টাকার বাক্স খুঁজছিলেন কেউ কেউ
টাকা রাখার একটি বাক্স। একটি শিশু বাক্সটি খোলার চেষ্টা করল। গরম লাগায় দ্রুত হাত সরিয়ে নিল। পরে এল এক কিশোর। সে অবশ্য খুলে ফেলল। তবে বাক্সটি একদম ফাঁকা। হয়তো আগেই আরেকজন সেই বাক্স খুলে ফেলেছিল।
বঙ্গবাজারের পশ্চিমে ইসলামিয়া মার্কেটের সামনে এ দৃশ্য দেখা গেল মঙ্গলবার বিকেলে। পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন মো. শাহাদাত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক দোকানি তাঁর পাঁচ লাখ টাকার ক্যাশ বাক্স (টাকার বাক্স) নিয়ে গেছে। তবে সব টাকা পোড়া ছিল। এ রকম টাকা পাওয়ার আশায় অনেকেই এখন বাক্স খুঁজছে।’
রাজধানীর বঙ্গবাজারে আগুন লেগে মঙ্গলবার প্রায় পাঁচ হাজার দোকান পুড়ে যায়। বেলা তিনটার পর দেখা যায়, সেই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে এভাবে কেউ কেউ ক্যাশ বাক্স খুঁজছেন। কেউ আধপোড়া কাপড় কুড়িয়ে নিচ্ছেন। কেউবা লোহালক্কড় ঝুলিতে পুরছেন। তাঁরা ব্যবসায়ী বা দোকানের কর্মী নন, আশপাশের ছিন্নমূল মানুষ।
বঙ্গবাজারের গুলিস্তান মার্কেটের এফ এন ফ্রেন্ডস হাউসের মালিক ফরিদ মিয়া জানালেন, তাঁর ক্যাশ বাক্সে ২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা ছিল। টাকাগুলো পুড়ে গেছে। পুড়ে গেছে তাঁর দোকানের ৩০ লাখ টাকার মালামালও।
গিয়েই–বা কী করব? আর থেকেও লাভ নাই। সবই তো ছাই। তারপরও বসে আছিমো. তুহিন, গুলিস্তান মার্কেটের ব্যবসায়ী
এই আগুনে বহু মানুষ নিঃস্ব হয়েছেন। আগুনে বঙ্গবাজার, গুলিস্তান মার্কেট, মহানগর মার্কেট ও আদর্শ মার্কেট পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এখন এটি যেন ধ্বংসস্তূপের এক বড় মাঠ। সেই মাঠে পোড়া টিন, লোহা, কাঠ, কয়লা পড়ে আছে।
বঙ্গবাজারের পশ্চিমে ইসলামিয়া মার্কেট, হোমিও কমপ্লেক্স ও বরিশাল প্লাজাও পুড়েছে। তবে সেগুলো বঙ্গবাজারের চারটি মার্কেটের মতো মাটির সঙ্গে মিশে যায়নি।
বঙ্গবাজারের উত্তরের মহানগর কমপ্লেক্সও পুড়ে শেষ। মহানগর কমপ্লেক্সের পাশের এনেক্সকো টাওয়ার পুড়েছে।
আর বঙ্গবাজারের দক্ষিণ দিকে হানিফ ফ্লাইওভার। তার পাশে ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তর। তবে সেগুলোর কোনো ক্ষতি হয়নি। পূর্ব পাশে পুলিশ সদর দপ্তর। এখনাকার ভবন হালকা পুড়েছে।
বিকেল পৌনে চারটার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আগুনে পুড়ে যাওয়া এলাকা থেকে সাধারণ মানুষদের বের করে দিচ্ছিলেন। তখন ইসলামিয়া মার্কেট ঘেঁষে একটু উঁচু জায়গায় বসে ছিলেন মো. তুহিন। গুলিস্তান মার্কেটে তাঁর একটি দোকান ছিল। এখন সব ছাই। তুহিন বলেন, ‘গিয়েই–বা কী করব? আর থেকেও লাভ নাই। সবই তো ছাই। তারপরও বসে আছি।’