পুলিশি পাহারায় যুবদলকর্মী শাওনের লাশ হস্তান্তর, মিছিল আ.লীগের
নারায়ণগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে গুলিতে নিহত যুবদলের কর্মী শাওন প্রধানের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে কড়া পাহারায় স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে (ভিক্টোরিয়া) নিহতের বড় ভাই মিলন প্রধান এবং মামা মোতাহার হোসেনের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। লাশ হস্তান্তরের আগে পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্য ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল হাসপাতালের মর্গের সামনে অবস্থান নেয়।
এর আগে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকেরা শাওন প্রধানের লাশের ময়নাতদন্ত করেন। ময়নাতদন্তের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রুবেল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নিহতের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এদিকে শাওন প্রধানের ভাই মিলন প্রধান প্রথম আলোকে বলেন, লাশ দাফনের সব প্রস্তুতি তাঁরা সম্পন্ন করেছেন।
আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে শাওন প্রধানের মামা মোতাহার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কান আছে শুনে যান, চোখ আছে দেখে যান।
বাংলাদেশে এর চেয়ে বেশি কিছু বলা যাবে না।’ তিনি বলেন, এখন জানাজা ও লাশ দাফনের বিষয়ে স্বজনেরা সিদ্ধান্ত নেবেন।
শাওনকে যুবলীগের কর্মী দাবি
এদিকে শাওন প্রধান যুবলীগের কর্মী ছিলেন দাবি করে মিছিল করেছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে নবীনগর এলাকায় নিহতের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেন তাঁরা। ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মিছিলে অংশ নেন।
জাহাঙ্গীর হোসেনের দাবি, ‘নিহত শাওন প্রধান ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলীর চাচাতো ভাইয়ের ছেলে। তিনি যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’
ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘শাওনকে যুবলীগের কর্মী দাবি করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা একটি মিছিল করেছেন বলে আমি শুনেছি। ওই সময় আমি সেখানে ছিলাম না।’
এদিকে শাওন যুবদলের কর্মী ছিলেন বলে তাঁর মৃত্যুর পর থেকে দাবি করে আসছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। বিএনপির মিছিলে শাওনের একটি ছবিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মামুন মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, শাওন প্রধান যুবদলের কর্মী ছিলেন। বিভিন্ন সময় বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। শাওনের দূর সম্পর্কের চাচা আওয়ামী লীগ নেতার চাপে এখন তারা তাঁর হত্যার বিষয়টি আড়াল করার চেষ্টা করছে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আমীর খসরু প্রথম আলোকে বলেন, নিহতের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজনের মৃত্যু ছাড়াও পথচারী-নারীসহ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ২৬ জন। পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিপেটায় আহত হয়েছেন পুলিশের সদস্যসহ অর্ধশতাধিক মানুষ।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নগরের ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকায় দেড় ঘণ্টা পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষে চারটি মোটরসাইকেলে আগুনসহ সাত থেকে আটটি যানবাহন ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
শাওন প্রধান ফতুল্লার এনায়েতনগর এলাকায় একটি কারখানায় ওয়েল্ডিং মিস্ত্রির কাজ করতেন। তাঁর বাড়ি বক্তাবলী ইউনিয়নের পূর্ব গোপালনগর এলাকায়।