‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে আজ সোমবার দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেছেন সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। এ নিয়ে তাঁদের এ আন্দোলন এক মাসে গড়াল।
অধ্যাদেশটিকে ‘কালো আইন’ আখ্যা দিয়ে বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আন্দোলনকারী কর্মচারীরা। এ বিষয়ে ‘ভালো খবর আসবে’ বলে আশা করছেন তাঁরা।
সচিবালয় রাষ্ট্রের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর (কেপিআই) একটি। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত এই সচিবালয় থেকেই প্রধানত সারা দেশে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তগুলো যায়। এমন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ জায়গার ভেতরে এত দিন ধরে কর্মচারীরা আন্দোলন করলেও এখনো এ বিষয়ে কার্যকর কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সরকার। অথচ সরকারের দুই উপদেষ্টাই বলেছেন, এই অধ্যাদেশের কিছু ক্ষেত্রে অপব্যবহারের আশঙ্কা আছে।
অধ্যাদেশটি নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনায় সরকার একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেছে। কর্মচারী নেতারা জানিয়েছেন, কমিটি আজ বিকেলে ঐক্য ফোরামের তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেছে। এই তিন প্রতিনিধি হলেন, ঐক্য ফোরামের কো–চেয়ারম্যান মুহা. নুরুল ইসলাম ও আরেক কো-চেয়ারম্যান মো. বাদীউল কবীর এবং কো–মহাসচিব নজরুল ইসলাম। ওই বৈঠকে কমিটির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন কমিটি প্রধান আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, সদস্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানসহ কয়েকজন সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
বৈঠকে ঘণ্টাব্যাপী আলাপ-আলোচনা করা হয়। কমিটির সদস্যদের জিজ্ঞাসার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারির ফলে কর্মচারীদের ক্ষোভের কারণগুলো তুলে ধরেন ঐক্য ফোরামের প্রতিনিধিরা। বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মচারীনেতা প্রথম আলোকে বলেন, এ নিয়ে তাঁদের সঙ্গে আবারও আলোচনা হবে।
কিছুদিন আগে এ কমিটির প্রধান আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, তাঁর কাছে মনে হয়েছে, অবশ্যই কিছু কিছু জায়গায় অধ্যাদেশটির পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে।
সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ বাতিলের দাবিতে গত ২৪ মে থেকে আন্দোলন করছেন সচিবালয়ে কর্মরত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। আন্দোলন চলার মধ্যেই ২৫ মে অধ্যাদেশটি জারি করে সরকার। এর পর থেকে বিক্ষোভ, কর্মবিরতি ও উপদেষ্টাদের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার মতো কর্মসূচি পালন করছেন কর্মচারীরা। আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের ডাকে এ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি শেষে অফিস খোলার ১ দিন পর ১৬ জুন থেকে আন্দোলনকারী কর্মচারীরা আবার সচিবালয়ের ভেতর টানা বিক্ষোভ করে আসছেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজ বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেন তাঁরা।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে আন্দোলনকারীরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অবস্থিত সচিবালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে অবস্থান নিয়ে অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে বক্তব্য দেন।
‘ভালো খবর আসবে’ এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো–চেয়ারম্যান বাদিউল কবীর। তিনি জানান, আগামীকাল মঙ্গলবার গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করবেন তাঁরা। আরও বক্তব্য দেন ফোরামের আরেক কো–চেয়ারম্যান মুহা. নুরুল ইসলাম, কো–মহাসচিব নজরুল ইসলাম প্রমুখ।