বিজয়ের ডিসেম্বর দেশে দেশে
জিম্বাবুয়ে: রক্তপাত থামিয়ে এক হওয়ার দিন
ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয়ের মাস। কিন্তু বিশ্বে এমন আরও বহু দেশ আছে, যারা তাদের স্বাধীনতা, মুক্তি অথবা যুদ্ধের সমাপ্তির সাফল্যকে স্মরণ করে ‘বিজয় দিবস’ বা সমতুল্য নামে। প্রথম আলো ডিসেম্বরের এই বিশেষ আয়োজনে তুলে ধরছে কীভাবে তারা সেই দিনটিকে আজও নিজেদের জাতীয় জীবনে বাঁচিয়ে রেখেছে।
ডিসেম্বর মাস শুধু বিজয়ের নয়, এই মাস পুরোনো বিভেদ ভুলে নতুন করে হাত মেলানোরও মাস। আজ আমরা দৃষ্টি ফেরাব সুদূর আফ্রিকায়। জিম্বাবুয়ে—একসময়ের রোডেশিয়া, যারা তাদের অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষয়ী সংঘাতের সমাপ্তি টেনেছিল এই ডিসেম্বর মাসের ২২ তারিখেই। তাদের এই দিনটি পরিচিত ‘জাতীয় একতা দিবস’ হিসেবে।
১৯৮০ সালে দীর্ঘ সংগ্রামের পর শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু শাসনের কবল থেকে জিম্বাবুয়ে স্বাধীনতা লাভ করে। কিন্তু স্বাধীনতার আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। দেশটির প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তি ও তাদের সশস্ত্র শাখা—রবার্ট মুগাবের জানু এবং জশুয়া এনকোমোর জাপুর মধ্যে শুরু হয় তীব্র ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। সদ্য স্বাধীন দেশটিতে জাতিগত দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে, যা ইতিহাসে ‘গুকুরাহুন্ডি’ নামে পরিচিত। হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারায়, দেশটি চলে যায় গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে। স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে পড়ছিল নিজেদের মধ্যকার এই সংঘাতে।
অবশেষে, ১৯৮৭ সালের ডিসেম্বর মাসে শুভবুদ্ধির উদয় হয়। দীর্ঘ আলোচনার পর দেশটির দুই প্রধান নেতা সিদ্ধান্ত নেন, সংঘাত আর নয়। ২২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত হয় ঐতিহাসিক ‘ইউনিটি অ্যাকর্ড’।এই চুক্তির মাধ্যমে বিবদমান দুটি দল মিলে গঠিত হয় ‘জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান ন্যাশনাল ইউনিয়ন-প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্ট’ (ZANU-PF)। থামে রক্তপাত, শুরু হয় এক নতুন জিম্বাবুয়ের পথচলা। দেশটির পতাকায় থাকা লাল রং যেমন স্বাধীনতা যুদ্ধের রক্তের প্রতীক, তেমনি পতাকার হলুদ রং মনে করিয়ে দেয় খনিজ সম্পদের কথা, আর সাদা ত্রিভুজটি শান্তির বার্তা দেয়।
বাংলাদেশের বিজয়ের ইতিহাসের সঙ্গে জিম্বাবুয়ের এই ইতিহাসের মিল রয়েছে ত্যাগের জায়গায়। তবে জিম্বাবুয়ে আমাদের শেখায়, শুধু বিদেশি শক্তিকে তাড়ানোই বিজয় নয়; বরং নিজেদের মধ্যকার বিভেদ ভুলে জাতিকে অখণ্ড রাখাই হলো চূড়ান্ত বিজয়। প্রতিবছর ডিসেম্বরে জিম্বাবুয়েবাসী এই দিনটিকে স্মরণ করে খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর রাজনৈতিক শোভাযাত্রার মাধ্যমে। তারা মনে করে, জাতি হিসেবে টিকে থাকতে হলে ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।