ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন
অধ্যাপক তানজীমের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ নেতার অভিযোগ মিথ্যা, বললেন শিক্ষার্থীরা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থীরা এবার অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খানের পক্ষে মানববন্ধন করেছেন। সেখানে তাঁরা বলেছেন, তাঁদের শিক্ষকের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। পুরো ঘটনায় তাঁর আচরণ খুবই শিক্ষকসুলভ ও দায়িত্বশীল ছিল।
‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’র ব্যানারে আজ রোববার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে এ মানববন্ধন হয়। ‘আত্মহত্যার সাজানো ঘটনা ও তানজীমউদ্দিন খানের প্রতি অপবাদের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ ও মানববন্ধন’ শীর্ষক এ কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে অংশ নেন শিক্ষকেরাও।
এর আগে গতকাল শনিবার এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ৭২ জন শিক্ষার্থী বলেন, একজন ছাত্রীকে হয়রানির হাত থেকে রক্ষা করতে একজন সচেতন শিক্ষকের যে ভূমিকা পালন করার কথা, তিনি (তানজীমউদ্দিন) তা-ই করেছেন।
যৌন হয়রানির শিকার একজন শিক্ষার্থীর পক্ষে যদি আমি না দাঁড়াতে পারি, তাহলে আমার শিক্ষক হওয়ার নীতিগত কোনো অধিকার নেই। তাঁর (তানজীমউদ্দিন) কাছে যেহেতু অভিযোগ এসেছে, তিনি যদি সেই দায়িত্ব পালন করে দোষী হন, তাহলে তোমরাও (শিক্ষার্থী) দোষী, আমরাও দোষী।তানভীর হাবীব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রভাষক
গত বৃহস্পতিবার রাতে ফেসবুকে আত্মহত্যার ইঙ্গিতমূলক একটি পোস্ট দেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের প্রশিক্ষণবিষয়ক উপসম্পাদক এস এম এহসান উল্লাহ ওরফে ধ্রুব। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র তিনি। পোস্টে তিনি অধ্যাপক তানজীমের বিরুদ্ধে তাঁর সঙ্গে অন্যায় করা ও অপমানজনক আচরণের অভিযোগ তোলেন।
এই স্ট্যাটাসের পর এহসান নিখোঁজ হন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসানের অনুসারী একদল নেতা-কর্মী এই ‘অপমানের’ জন্য শিক্ষকের বিচার চেয়ে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত একটা থেকে ঘণ্টা দুয়েক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের বাসভবনের সামনে অবস্থান করেন।
বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হলের পুকুরপাড় থেকে অচেতন অবস্থায় এহসান উদ্ধার হন। ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করা এই ছাত্রলীগ নেতাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখন তিনি সুস্থ আছেন। তাঁকে উদ্ধার করার সময়ের ছবি পোস্ট করে ওই দিন রাতেই ছাত্রলীগের নেতা তানভীর হাসান ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘আমার ভাইয়ের কিছু হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ছাত্রলীগেরও রক্তের মূল্য আছে। প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে রক্তের মূল্য আদায় হবে। জয় বাংলা।’
এ ঘটনা নিয়ে আজ সকালে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে ডাকা মানববন্ধনে দুই শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী অংশ নেন। সেখানে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রভাষক তানভীর হাবীব বলেন, ‘যৌন হয়রানির শিকার একজন শিক্ষার্থীর পক্ষে যদি আমি না দাঁড়াতে পারি, তাহলে আমার শিক্ষক হওয়ার নীতিগত কোনো অধিকার নেই। তাঁর (তানজীমউদ্দিন) কাছে যেহেতু অভিযোগ এসেছে, তিনি যদি সেই দায়িত্ব পালন করে দোষী হন, তাহলে তোমরাও (শিক্ষার্থী) দোষী, আমরাও দোষী।’
বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এক ছাত্রী বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। পুরো ঘটনায় আমাদের শিক্ষকের আচরণ খুবই শিক্ষকসুলভ ও দায়িত্বশীল ছিল। আমরা যেহেতু সেদিন ক্লাসে ছিলাম, তাই এহসানের তোলা সব ধরনের অভিযোগের বিরুদ্ধে অবস্থান করছি। সত্যটা উদ্ঘাটন হোক। সবাই যেন সত্যের পক্ষে থাকে, সেটাই আমাদের চাওয়া।’
একই বর্ষের এক ছাত্র অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের যে সহপাঠী আত্মহত্যার নাটক করেছে, তার বিরুদ্ধে অনেক আগে থেকেই নানা অভিযোগ ছিল। সে প্রথম বর্ষ থেকেই একজন শিক্ষার্থীকে মানসিক পীড়া দিয়ে এসেছে। সেই সহপাঠী নানা ধরনের ভয়ের কারণে কোনো অভিযোগ করতে পারেনি। এ ছাড়া আরও দু-তিনজন মেয়েকে মানসিক পীড়া দিয়ে এসেছে সে। কখনোই সেই শিক্ষার্থীরা ভয় বা সামাজিক অবস্থানের জন্য মুখ খোলেনি।’
এই ছাত্র আরও বলেন, ‘আমরা তার এসব কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবগত ছিলাম। সে এমন একটা নাটক সাজিয়ে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য এমন কিছু করবে, তা আমাদের ভাবনার অতীত ছিল। আমরা এর নিন্দা জানাই। যে ছাত্রসংগঠনকে সে ব্যবহার করে স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করেছে, সেই সংগঠনকে আমাদের কাছ থেকে সত্য জানার অনুরোধ করছি।’
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মানববন্ধনে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মো. আবদুল মান্নান, সহকারী অধ্যাপক মো. আলী সিদ্দিকী, প্রভাষক সামিয়া জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।