সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার দায় নিতে হবে সরকারকে

নড়াইলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে রোববার রাজধানীর পুরানা পল্টনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) বিক্ষোভ সমাবেশ
ছবি: সংগৃহীত

নড়াইলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, মন্দির ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এতে বলা হয়েছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে কোনো ধর্মকে অবমাননা করার অধিকার যেমন কারও নেই, তেমনি আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে মন্দির ও বাড়িঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট করার অধিকারও কাউকে দেওয়া হয়নি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ তুলে নড়াইলের লোহাগড়ায় গত শুক্রবার রাতে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা করা হয়। এ সময় একটি বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় কয়েকটি মন্দির ও দোকানে।

এ ঘটনার পর রোববার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার লক্ষ্যে এ ধরনের ঘৃণ্য অপরাধ বারবার সংঘটিত হচ্ছে।

এদিকে নড়াইলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ (সিপিবি) বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বামপন্থী ছাত্রসংগঠন রাজধানীতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে। এসব কর্মসূচিতে বলা হয়, বাংলাদেশের মতো একটি অসাম্প্রদায়িক দেশে এ ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ফেসবুকে উসকানিমূলক পোস্ট দিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ভুয়া ফেসবুক আইডির মাধ্যমে এ ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। যাঁরা এসব ঘৃণ্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত, যাঁরা মদদদাতা, তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় এই প্রবণতা বেড়েই চলেছে। এর দায় সরকারকে নিতে হবে।

নড়াইলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার প্রতিবাদে সিপিবি রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে সমাবেশ করে। সমাবেশে দলের সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, বর্তমান ও অতীতের ক্ষমতাসীনেরা ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে সাম্প্রদায়িকতাকে লালনপালন করেছে। ক্ষমতার অন্যতম ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করেছে। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশ আজ অচেনা।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য এ এন রাশেদা, চিকিৎসক দিবালোক সিংহ, আইনজীবী আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।

এদিকে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি মনে করে, প্রশাসনের দুর্বলতার কারণেই সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা সংঘটিত হচ্ছে। দলটির ঢাকা মহানগর কমিটির উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে গতকাল দলের নেতারা এ কথা বলেন। নেতারা আরও বলেন, জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই সাম্প্রদায়িক বিভাজন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনাগুলো পরিকল্পিত। উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এসব হামলার জন্য দায়ী।

সমাবেশে বক্তব্য দেন ওয়ার্কার্স পার্টির ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি আবুল হোসাইন, কিশোর রায়, তৌহিদুর রহমান প্রমুখ।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) নেতা–কর্মীরা রোববার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিল করেছেন। সমাবেশে নেতারা বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার কোনো ঘটনার বিচার হচ্ছে না। এতে হামলার ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলও (বাসদ) গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করে। এতে বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং তাঁদের নানাভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে এবং পৃষ্ঠপোষকতা করা হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক ছাত্র সমাবেশে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতারা বলেন, দুষ্কৃতকারী ও স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে নড়াইলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা চালিয়েছে। এতে বক্তব্য দেন ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা তামজীদ হায়দার, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) রাফিকুজ্জামান ফরিদ প্রমুখ।

নড়াইলের ঘটনায় উদ্বিগ্ন নারীপক্ষ এক বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ধর্মীয় উন্মাদনা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী তৎপরতা নিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও হিংসাত্মক কার্যকলাপ রোধ করতে হবে। এ জন্য সরকারকে এখনই ধর্ম মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের মাধ্যমে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।