চট্টগ্রামে দ্রুত ট্রাইব্যুনালে মামলা কম, অন্য আদালতে পাহাড়

দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে বিচারাধীন মামলা ৯৯টি। অন্য ৭০টি আদালতে ফৌজদারি মামলা বিচারাধীন ১,৫০,০৪৯টি।

আদালত ভবন, চট্টগ্রামফাইল ছবি

চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৯৯। অথচ চট্টগ্রামের অন্য আদালতগুলোয় বছরের পর বছর ঝুলে আছে লক্ষাধিক মামলা। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এত কম মামলা আসায় বিচার প্রার্থীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে।

দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য মামলা আসে দুই ভাবে। চাঞ্চল্যকর ও রোমহর্ষ মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য প্রথমে মনিটরিং কমিটি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠায়। সেখান থেকে যায় আইন মন্ত্রণালয়ে। এরপর প্রজ্ঞাপন জারি করে এগুলো দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। এসব মামলাকে বলা হয় প্রজ্ঞাপনের মামলা। চট্টগ্রাম দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে এ ধরনের মামলা বিচারাধীন আছে মাত্র ১০টি।

এর বাইরে জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকেও আলোচিত মামলা আসে ট্রাইব্যুনালে। ২০১৫ সালের নভেম্বরে সরকার প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালকে বিশেষ দায়রা আদালত ঘোষণা করেছে। এর ফলে সরাসরি বিচারের জন্য জেলা ও মহানগর দায়রা জজ আদালত চাঞ্চল্যকর ও পুরোনো মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠাতে পারেন। ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে এ ধরনের বিচারাধীন মামলা সংখ্যা ৮৯।

চট্টগ্রামে মোট ৯৪টি আদালত রয়েছে। এর মধ্যে ফৌজদারি মামলার বিচার হয় ৭০টিতে। এই ৭০ আদালতে বর্তমানে ফৌজদারি মামলা বিচারাধীন রয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার ৪৯টি।

চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলার চাঞ্চল্যকর মামলাগুলো দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য আসে। ট্রাইব্যুনালে ১৩৫ কার্যদিবসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। চাঞ্চল্যকর হত্যা, ধর্ষণ, আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক দ্রব্য ও মাদকদ্রব্য-সংক্রান্ত অপরাধের মামলার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে ২০০২ সালে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন পাস হয়।

ট্রাইব্যুনালে মামলা কম আসছে কেন—জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি অশোক কুমার দাস প্রথম আলোকে বলেন, জেলা চাঞ্চল্যকর মামলার মনিটরিং কমিটিকে ট্রাইব্যুনালে নতুন মামলা পাঠাতে বলা হয়েছে। বর্তমানে যেসব মামলা রয়েছে, সেগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য চেষ্টা রয়েছে। কোনো সাক্ষীকে ফেরত দেওয়া হচ্ছে না। তিনি নিজেও ওই কমিটির সদস্য।

কমিটির আরেক সদস্য চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আবদুর রশিদ বলেন, গত মাসের সভায় মামলা পাঠানোর বিষয়ে কথা হয়েছে। কমিটি ১৫–১৬টি মামলা পাঠালেও এর মধ্যে মাত্র ২–৩টির ক্ষেত্রে প্রজ্ঞাপন জারি হয়।

ট্রাইব্যুনাল সূত্র জানায়, এখানে প্রজ্ঞাপন হয়ে আসা মাত্র ১০টি মামলার বিচার চলছে। এর মধ্যে কুমিল্লার দুটি মামলা আসে চলতি মাসের শুরুতে। এর আগে এক বছরে প্রজ্ঞাপন হয়ে নতুন মামলা আসেনি। প্রজ্ঞাপন ছাড়া জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে আসা ৮৯ মামলার বিচারকাজ চলছে। এসব মামলা হত্যা ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা।

বাঁশখালীর ১১ জনকে পুড়িয়ে মারার মামলা, আনোয়ারা তালসরা দরবারের র‍্যাবের কোটি টাকা লুটের মামলা, ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন হত্যা, চট্টগ্রাম বন্দরে কোকেন জব্দের মামলা, ছাত্রলীগের নেতা সুদীপ্ত হত্যাসহ আলোচিত মামলাগুলো নেই ট্রাইব্যুনালে।

১১ হত্যা মামলার বাদী বিমল শীল বলেন, ‘২০ বছর ধরে থানা-পুলিশ ও আদালতের বারান্দায় ঘুরছি। এখনো বিচার পাইনি। মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নিয়ে দ্রুত নিষ্পত্তি করা হোক।’

ছেলে খুনের বিচার সাত বছরেও শেষ না হওয়ায় হতাশ সুদীপ্ত বিশ্বাসের বাবা অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক মেঘনাথ বিশ্বাস। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জলজ্যান্ত ছেলেকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হলো। ছেলে হত্যার বিচার যাতে দেখে যেতে পারি, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য বারবার বলা হলেও কাজ হচ্ছে না।

বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা কমাতে ও অপরাধীদের বিচার দ্রুত করতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে শিগগিরই আরও মামলা পাঠানো প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন চৌধুরী। জেলা মনিটরিং কমিটিকে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।