শুধু মেয়েসন্তান থাকলে সম্পত্তি কীভাবে ভাগ হবে

বকুল সাহেবের একটিমাত্র মেয়ে। মেয়েটি প্রাপ্তবয়স্ক হলেও তাঁর বিয়ে হয়নি। বকুল সাহেব উত্তরাধিকারসূত্রে অঢেল সম্পত্তির মালিক। তাঁর এক ভাই এবং ভাইয়ের ছেলে আছে। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে তাঁর বনিবনা হয় না। তিনি শুনেছেন উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী ছেলে না থাকলে বাবার মৃত্যুর পর মেয়ে সম্পত্তির অর্ধেক পেয়ে থাকে। বাকি সম্পত্তি তাঁর ভাই বা ভাইয়ের ছেলেরা পায়। বকুল সাহেব চান না, তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর ভাই বা ভাইয়ের ছেলেরা এ সম্পত্তির দাবিদার হোক। তাঁর ইচ্ছা, একমাত্র মেয়েই তার সব সম্পত্তির মালিক হবে।

বকুল সাহেবের মতো যাদের শুধু কন্যাসন্তান আছে, এ রকম অনেক বাবাই চিন্তায় থাকেন তাঁদের অবর্তমানে সম্পত্তি কীভাবে তাঁর কন্যারা পাবে। জেনে নেওয়া যাক, মুসলিম পারিবারিক আইনে এ সম্পর্কে কী বলা হয়েছে।

সম্পত্তির ভাগ কীভাবে

মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী, মৃত ব্যক্তির মেয়েই যদি একমাত্র সন্তান হন, তাহলে সেই মেয়ে মোট সম্পত্তির অর্ধেক পাবে। যদি একাধিক মেয়ে থাকে এবং ছেলে না থাকে, মেয়েরা মোট সম্পত্তির দুই–তৃতীয়াংশ পাবে এবং এ অংশ সব মেয়ের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ হবে। বাকি সম্পত্তি অন্যরা পাবে।

বাবার মৃত্যুর সময় যদি তাঁর স্ত্রী অর্থাৎ মেয়ের মা বেঁচে না থাকেন, তাহলে তাদের পুরো সম্পত্তির অর্ধেক তাঁর মেয়ে পাবে। তাঁর মেয়ে অর্ধেক পাওয়ার পর বাকি সম্পত্তি অন্য ওয়ারিশরা পাবে। যদি স্ত্রী বেঁচে থাকেন, তাহলে তাঁর স্ত্রী সম্পত্তির এক–অষ্টমাংশ পাবে এবং মেয়ে সম্পত্তির অর্ধেক পাবে এবং বাকি সম্পত্তি অন্যরা পাবে।

অলংকরণ: তুলি

যদি স্ত্রী বেঁচে থাকেন এবং একাধিক মেয়ে থাকে এবং কোনো ছেলে না থাকে, তাহলে মেয়েরা সম্পত্তির দুই–তৃতীয়াংশ পায়। মৃত ব্যক্তির এক বা একাধিক মেয়ে থাকলে এবং তাঁর ভাই, বোন জীবিত না থাকলে, ভাই বা বোনের ছেলেরা ক্রমান্বয়ে সম্পত্তির ভাগ পায়। আপন ভাই বা বোন না থাকলে সৎভাই, সৎবোন (যারা অন্য মায়ের সন্তান) কিংবা তারা না থাকলে সৎভাইয়ের পুত্র থাকলেও অবশিষ্টভোগী হিসেবে তারাও সম্পত্তির ভাগ পাবে। মৃত ব্যক্তির বাবা কিংবা মা জীবিত থাকলে কন্যাসন্তানের পাশাপাশি বাবা, মা এক–তৃতীয়াংশ পায়। মৃত ব্যক্তির অন্য কোনো ধরনের ওয়ারিশ না থাকলে তখনই কেবল কন্যা বা কন্যারা পুরো সম্পত্তি পাবে।

অলংকরণ: তুলি

মেয়েকে আগেই দান করা যাবে

ছেলে না থাকলে কেউ তাঁর এক বা একাধিক মেয়েকে জীবিত অবস্থায় সম্পত্তি হেবা বা দান করে যেতে পারেন। তবে এ দান করতে হবে যথাযথ উপায়ে এবং দানের সব আইন মেনে। যেমন দানটি অবশ্যই ঘোষিত হতে হবে। দ্বিতীয়ত, দানকৃত সম্পত্তি মেয়ের দখলে দিয়ে দিতে হবে বা হস্তান্তর করে দিতে হবে এবং দানের লিখিত দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্রি করতে হবে।

অপ্রাপ্তবয়স্ক কন্যাকেও দান করা যাবে। তবে সম্পত্তির দখল মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরই দিয়ে দিতে হবে। তবে মেয়েকে সম্পত্তি দিয়ে দেওয়া মানে এই নয় যে বাবা–মাকে সম্পত্তি ছেড়ে চলে যেতে হবে। বাবা–মা মেয়ের সঙ্গেই অবস্থান করতে পারবেন। আর মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিলে যদিও মেয়ের নামে সম্পত্তি থাকে, মেয়ের সম্পত্তিতে বাবা–মার বসবাস করতে আইনত কোনো বাধা নেই।

অনেককেই বলতে শোনা যায়, মেয়েকে উইল করে যাবে। মনে রাখতে হবে, মেয়েকে পুরো সম্পত্তির এক–তৃতীয়াংশের বেশি উইল করা যাবে না। এর বেশি উইল করলে অন্য উত্তরাধিকারীদের সম্মতি লাগবে। আর উইল কার্যকর হবে উইলকারীর মৃত্যুর পর। অনেকে মেয়ে বা মেয়েদের হেবা করে দিয়ে মেয়ের কাছে থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিলের মাধ্যম সম্পত্তি বিক্রি এবং তত্ত্বাবধান করার ক্ষমতা নিয়ে থাকে। এ ধরনের পাওয়ার অব অ্যাটর্নি হতে হবে রেজিস্ট্রিকৃত এবং সাবালক মেয়েদের সম্মতিতে।

তানজিম আল ইসলাম সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী