রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে দুদকের অভিযানে ‘আর্থিক অনিয়মের চিত্র’

আজ বৃহস্পতিবার রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর চট্টগ্রাম নগরের সিআরবিতে অভিযান চালায় দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিমছবি: দুদকের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

গুদামের একটি কক্ষ মেরামতে খরচ করা হয়েছে ২ কোটি ৬২ লাখ টাকা। অথচ এর চেয়ে অনেক কম খরচে ওই ধরনের নতুন কক্ষ নির্মাণ করা যেত। আবার যন্ত্রপাতির জন্য যে দর নির্ধারণ করা হয়েছিল, তার চেয়ে ১৮ লাখ টাকা বেশি দামে কেনা হয়েছে। এভাবে ৮ থেকে ১৫ গুণ বেশি দামে যন্ত্রপাতি ও এলইডি বাতি কিনেছে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল।

আজ বৃহস্পতিবার রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর চট্টগ্রাম নগরের সিআরবিতে অভিযান চালিয়ে এমন আর্থিক অসংগতি পাওয়ার কথা জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তারা।

দুদক সূত্র জানায়, জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় হিসেবে পরিচিত আরঅ্যান্ডআই শাখার একটি গুদাম মেরামতের নামে ব্যয় করা হয়েছে ২ কোটি ৬২ লাখ টাকা। অথচ এই ধরনের গুদাম মেরামতে এই বিপুল অর্থ খরচ হওয়ার কথা নয় বলে জানান দুদকের কর্মকর্তারা।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে যন্ত্রপাতি বাড়তি দামে কেনার অভিযোগের জের ধরে এই অভিযান পরিচালনা করা হয় বলে সাংবাদিকদের জানান দুদকের সহকারী পরিচালক এনামুল হক। তিনি বলেন, ওই অর্থবছরে ড্রিলিং মেশিন, কাটিং মেশিন, লিফটিং জ্যাক, এলইডি বাতি, ওয়াকিটকিসহ বেশ কিছু যন্ত্রপাতি কেনা হয়। এগুলো কেনা হয়েছে বাজারদরের চেয়ে ৮ থেকে ১৫ গুণ বেশি দরে। বিশেষ করে ড্রিলিং মেশিন, লিফটিং জ্যাক ও কাটিং ডিস্ক কেনা হয়েছে ২৮টি। এগুলোর জন্য বাজারদর কমিটির নির্ধারিত দাম ছিল ১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। কিন্তু কেনা হয়েছে ১ কোটি ৯৭ লাখ টাকায়। অর্থাৎ ১৮ লাখ টাকা বেশি দামে। আবার একটি কক্ষ মেরামতের জন্য খরচ করা হয়েছে ২ কোটি ৬২ লাখ টাকা। একটি এলইডি বাতি কেনা হয়েছে ২৭ হাজার ৭০০ টাকায়। এগুলোর বাজারদর কত, তা যাচাই করা হবে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তরে গিয়ে জিনিসপত্র কেনাকাটার তথ্য যাচাই–বাছাই করেন দুদকের কর্মকর্তারা
ছবি: দুদকের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

এনামুল হক বলেন, কেনাকাটা–সংক্রান্ত কিছু কাগজপত্র তাঁরা সংগ্রহ করেছেন। কিছু কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। সবকিছু পর্যালোচনা করে কমিশনে প্রতিবেদন দেবেন তাঁরা।

দুদক সূত্র জানায়, ড্রিলিং, কাটিং মেশিন ও লিফটিং জ্যাক সরবরাহ করেছে নূর এলাহী ব্রাদার্স এবং বাতি দিয়েছে অর্ণব কনস্ট্রাকশন।

রেলওয়ের ট্র্যাক সাপ্লাই কর্মকর্তা (টিএসও) আরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুদকের কর্মকর্তারা এসেছিলেন। আগে কেনা কিছু যন্ত্রপাতির ব্যাপারে তথ্য চেয়েছেন। তাঁরা যেসব যন্ত্রপাতির তথ্য চেয়েছেন, তা ২০১৮ সালের দিকে কেনা। এসব যন্ত্রপাতি বেশি দামে কেনা হয়েছে কি না, তা এখনো প্রমাণিত নয়।

রেলওয়ের কেনাকাটার অনিয়ম নিয়ে গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোতে ‘বাজারে পাওয়া যায় ১৯ হাজার টাকায়, রেল কিনল ৩ লাখে’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।২০১৮–১৯ অর্থবছরে কেনাকাটায় অনিয়ম ও আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি অবশ্য ধরা পড়ে ২০২০ সালে। কেনাকাটায় অনিয়মের এই বিষয় নিয়ে সরকারের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক কার্যালয় (সিএজি) গত জুন মাসে প্রতিবেদন দিয়েছে।