রবীন্দ্রনাথের দর্শন সব সময় আলোর পথ দেখায়

জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের ৪২তম বার্ষিক অধিবেশনের শেষ দিন ছিল রোববারছবি: রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের সৌজন্যে।

আমাদের যাপিত জীবনের সব অনুভব স্থান পেয়েছে রবীন্দ্রসংগীতে। রবীন্দ্রনাথের দর্শন সব সময় আমাদের আলোর পথ দেখায়। বাঙালি জাতি নানাভাবে রবীন্দ্রনাথের কাছে ঋণী। তাই রবীন্দ্রসংগীত শুদ্ধভাবে চর্চায় সতর্ক থাকতে হবে। জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের ৪২তম বার্ষিক অধিবেশনের সমাপ্তি অনুষ্ঠানের আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেছেন।

রোববার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ৪২তম অধিবেশনের শেষ দিনের কর্মসূচি। সকালে পরিষদের প্রতিনিধি সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে বরেণ্য রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সন্‌জীদা খাতুনকে সভাপতি, আতিউর রহমানকে নির্বাহী সভাপতি এবং লিলি ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে ৬১ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়।

বিকেলে শুরু হয় সম্মাননা প্রদান। এ বছর রবীন্দ্রপদক গুণী সম্মাননা দেওয়া হয় শিল্পগুরু মুস্তাফা মনোয়ারকে। স্মারক মানপত্রে বলা হয়, মুস্তাফা মনোয়ার এ দেশের শিল্পকলা ও সংস্কৃতি জগতের এক উজ্জ্বল নাম। চিত্রকলার জলরং থেকে শুরু করে টেলিভিশনের পর্দায় নানা আঙ্গিকে উপস্থাপন করে এ দেশের শিল্পকলাকে তিনি অন্য এক মাত্রা দিয়েছেন। অনুষ্ঠানে মুস্তাফা মনোয়ারের পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন তাঁর পুত্রবধূ নাসরিন মনোয়ার।

সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। তিনি বক্তব্যে বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের দর্শন সব সময় আমাদের আলোর পথ দেখায়। জীবনের এমন কোনো অনুভব নেই, যা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানে স্থান পায়নি। তাঁর গানের দর্শনে তাই ফুটে উঠেছে ঈশ্বর দর্শন, সৃষ্টির স্পন্দন, প্রেম, বিরহ, মুক্তি, প্রকৃতি চিন্তা ইত্যাদি।’ প্রধান বিচারপতি বলেন, রবীন্দ্রনাথ অমর হয়ে আছেন তাঁর বাণী ও সুরের মধ্যে মিলন ঘটিয়ে নিজস্ব সৌকর্য রচনার মধ্য দিয়ে, যা এখন পর্যন্ত অন্য কেউ ছাপিয়ে যেতে পারেনি।

প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশায় তাঁর নিজেরই দাবি ছিল যেন তাঁর গানের বিশুদ্ধ চর্চা হয়। চার দশক ধরে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন শুদ্ধ রবীন্দ্রসংগীত চর্চার জন্য দেশজুড়ে কাজ করে চলেছে বলে পরিষদের সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি। এ সময় তাঁর বক্তব্যে বিশুদ্ধ রবীন্দ্রসংগীত চর্চায় শৈলজানন্দ মজুমদারের সংগ্রামের কথা উঠে আসে।

সমাপনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের নির্বাহী সভাপতি আতিউর রহমান। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিন দিন ধরে আয়োজিত সম্মেলনের শেষ দিনের অনুষ্ঠানে কিশোর ও সাধারণ বিভাগের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের সনদ ও পুরস্কার দেওয়া হয়। এ বছর অনন্য পুরস্কার পেয়েছে হবিগঞ্জের প্রতিযোগী প্রকৃতি রায়।

জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের ৪২তম বার্ষিক অধিবেশন শুরু হয়েছিল গত ৮ মার্চ। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেছিলেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। দ্বিতীয় দিন বিকেলে প্রতিনিধি সম্মেলনের পর শুরু হয় বর্তমানের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা অধিবেশন। সারা দেশের সাত শর বেশি শিল্পী-কর্মী অংশ নিয়েছিলেন এবারের সম্মেলনে। তিন দিন ধরে অনুষ্ঠিত হয়েছে শিল্পীদের পরিবেশনা।