রাজনৈতিক সহিংসতায় ৬ মাসে ৯১ জন নিহত: এইচআরএসএস
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ‘রাজনৈতিক সহিংসতায়’ ৯১ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)। এর মধ্যে ৭১ জনই সরকারি দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থক। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে এইচআরএসএসের ষাণ্মাসিক (জানুয়ারি থেকে জুন) মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
১২টি জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও এইচআরএসএসের তথ্য অনুসন্ধানী ইউনিটের তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি হয়।
আজ রোববার সংগঠনটির পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ৬ মাসে ১ হাজার ৪টি ‘রাজনৈতিক সহিংসতা’র ঘটনায় ৯১ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৪ হাজার ২৬ জন। অধিকাংশ হতাহত হয়েছেন নির্বাচনী সহিংসতা, আধিপত্য বিস্তার, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ এবং বিরোধীদলীয় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোয় ছাত্রলীগের আধিপত্য বিস্তার ও অন্তর্কোন্দলের জেরে ৫০টি সহিংসতায় একজন নিহত হয়েছেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে অন্তত ৪৮০ জন আহত হয়েছেন।
গত ৬ মাসে রাজনৈতিক দলের সাত শতাধিক নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তার ৭১৪ রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর মধ্যে রয়েছেন বিএনপি-জামায়াতের ৫৭৪ জন। এ সময় বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে কমপক্ষে ৪৫টি মামলা হয়েছে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারদলীয় নেতা–কর্মীরা অন্তত ৯৯টি সভা-সমাবেশ আয়োজনে বাধা দিয়েছেন। এ সময় সংঘর্ষে ২৬১ জন আহত এবং মিছিল-সমাবেশকে কেন্দ্র করে ৩১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নির্বাচনী সহিংসতা
এইচআরএসএসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিরোধী দলগুলোর ভোট বর্জন ও নাগরিকদের ভোট প্রদানের অনীহার মধ্য দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব নির্বাচনে সহিংসতার অন্তত ৭৮১টি ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন ৪৩ জন। তাঁদের মধ্যে ৩৯ জনই সরকারি দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থক। এ ছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত ২ হাজার ৫৩৮ জন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জানুয়ারি মাসেই সহিংসতায় সারা দেশে অন্তত ৫২টি ঘটনায় ১২ জন নিহত হন। নির্বাচনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, নির্বাচনের প্রার্থী, পোলিং এজেন্ট ও প্রিজাইডিং কর্মকর্তারাও আক্রমণের শিকার হয়েছেন। এর পাশাপাশি সম্প্রতি ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতায় সারা দেশে অন্তত ২০৩টি ঘটনায় ১৭ জন নিহত হয়েছেন।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ১২টি
বছরের প্রথম ছয় মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ১২ জন। তাঁদের মধ্যে দুজন তথাকথিত ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধে, ছয়জন নির্যাতনে, তিনজন হেফাজতে এবং একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এ সময় কারা হেফাজতে বিএনপির ২ জনসহ ৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। যাঁরা কারা হেফাজতে মারা গেছেন, তাঁদের মধ্যে কয়েদি ২৫ জন ও হাজতি ৩৩ জন। জেল কর্তৃপক্ষের দাবি, যাঁরা কারাগারে মারা গেছেন, তাঁরা সবাই অসুস্থতার কারণে মারা গেছেন। কিন্তু নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের অনেকেই নির্যাতন ও যথাযথ চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন।
সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতন
গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে হামলায় নিহত হয়েছেন দুজন সাংবাদিক। এ সময় অন্তত ১২৮ সাংবাদিক হামলায় আহত হয়েছেন। লাঞ্ছিত হয়েছেন ৩৯ জন, হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন ৩০ জন, গ্রেপ্তার হয়েছেন ৩ জন। সাইবার নিরাপত্তা আইনের ১৯টি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ১২ সাংবাদিক। এ ছাড়া আরও ৬২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
সংখ্যালঘুদের ওপর আঘাত
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ৬ মাসে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর ২৬টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন ২২ জন। এ ছাড়া বিভিন্ন ঘটনায় সংখালঘু সম্প্রদায়ের ৬ জন নিহত হয়েছেন। মাদারীপুরের কালকিনিতে বেদে সম্প্রদায়ের অন্তত ২০টি ঘরবাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।
নারী ও শিশু নির্যাতন
গত ৬ মাসে ৯১৭ নারী ও মেয়েশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে এইচআরএসএসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৩৪৩ জন। তাঁদের মধ্যে ১৮৯ জনের বয়স ১৮ বছরের কম। ধর্ষণের শিকার হওয়া নারী ও শিশুদের মধ্যে ৭৮ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ৬ জন। এ ছাড়া ৬ মাসে ২১৬ জন নারী ও মেয়েশিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। এ সময় যৌতুকের জন্য ৬০টি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ৩০ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া নির্যাতনের শিকার ৪ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন।