শ্রম আইন সংশোধন করতে সংসদে বিল

জাতীয় সংসদ ভবন
ফাইল ছবি

কোনো প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের মোট সংখ্যা ৩ হাজার পর্যন্ত হলে, সেখানে ট্রেড ইউনিয়ন করতে ২০ শতাংশ শ্রমিকের সম্মতি লাগবে। আর মোট শ্রমিকের সংখ্যা ৩ হাজারের বেশি হলে ১৫ শতাংশের সম্মতি লাগবে। এই বিধানসহ শ্রম আইনের বেশ কিছু ক্ষেত্রে সংশোধনী আনা হচ্ছে।

আজ রোববার জাতীয় সংসদে ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) বিল–২০২৩’ জাতীয় সংসদে তোলা হয়েছে।

বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানের কমপক্ষে ২০ শতাংশ শ্রমিকের স্বাক্ষরযুক্ত আবেদন লাগে। এখন সেটিকে ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে। ২০০৬ সালে দেশে প্রথম শ্রম আইন করা হয়। এরপর আইনটি একাধিকবার সংশোধন করা হয়।

ট্রেড ইউনিয়ন গঠনপ্রক্রিয়া সহজ করা, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড) শ্রম আইন কার্যকর করাসহ শ্রম অধিকারের কয়েকটি বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ছিল। মূলত সে কারণেই সরকার চলতি মেয়াদের শেষ পর্যায়ে এসে আবার শ্রম আইনটি আবার সংশোধনের উদ্যোগ নিল। চলতি অধিবেশনেই বিলটি পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সংসদে তোলা বিলে বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত শ্রমিকের মোট সংখ্যা তিন হাজার পর্যন্ত হলে শতকরা ২০ ভাগ এবং ৩ হাজারের বেশি হলে শতকরা ১৫ ভাগ ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য না হলে তা নিবন্ধনের অধিকারী হবে না। একই মালিকের অধীন একাধিক প্রতিষ্ঠান যদি একই শিল্প পরিচালনার উদ্দেশ্যে একে অপরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও সম্পর্কযুক্ত হয়, তাহলে সেসব প্রতিষ্ঠান যেখানেই স্থাপিত হোক না কেন, তা একটি প্রতিষ্ঠান বলেই গণ্য হবে।

এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানপুঞ্জে ট্রেড ইউনিয়ন করার ক্ষেত্রেও সংশোধনী আনা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানপুঞ্জ বলতে কোনো নির্ধারিত এলাকায় একই প্রকারের কোনো নির্ধারিত শিল্পে নিয়োজিত এবং অনধিক ২০ জন শ্রমিক নিযুক্ত আছেন—এ ধরনের সব প্রতিষ্ঠানকে বোঝানো হয়।

বিদ্যমান আইনে বলা আছে, প্রতিষ্ঠানপুঞ্জে ট্রেড ইউনিয়ন করতে হলে সেখানকার মোট শ্রমিকের কমপক্ষে ৩০ শতাংশ এর সদস্য হতে হবে। প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, এ ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ শ্রমিক সদস্য হলে ট্রেড ইউনিয়নের অনুমোদন পাওয়া যাবে।

এ ছাড়া বিলে নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি আরও ৮ দিন বাড়িয়ে ১২০ দিন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিলে বলা হয়েছে, কোনো মালিক তাঁর প্রতিষ্ঠানে সজ্ঞানে কোনো নারীকে তাঁর সন্তান প্রসবের পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে কোনো কাজ করাতে পারবেন না বা কোনো নারী ওই সময়ের মধ্যে কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারবেন না।

বিলে একটি নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সংবিধানের ১০৩ অনুচ্ছেদের বিধানাবলি হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষেত্রে যেভাবে প্রযোজ্য হয়, শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের ক্ষেত্রেও সেভাবে প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে হবে সরাসরি আপিল বিভাগে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের পক্ষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আজ বিলটি সংসদে তোলেন। পরে বিলটি পরীক্ষা করে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।