই সম্পন্ন করার দায়িত্ব নিয়েছে। এ জন্য এবারের মেলার কাজ গতবারের মেলা শেষ হওয়ার পর থেকেই শুরু করা হয়েছে।

অমর একুশে বইমেলা পরিচালনা কমিটির এই সদস্যসচিব আরও বলেন, প্রাপ্ত আবেদনের ভিত্তিতে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেশ কয়েটি নতুন প্রতিষ্ঠানকে স্টল বরাদ্দের জন্য নির্বাচিত করা হচ্ছে। সবশেষে নতুন প্রকাশকদের সংখ্যা এবারের মেলায় ১৫ থেকে ২০টি হতে পারে। বিগত বছর ও নতুন প্রাপ্ত প্রকাশকদের মধ্যে ডিজিটালাইজড পদ্ধতিতে স্টল বরাদ্দের লটারি অনুষ্ঠিত হবে ২৩ জানুয়ারি।

এবারের মেলা নিয়ে আশাবাদী মেলার আয়োজক ও প্রকাশকেরা। তাঁরা বলছেন, কাগজের দাম বেড়েছে; তবে পাঠক এরই মধ্যে একটি মেলা পেয়েছে। অর্থাৎ কাগজের মূল্য বাড়ার পর গত বছরই ২০২৩ সালে অমর একুশে বইমেলা হয়েছে। এ ছাড়া ছুটির দিনগুলোয় রাজধানীর অন্য প্রান্ত থেকে বইপ্রেমীরা মেট্রোয় আসতে পারবেন। ফলে মেলায় মানুষ আসবেন বলে তাঁদের প্রত্যাশা।

আগামী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ওসমান গনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চাই মেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই হোক। এ জায়গার সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। এ ছাড়া এবারের মেলায় আমরা পাইরেটেড (নকল) বই যাতে মেলায় বিক্রি বন্ধ হয়, সে বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে অনুরোধ করেছি কমিটির কাছে। মেলা থেকে মানুষের বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা সহজ করতে রাত নয়টায় এই রুটের মেট্রো সার্ভিস চালু রাখার ব্যবস্থা নিতেও অনুরোধ করছি।’

বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি, পুলিশ বিভাগ, মেট্রোরেল, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের সমন্বয়ে সভা করেছে মেলা পরিচালনা কমিটি। ৩০ জানুয়ারি বেলা ১১টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে অমর একুশে বইমেলা ২০২৪-এর সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন প্রকাশকেরা। বইমেলা পূর্বাচলে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা শোনা গিয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই হচ্ছে।