মাকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে চান হৃদয় সরকার

মায়ের কোলে বসে প্রতিবন্ধী সন্তান হৃদয় সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি–পরীক্ষা দিতে যাচ্ছেন—সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকের মন ছুঁয়েছিল ছবিটি। সেই ছবি–গল্প প্রকাশিত হয় প্রথম আলোর সাপ্তাহিক ক্রোড়পত্র ‘ছুটির দিনে’তে। এখন কেমন আছেন হৃদয় সরকার? সেটাই জানা যাক।

হৃদয় সরকার ও তার মা সীমা খাতুন

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে মায়ের কোলে করে ঢাকায় আসেন হৃদয় সরকার। লক্ষ্য স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি। মা সীমা সরকারের কোলে চড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিতে যায় ছেলে হৃদয়। অতঃপর ২০১৯ সালে জানুয়ারি থেকে শুরু শিক্ষার্থী হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে পথচলা শুরু।

হৃদয় সরকার বলেন, ‘মা আমার বড় আশ্রয়স্থল। ছোটবেলা থেকেই আমাকে বিশেষ আদর–যত্নে তৈরি করতে থাকেন আজকের হৃদয় হয়ে উঠতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফরেন অ্যাফেয়ার্স বিষয়ে পড়ার আগ্রহ ছিল আগে থেকেই। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে। নিজের বিভাগ থেকে সব সময় পেয়েছি সব ধরনের সহযোগিতা। যার ফলে ফরেন অ্যাফেয়ার্স বিষয়ে কিছু কাজ করার সুযোগ পাই। যেমন সমসাময়িক আন্তর্জাতিক বিষয়ে পত্রিকায় কলাম লেখা, সেমিনার, কনফারেন্সে যোগদান করা ইত্যাদি।’  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবোজ্জ্বল ছাত্ররাজনীতির প্রেক্ষাপট হৃদয় সরকারকে রাজনৈতিক সচেতন হিসেবে গড়ে উঠতে দারুণভাবে প্রভাবিত করছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে ছাত্ররাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত তিনি। হৃদয় জানান, ‘বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতিতে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি খুবই কম। ইচ্ছে আছে এই জায়গাটিতে পরিবর্তন আনা। আর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বলতে এমন কিছু করতে চাই, যা থেকে সমাজ এবং দেশের জন্য কল্যাণ সাধিত হয়।’

কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে হৃদয় সরকার বলেন, ‘আজ যে এত স্বপ্নের কথা বলতে পারছি, এতদূর পর্যন্ত আসতে পেরেছি, তা শুধুই আমার মায়ের জন্য। আমার মা বিবিসির করা বিশ্বের ১০০ অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী নারীর তালিকায় স্থান পেয়েছেন। আমার মা সীমা সরকারের জন্যও এটা নিঃসন্দেহে অনেক গর্বের। আমাকে নিয়ে মায়ের যে সংগ্রাম, এটা তার স্বীকৃতি। তবে মা মনে করেন আমি যদি মানুষের মতো মানুষ হতে পারি, সেটাই হবে তাঁর সবচেয়ে বড় স্বীকৃতি।’

হৃদয় সরকার

বর্তমানে মাকে নিয়ে ঢাকার আজিমপুর থাকেন হৃদয় সরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষে পড়াশোনা করছেন তিনি। পড়াশোনা শেষ করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে মায়ের মুখের হাসি ফোটাতে চান। কাজ করতে চান দেশের মানুষের জন্য। বিশেষভাবে তাঁর মতো শারীরিক প্রতিবন্ধীদের নিয়ে।