সারা বছর ধরেই স্কুলে মেধা বিকাশের জন্য আয়োজন করা হয় বিভিন্ন মেলা
ছবি: সংগৃহীত

সন্তানকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত মানুষ বানানোর ক্ষেত্র হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশে যেসব প্রতিষ্ঠান ব্যতিক্রমধর্মী পাঠ্যক্রম অনুসারে কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তাদের মধ্যে অন্যতম ‘উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল’।

ব্রিটিশ কারিকুলামের পাশাপাশি ইসলামি শিক্ষাকে পাঠ্যক্রমে ঐচ্ছিক হিসেবে যুক্ত করেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। ঢাকার লালমাটিয়া এলাকায় উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের রয়েছে মনোরম পরিবেশে দুটি ক্যাম্পাস। প্রতিটি ক্যাম্পাসে সিনিয়র, মিডল, জুনিয়র স্কুলসহ তিনটি শাখা রয়েছে।

গত ছয় বছরে শিক্ষাদান করে আসা প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান শিক্ষার্থী আট শতাধিক। বিদ্যালয়ের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনায় রয়েছেন দক্ষ ও অভিজ্ঞ ১৪০ জন শিক্ষক ও ৩৫ জন কর্মী। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আবদুল্লাহ জামান। সিনিয়র স্কুল, মিডল স্কুল ও জুনিয়র স্কুলের প্রধান হিসেবে যথাক্রমে দায়িত্ব পালন করছেন ফারজানা হক চৌধুরী, রুমানা হক ও শাকেরা সুলতানা জেসরিন।

ছাত্রছাত্রী স্কুলে আসার জন্য আগ্রহী হবে, যদি সেখানে থাকে শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ। উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের অন্যতম এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের কাছে ইতিমধ্যে আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে। স্কুলেই শিক্ষার্থীদের সব পড়া শেষ করা হয়। প্র্যাকটিস বা রিভিশনের জন্য দেওয়া বাড়ির কাজ শিক্ষার্থী নিজেই সম্পন্ন করতে পারেন। তাই কোনো শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়তে হয় না।

ও এবং এ লেভেল পরীক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাসের পাশাপাশি ‘নিবিড় পরিচর্যা’নেওয়ার মাধ্যমে চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য যোগ্য করে তোলা হয়। ফলে পরীক্ষার্থীদের বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে দৌড়াতে হয় না। বিশেষভাবে প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান অগ্রগতি এবং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উপযুক্ত নাগরিক গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে কারিকুলামে ‘কোডিং’কে একটি পাঠ্যবিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা বাংলাদেশে বিরল।

এ ছাড়া নৈতিক শিক্ষা ও আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে সুযোগ রয়েছে পবিত্র কোরআন হিফজ করার। স্বাভাবিক স্কুলিং ঠিক রেখে সকালে দেড় ঘণ্টা এবং স্কুল ছুটির পর এক ঘণ্টা, প্রতি শনিবার চার ঘণ্টা এবং বছরে দুই মাস, তথা গ্রীষ্মকালীন ও রমজানের ছুটি কাজে লাগিয়ে অসংখ্য কোরআনে হাফেজ তৈরি হচ্ছে এই প্রতিষ্ঠান থেকে। শুধু পড়ালেখাই নয়, স্কুলটিতে রয়েছে সহশিক্ষা ও প্রতিযোগিতামূলক কার্যক্রমভিত্তিক বাড়তি আয়োজন।

বর্তমান শিক্ষা কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ আবদুল্লাহ জামান বলেন, ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চাকরির বাজারের চাহিদা উপযোগী বাস্তবসম্মত শিক্ষা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরা চাই আমাদের ছেলেমেয়েরা দেশে-বিদেশে নিজেদের অবস্থান জানান দেবে, দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে।’

শুধু পড়ালেখাই নয়, সহশিক্ষা, উচ্চশিক্ষা ও প্রতিযোগিতামূলক কার্যক্রমের ওপর এ স্কুলে রয়েছে বাড়তি গুরুত্ব।

শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্যও রয়েছে নানা কাজকর্ম
ছবি: সংগৃহীত

প্রতিযোগিতামূলক কার্যক্রম

শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞানসহ অন্যান্য বিষয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে প্রতিবছর অভ্যন্তরীণভাবে বিজ্ঞান মেলা, বিজ্ঞান ও গণিত অলিম্পিয়াডের আয়োজন এবং জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করানো হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছর জাতীয় ফিজিক্স অলিম্পিয়াডে উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী সাহারা খাতুন জাতীয় পর্যায়ে ১৬তম স্থান অর্জন করেন। এ ছাড়া প্রতিভা বিকাশের অংশ হিসেবে আয়োজিত হয় বানান প্রতিযোগিতা, হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, বইমেলা, পিঠা উৎসব ইত্যাদি।

সহশিক্ষা কার্যক্রম

শারীরিক ও মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে এখানে শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ খেলাধুলা করানো হয়। ভালো পড়ালেখার পাশাপাশি প্রাত্যহিক জীবনে একজন শিক্ষার্থী যেন সর্বোচ্চ মানবিক মূল্যবোধ এবং ইসলামের নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন ভালো মানুষ হিসেবে তৈরি হয় তার নিয়মিত অনুশীলন করা হয়। দেশপ্রেম এবং জাতীয়তাবোধ তৈরির জন্য প্রতিদিন অ্যাসেম্বলিতে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, জাতীয় সংগীত পরিবেশন, শপথ পাঠ ছাড়াও বিভিন্ন জাতীয় দিবস, যেমন ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর ইত্যাদি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়। দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত করাতে এবং পাঠ্যবইয়ের শিক্ষাকে বাস্তবের সঙ্গে মিলিয়ে শিক্ষাদানের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত বিভিন্ন দর্শনীয় ও ঐতিহাসিক স্থান, চিড়িয়াখানা, জাদুঘর, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ইত্যাদি পরিদর্শন করানো হয়।

পাঠক্রমের পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের আরবি পাঠদান করা হয়
ছবি: সংগৃহীত

ইসলামি শাস্ত্রে উচ্চশিক্ষার সুযোগ

ও এবং এ লেভেল পাস করার পর কোনো শিক্ষার্থী মেডিকেল বা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বাইরে যদি ইসলামি বিষয় যেমন কোরআন, হাদিস, ফিকহ্ ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষা নিতে চাইলে তারও সুযোগ রয়েছে। কারণ ও এবং এ লেভেলের একজন শিক্ষার্থী সাধারণ বিষয়ের পাশাপাশি অতিরিক্ত বিষয় হিসেবে ইসলাম শিক্ষা এবং আরবি ভাষা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। ফলে এই স্কুলের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষার জন্য মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, উম্মুল ক্বোরা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পৃথিবীর বিভিন্ন খ্যাতনামা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে।

মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ গড়ার ক্ষেত্র হিসেবে ভূমিকা রেখে ব্যতিক্রমধর্মী বিদ্যাপীঠ হিসেবে এগিয়ে যাওয়াই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির উদ্দেশ্য।