উন্নয়ন প্রকল্পে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে সরকার: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ফাইল ছবি: বাসস

দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে সরকারকে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে প্রকল্পগুলো শেষ করেছে সরকার। আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে মেট্রোরেল প্রসঙ্গে আলোচনার সময় এসব কথা বলেন তিনি।

এ সময় মেট্রোরেলে ভ্রমণে যাত্রীদের নিয়ম ও নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সকল যাত্রীর কাছে আমার অনুরোধ, ভ্রমণের সময় মেট্রোরেলের নিয়ম ও নির্দেশিকা মেনে চলুন। এটি একটি আধুনিক প্রযুক্তিভিত্তিক ট্রেন। সুতরাং প্রত্যেকেরই এটি ব্যবহারে সতর্ক হওয়া উচিত।’

বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে বিশেষ করে সংসদ ভবন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যেসব চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছিল, সে বিষয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা যেকোনো কাজে (উন্নয়ন প্রকল্প) যাওয়ার সময় চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি হয়েছিল। আমরা সমস্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে প্রকল্পগুলি সম্পন্ন করেছি।’

মেট্রোরেল প্রকল্প সম্পর্কে সরকারপ্রধান বলেন, ‘সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় প্রাথমিকভাবে বিজয় সরণির মধ্য দিয়ে মেট্রোরেল রুট তৈরি করা হয়েছিল, যেখানে আমার ঘোর আপত্তি ছিল।’ তিনি বলেন, ‘তাহলে আমাদের তেজগাঁও বিমানবন্দর বন্ধ করে দিতে হবে, যেটির ৯ হাজার ফুট দীর্ঘ রানওয়ে রয়েছে। একটা তৈরি করা এয়ারপোর্ট, সেটা কখনো নষ্ট হোক আমি চাইনি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৮ সালের বন্যায় কুর্মিটোলা বিমানবন্দর বন্যার পানিতে চলে যাওয়ায় সব ত্রাণসামগ্রী এই বিমানবন্দর দিয়ে এসেছিল। তা ছাড়া এখানে ঘন কুয়াশায় কখনো কখনো বিমান চলাচলে ব্যবহৃত হয়। গতকালও সাতটি প্লেন কলকাতায় চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু তেজগাঁও বিমানবন্দরটা কখনো বন্যাকবলিত হয় না এবং এখানে কুয়াশার পরিমাণটাও খুব কম। কিন্তু এই এয়ারপোর্টকে বন্ধ করে দিয়ে এখানে হাউজিং নির্মাণের প্রস্তাবও আমাদের অনেক জ্ঞানী-গুণীরা দিয়েছিলেন।’

সরকার যখন প্ল্যানেটরিয়ামের জন্য ডিজাইন করেছিল, তখন এর গম্বুজটা অনেক ওপরে করার কথা ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সেই উচ্চতা কমিয়েছি। যদি উচ্চতা ৬০-৭০ ফুট অতিক্রম করে তবে এটি (তেজগাঁও বিমানবন্দরের) এয়ার ফানেলে পড়ে যাবে। বিমান ওঠানামার জায়গাটা কিন্তু রাখতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেন, ‘যদি পুরোনো অ্যালাইনমেন্ট কার্যকর করা হয় তবে সরকারকে ২২টি ভবন ভেঙে ফেলতে হতো এবং সে কারণেই আমি খামারবাড়ি এলাকা ব্যবহার করে নতুন রুট প্রস্তাব করেছি। যদিও আমাদের আঁতেল শ্রেণির তীব্র আপত্তি ছিল সংসদ ভবন নাকি ধ্বংস হয়ে যাবে, খেজুরবাগান নষ্ট হবে। তা ছাড়া এই খেজুরবাগান আমাদেরই লাগানো ছিল।’

শেখ হাসিনা জানান, তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত মেট্রোরেল রুট সম্প্রসারণ করেছেন। তিনি বলেন, সেই সময় মেট্রোরেলের জন্য কমলাপুর রেলস্টেশনটি তার বাঁক এবং অবতরণের জায়গার জন্য ভেঙে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বলেছিলেন, এত বড় স্টেশন ভেঙে আরেকটি নির্মাণ করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।

‘আমি তাঁদের জিজ্ঞাসা করেছি, স্টেশনটিকে অক্ষত রেখে আমরা কীভাবে এটি করতে পারি। প্রয়োজনে মেট্রোরেল স্টেশনের ওপর দিয়ে যাবে বা তার বাঁক নেওয়ার জন্য অন্য জায়গা খুঁজে নেবে। এখন এটি সেভাবে বাস্তবায়ন করছে,’ বলেন সরকারপ্রধান।

শেখ হাসিনা আরও উল্লেখ করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মেট্রোরেল প্রকল্প বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিবেশ নষ্ট করবে বলে শিক্ষার্থীরা বাধা দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি তাঁদের আশ্বস্ত করেছি যে মেট্রোরেলের কারণে তাঁরা কোনো ঝামেলার সম্মুখীন হবেন না। কারণ, এটি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার একটি কোণ দিয়ে যাবে, যার কোনো শব্দ থাকবে না, স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলবে।’

‘হোলি আর্টিজান আক্রমণের পরে এটির (মেট্রোরেল) কাজ বন্ধ করা হয়েছিল, যেখানে এই প্রকল্পের সাথে জড়িত সাত জাপানি পরামর্শক নিহত হয়েছিলেন’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই সময়ে সব জাপানি তাঁদের স্বদেশে ফিরে গিয়েছিলেন এবং তিনি জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের কাছে সমবেদনা প্রকাশ করেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একই সঙ্গে জাপান সফরে সময় তিনি নিহত সাতজন জাপানি কর্মকর্তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার পাশাপাশি যা যা করণীয় তা তাঁর সরকার করেছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জাপান সরকার তাঁর অনুরোধ বিবেচনায় নেয়।

কোভিড-১৯ মহামারির সময় মেট্রোরেল প্রকল্প বন্ধ হয়ে গিয়েছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই সময় ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম ব্যবহার করে আমাদের প্রকৌশলীরা কাজটি ধীরে ধীরে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।’

পদ্মা সেতু নিয়েও ঢালাও সমালোচনা হয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই সেতুতে কে উঠবে আর কোথা থেকে এর টাকা উঠবে, যাঁরা বলেছিল তাঁদের বলতে চাই, ইতিমধ্যে কয়েক মাসের মধ্যে ৪০০ কোটি টাকা উঠে গেছে। আসলে প্রতিটি কাজে বাধা দেওয়াটা আমাদের কিছু মানুষের চরিত্র।’

যাত্রী ও হজযাত্রীদের সুবিধার্থে বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে বিমানবন্দরে যাওয়ার জন্য একটি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আন্ডারপাসে বিনা ঝামেলায় চলাচলের জন্য আধুনিক সব সুবিধার ব্যবস্থা করব।’