দেশের ইতিহাসে এবারই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত

চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ১ লাখ ২ হাজার ১৯১ জন এবং মৃত্যু ৪৮৫।

এডিস মশা
ফাইল ছবি

দেশের ইতিহাসে এ বছর সবচেয়ে বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। ডেঙ্গুর মৌসুম এখনো চলছে, বছর শেষ হতে চার মাসের বেশি বাকি। ফলে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও উদ্বিগ্ন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, গত রোববার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ২ হাজার ১৯৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১ লাখ ২ হাজার ১৯১। ২০০০ সালে দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর গত ২২ বছরে এত রোগী আগে আর কোনো বছর দেখা যায়নি। এর আগে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয় ২০১৯ সালে। ওই বছর রোগীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪।

আক্রান্তের পাশাপাশি এ বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুও বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ৪৮৫। ডেঙ্গুতে এত বেশি মৃত্যু অতীতে হয়নি। এর আগে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছিল গত বছর। গত বছর ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ২৮১ জন। এ বছর ডেঙ্গুতে ঢাকা শহরের হাসপাতালগুলোতে মারা গেছেন ৩৬৩ জন এবং ঢাকার বাইরে মারা গেছেন ১২২ জন।

এবার ডেঙ্গুতে শিশুমৃত্যুও অনেক বেশি। ইতিমধ্যে ১৮ বছরের কম বয়সী ৯২ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মোট মৃত্যুর ১৯ শতাংশই শিশু। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, এর ৪৩ শতাংশ পুরুষ এবং ৫৭ শতাংশ নারী। নারীরা আক্রান্ত কম হলেও তাঁদের মৃত্যুহার বেশি।

এখন কী পরিস্থিতি

এ বছরের প্রথম সাত মাসে (৩১ জুলাই পর্যন্ত) দেশে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় ৫১ হাজার ৮৩২ জন। আর চলতি আগস্ট মাসের প্রথম ২১ দিনেই রোগী সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। বছরের এখনো চার মাসের বেশি সময় বাকি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা এ বছরের শুরুর দিকে জরিপ করে বলেছিল, ঢাকা শহরের বেশ কয়েকটি স্থানে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার লার্ভা গত বছরের চেয়ে বেশি পাওয়া গেছে। এর অর্থ ডেঙ্গুর ঝুঁকি বেশি। কিন্তু মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সফলতা দেখাতে পারেনি।

শুধু তা–ই নয়, ডেঙ্গু এবার অতিদ্রুত দেশের ৬৪ জেলায় ছড়িয়েছে। আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা ঢাকা শহরের চেয়ে এখন ঢাকার বাইরে বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ঢাকা শহরে রোগী ভর্তি হয়েছেন ৪৯ হাজার ৩২৮ জন। আর ঢাকার বাইরে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ৫২ হাজার ৮৬৩। এর অর্থ ঢাকার বাইরেও মশা নিয়ন্ত্রণের কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। গত শনিবার ঢাকায় কীটতত্ত্ববিদদের এক অনুষ্ঠানে বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে এবং মশা নিয়ন্ত্রণের নামে দেশে তামাশা চলছে।

পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে বা কবে নাগাদ সংক্রমণ কমে আসবে, তা সঠিকভাবে কারও পক্ষে বলা সম্ভব হচ্ছে না। সাধারণত আগস্ট–সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি থাকে। ফলে পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কিত জনস্বাস্থ্যবিদেরা।

এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক বে–নজির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের প্রাকৃতিক পরিণতির জন্য অপেক্ষা করতে হবে। অর্থাৎ বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রা পরিবর্তনের কারণে মশা কমলে ডেঙ্গুও কমবে।’