জাতীয় বৃক্ষমেলা শেষ হচ্ছে রোববার, গত বছরের তুলনায় বিক্রি কম

জাতীয় বৃক্ষমেলার একটি স্টলে ফুলের চারা দেখছেন একজন বৃক্ষপ্রেমী। ঢাকা, ২৬ জুলাইছবি: আশীষ–উর–রহমান

মাসব্যাপী জাতীয় বৃক্ষমেলা শেষ হচ্ছে আগামীকাল রোববার। গত শুক্রবার মেলা শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে নার্সারির মালিকদের অনুরোধে মেলার মেয়াদ তিন দিন বাড়ানো হয়। এবারের মেলায় গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম চারা বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকেরা। তাঁদের মতে, দেরিতে মেলা শুরু ও কিছু নির্দিষ্ট ক্রেতার অনুপস্থিতির কারণে বিক্রি খানিকটা কমেছে।

বন বিভাগের আয়োজনে প্রতিবছর বর্ষায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের পুরোনো বাণিজ্য মেলার মাঠে বৃক্ষমেলার আয়োজন করা হয়। সাধারণত ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসে মেলা শুরু হয়। তবে এবার ঈদুল আজহার ছুটির কারণে মেলা কিছুটা পিছিয়ে ২৫ জুন থেকে মেলা শুরু হয়। এবার মেলার প্রতিপাদ্য ছিল ‘পরিকল্পিত বনায়ন করি, সবুজ বাংলাদেশ গড়ি’।

বৃক্ষমেলার তথ্যকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত বন বিভাগের সামাজিক বন বিভাগের সমাজবিজ্ঞানী আমিনুল ইসলাম জানালেন, এবারের মেলায় ৯২টি বেসরকারি নার্সারি ও ৬টি সরকারি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত মেলায় বিক্রি হয়েছে ১৪ লাখ ৭৮ হাজার ৬৩২টি চারা। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ১২ কোটি ৭৪  লাখ ৮৬ হাজার ১৪৬ টাকা। গত বছর ২০২৪ সালে এই সময়ে বিক্রি হয়েছিল ৩১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৯৩টি চারা, যার মূল্য ছিল ১৬ কোটি ২৮ লাখ টাকার বেশি।

আমিনুল ইসলাম বলেন, এবার দামি গাছের বিক্রি কমেছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে কিছু নির্দিষ্ট ক্রেতা শ্রেণি মেলায় আসেনি। মেলাও শুরু হয়েছে কিছুটা দেরিতে। সব মিলিয়ে বিক্রি কিছুটা কম হলেও শেষ পর্যন্ত মোট বিক্রি ১৪ কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছাবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

মেলার স্টলের মালিকদের কাছ থেকে প্রতিদিন লিখিতভাবে বিক্রির পরিমাণ সংগ্রহ করে তথ্যকেন্দ্র বিক্রির হিসাব প্রকাশ করে। অনেক নার্সারি মালিকই জানাচ্ছেন, শুরুতে প্রচার কম হওয়ায় প্রথম সপ্তাহে দর্শনার্থীর সংখ্যা খুবই কম ছিল, যার প্রভাব পড়েছে বিক্রিতে।

একটি স্টলে ফলদ ও বনজ গাছের চারা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ঢাকা, ২৬ জুলাই
ছবি: আশীষ-উর-রহমান

বনরূপা নার্সারির মালিক নূরুল হক বলেন, ব্যবসা এবার খুব একটা ভালো হয়নি। মেলার সময় পরিবর্তন করা হলেও যথেষ্ট প্রচার না থাকায় প্রথম দিকে মেলায় তেমন লোক আসেনি। বিক্রি তাই আশানুরূপ হয়নি।

নূরুল হকের কথার সুর মিলিয়ে বিসমিল্লাহ নার্সারির রফিকুল ইসলাম বলেন, মেলায় আয়তন বেড়েছে, গাছপালা সাজানো হয়েছে সুন্দরভাবে, তবে বিক্রি প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি।

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের নার্সারি স্টলে ছিল শিক্ষানুরাগীদের প্রচুর ভিড়। নার্সারির আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক জাহিদ ইব্রাহীম জানালেন, তাঁদের স্টলে ফলের গাছ এবং শোভাবর্ধনকারী গাছ বেশি বিক্রি হয়েছে। এ বছর তাঁরা ১৩৬ প্রজাতির ফলদ চারা ও ২৪টি বিলুপ্তপ্রায় গাছের চারা এনেছেন। যার মধ্যে আছে বৈলাম, রিঠা, ধূপ, তালিপাম ও তমাল। গাছ বিক্রির পাশাপাশি তাঁরা স্কুলশিক্ষার্থীদের জন্য গাছ চেনার ব্যবস্থাও রেখেছেন।

আরও পড়ুন
গাছ কিনে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ঢাকা, ২৬ জুলাই
ছবি: আশীষ-উর-রহমান

শুক্র ও শনিবার ছুটির দুই দিনে মেলায় দর্শনার্থীদের প্রচুর ভিড় দেখা গেছে। ছাদবাগানে আগ্রহী অনেকেই এসেছেন নিজেদের বাগানের জন্য চারা কিনতে।

জয়ন্ত কুমার মণ্ডল ও লাবণ্য সরকার তাদের দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন কচুক্ষেত এলাকা থেকে। এই দম্পতি তাঁদের ভাড়া বাসার ছাদে প্রায় চার বছর ধরে সবজি ও ফুলের বাগান করছেন। তাঁরা বেশ কিছু সবজির চারা কিনেছে ব্র্যাক নার্সারির স্টল থেকে।

‘শৈল্পিক অরণ্য’ নামে আরেকটি স্টলের সামনে গাছপালার সঙ্গে ছিল ছোট্ট কৃত্রিম ঝরনা, যা দর্শনার্থীদের দৃষ্টি কেড়েছে। তাদের প্রধান নির্বাহী সনিয়া হক জানালেন, তারা শুধু চারা বিক্রি নয়, রিসোর্ট ও বাণিজ্যিক ভবনের ল্যান্ডস্কেপ ডিজাইন এবং ছাদবাগান তৈরির কাজও করে থাকেন।

আগামীকাল সকাল নয়টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত মেলার স্টল খোলা থাকবে। শেষ দিনে বিক্রি কিছুটা বাড়বে এমন প্রত্যাশায় রয়েছেন নার্সারির মালিক ও আয়োজকেরা।

আরও পড়ুন