যাচাই-বাছাইয়ে নির্দোষদের আনসারে ফেরতে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারে: আপিল বিভাগ

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

যথাযথ যাচাই–বাছাইয়ের পর বিদ্রোহের জন্য দোষী না হলে সরকার নির্দোষ রিট আবেদনকারীদের (চাকরি হারোনো) ব্যাটালিয়ন আনসারে ফেরতে ব্যবস্থা নিতে পারে বলে এক রায়ে উল্লেখ করেছেন আপিল বিভাগ। ২৯ বছর আগে আনসার বিদ্রোহের পর চাকরি হারানো প্রায় দুই হাজার সদস্যের মধ্যে যাঁদের বয়স ও শারীরিক সক্ষমতা রয়েছে, তাঁদের পুনর্বহাল করতে হাইকোর্টের রায় বাতিল করে আপিল বিভাগের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে এমন পর্যবেক্ষণ এসেছে। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ২৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হয়েছে।  

আইনজীবীদের তথ্যমতে, আনসারে ১৯৯৪ সালে বেতন-ভাতা বৃদ্ধি ও চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে অসন্তোষ তৈরি হয়। পরে তা বিদ্রোহে রূপ নেয়। এ ঘটনায় ২ হাজার ৪৯৬ জন আনসারকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিদ্রোহের ঘটনায় মামলার পর বিভিন্ন সময় তাঁরা খালাস পান। পরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে কিছুসংখ্যক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে চাকরিতে পুনর্বহাল হন। তবে ২ হাজার ৪৯৬ জন আনসার সদস্যকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এ নিয়ে তাঁরা পৃথক রিট করেন। চাকরি হারানো প্রায় ২ হাজার সদস্যের করা পৃথক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ ও ২০১৮ সালে হাইকোর্ট শর্তসাপেক্ষে তাঁদের পুনর্বহালের নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আনসার-ভিডিপির মহাপরিচালক ও রাষ্ট্রপক্ষের করা পৃথক আপিল ও লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে গত বছরের ২ আগস্ট রায় ঘোষণা করেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগ। অপর দুই সদস্য হলেন, বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। রায়টি লিখেছেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। আনসার-ভিডিপির মহাপরিচালকের পক্ষে আইনজীবী কামাল উল আলম ও কামরুল হক সিদ্দিকী এবং রিট আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী মো. সালাহ উদ্দীন দোলন, মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও অনীক আর হক শুনানিতে ছিলেন।
চাকরি হারানোর কারণ নিয়ে যা বলা হয়েছে

রায়ে বলা হয়, সহায়ক পুলিশ শক্তি হিসেবে আনসাররা কাজ করে, তারা প্রশিক্ষিত ও অস্ত্র চালানোর অধিকারী। চেইন অব কমান্ড ভেঙে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করাকে ‘বিদ্রোহ’ বলা হয়, যা পুলিশের সহায়ক ফোর্সের জন্য সর্বোচ্চ অপরাধ।

এ জন্য কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ১৯৯৪ সালের কথিত ‘বিদ্রোহের’ পর জরুরি অবস্থা ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তারা ‘বিদ্রোহে’ জড়িত ব্যক্তিদের ঘটনাস্থলে চিহ্নিত ও ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করেন। এজাহার দায়ের করা হয়।

অবশ্য বিশৃঙ্খল একটি পরিস্থিতিতে কিছু নিরপরাধ আনসারকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহের’ অপরাধে জড়িত দেখানো হতে পারে, যা সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে বের করা সম্ভব বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ২৫ বছরের দীর্ঘ ব্যবধানের পর যাচাই-বাছাই ছাড়া পাইকারি ভিত্তিতে তাদের পুনর্বহাল করা সমীচীন হবে না। এ প্রেক্ষাপটে যথাযথ যাচাই–বাছাইয়ের পর ‘বিদ্রোহের’ জন্য দোষী না হলে নিরপরাধ ব্যক্তিদের আনসার ব্যাটালিয়নে ফিরিয়ে নিতে উদ্যোগের বিষয়টি সরকার বিবেচনা করতে পারে।

রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি বৃহস্পতিবার হাতে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন রিট আবেদনকারীদের অন্যতম আইনজীবী মো. সালাহ উদ্দীন দোলন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্টের রায় বাতিল হলেও যাচাই–বাছাই সাপেক্ষে নির্দোষ সদস্যদের (রিট আবেদনকারী) ব্যাটালিয়ন আনসারে ফেরত নিতে সরকারের কোনো বাধা নেই।

রায়ের পর্যবেক্ষণ বিষয়ে জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী বলেন, এই ব্যক্তিরা (বিদ্রোহের পর চাকরি হারানো) সন্দেহভাজন ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করার মতো আচরণ পাওয়ার দাবিদার নন। তারাও মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার যোগ্য। বিশেষত ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান হতে তাদের বঞ্চিত করতে ‘আনসার হতে বিদায়’ কারণ হিসেবে বৈষম্য করা উচিত নয়।