দেশেই ক্যানসার চিকিৎসাবিষয়ক আলোচনা
প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে কলোরেক্টাল ক্যানসার সহজেই নিরাময়যোগ্য
অধিকাংশ ক্যানসার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ নিরাময়যোগ্য। আর কলোরেক্টাল ক্যানসার জটিল বা ব্যয়বহুল নয়। তাই এ ক্যানসারে বাঁচার হার খুবই বেশি। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে এ ক্যানসার সহজে নিরাময়যোগ্য।
গত শনিবার (৮ মার্চ) এসকেএফ অনকোলজির আয়োজনে ‘বিশ্বমানের ক্যানসার চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় এ কথা উঠে আসে। অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হয় প্রথম আলো ডটকম এবং প্রথম আলো, এসকেএফ অনকোলজি ও এসকেএফের ফেসবুক পেজে।
মার্চ মাসকে ‘কলোরেক্টাল ক্যানসার সচেতনতার মাস’ হিসেবে পালন করা হয়। এর উদ্দেশ্য চারটি—সচেতনতাসহ এ ক্যানসার নিয়ে যাবতীয় ভ্রান্ত ধারণা দূরীকরণ; তাড়াতাড়ি শনাক্তকরণ; ডায়াগনসিসের গুরুত্ব ছড়িয়ে দেওয়া এবং রোগীদের মানসিক-নৈতিক ও মেডিকেল সহায়তা নিশ্চিত করা—অনুষ্ঠানের শুরুতেই কথাগুলো বলছিলেন উপস্থাপক নাসিহা তাহসিন।
অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিফ মেডিকেল অফিসার ও মেডিকেল অনকোলজিস্ট ডা. এ টি এম কামরুল হাসান। এ পর্বে আলোচনার বিষয় ছিল ‘কলোরেক্টাল ক্যানসার সচেতনতা’। বাংলাদেশে কলোরেক্টাল ক্যানসারের বর্তমান পরিস্থিতি, ডায়াগনসিস, আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা, সচেতনতা, প্রতিরোধব্যবস্থা এবং ক্যানসার রোগীদের সুস্থতায় করণীয় বিষয়ে পরামর্শ দেন ডা. এ টি এম কামরুল হাসান।
বাংলাদেশে কলোরেক্টাল ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার হারটা কেমন? উপস্থাপকের এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. এ টি এম কামরুল হাসান বলেন, ‘কোলন এবং রেক্টাল—দুটি অঙ্গকে একত্রে বলা হয় কলোরেক্টাল। সহজে পাকস্থলী, পায়ুপথ, ক্ষুদ্রান্ত্র এবং বৃহদন্ত্র মিলে হয় কলোরেক্টাল। ক্যানসারে আক্রান্তের তালিকায় বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে কলোরেক্টাল ক্যানসার, যা নারী-পুরুষ উভয়েরই হয়। বিশ্বে মৃত্যুর তালিকায় ক্যানসার দ্বিতীয় আর বাংলাদেশে আক্রান্ত ও মৃত্যুর তালিকায় তৃতীয়। বিশ্বে এ ধরনের ক্যানসার ৬০ বছর বয়সোর্ধ্বদের হয়ে থাকলেও বাংলাদেশে ৪০ বছরের কম বয়সীদেরও এটি হচ্ছে। যা আমাদের জন্য অশনিসংকেত। তাই সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন করা জরুরি।’
কলোরেক্টাল ক্যানসারের লক্ষণ প্রসঙ্গে ডা. এ টি এম কামরুল হাসান বলেন, ‘এর উপসর্গগুলো সেভাবে বোঝা যায় না। সে জন্যই অধিকাংশ রোগী অ্যাডভান্স পর্যায়ে আসেন। সাধারণত কোলনের ডান দিকে যদি অস্বাভাবিক কোনো গ্রোথ হয়, সে ক্ষেত্রে উপসর্গ হবে কোলনে অস্বস্তিকর ব্যথা, পেটে ব্যথা, ওজন ও রক্ত কমে যাওয়া, খাওয়ায় অরুচি ইত্যাদি। আর যদি কোলনের বাঁ দিকে হয়, সে ক্ষেত্রে পায়খানা বন্ধ হয়ে যায়, এর সঙ্গে রক্ত যায় ইত্যাদি। তবে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, সাধারণত আমরা একটা নির্দিষ্ট সময়ে টয়লেটে যাই। এ সময় যদি পরিবর্তিত হতে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে, কোলনে কোনো সমস্যা দেখা গেছে। সে ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’
এ ধরনের ক্যানসারের স্ক্রিনিং সম্পর্কে ডা. এ টি এম কামরুল হাসান বলেন, ‘৬০ বছরের বেশি বয়সীদের যদি উপসর্গগুলো থাকে, তাঁরা পাঁচ বছর অন্তর স্ক্রিনিং করবেন। আর যদি হাই রিস্কে থাকেন, অর্থাৎ বংশের কারও কলোরেক্টাল ক্যানসার ছিল, পূর্বে কোলনে যদি প্রদাহজনিত কোনো রোগ হয়ে থাকে ইত্যাদি ঝুঁকিসম্পন্ন ৪০ বছর বয়সী মানুষের ক্ষেত্রে প্রতিবছর স্ক্রিনিং করতে হয়।’
রিস্ক ফ্যাক্টরগুলো প্রসঙ্গে ডা. এ টি এম কামরুল হাসান বলেন, ‘খাদ্যাভ্যাসের কারণে এ ক্যানসার হতে পারে। যেমন প্রচুর পরিমাণে চর্বিজাতীয়, কোলেস্টেরল এবং অল্প পরিমাণে ফাইবার থাকে, এমন খাবার কলোরেক্টাল ক্যানসারের কারণ হতে পারে। এ ছাড়া ধূমপান, অ্যালকোহল গ্রহণ এবং অতিরিক্ত ওজনও কলোরেক্টাল ক্যানসারের কারণ হতে পারে।’
কলোরেক্টাল ক্যানসার মানেই কি মৃত্যু? উপস্থাপকের এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. এ টি এম কামরুল হাসান বলেন, ‘কোনো ক্যানসার মানেই মৃত্যু নয়। আগে বলা হতো, “ক্যানসার হ্যাজ নো অ্যানসার।” কিন্তু এখন বলা হয়, “ক্যানসার হ্যাজ মেনি মেনি অ্যানসার।” কারণ, বর্তমানে অধিকাংশ ক্যানসার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ নিরাময়যোগ্য। আর কলোরেক্টাল ক্যানসার জটিল বা ব্যয়বহুল নয়। তাই এতে বাঁচার হার খুবই বেশি।’
কলোরেক্টাল ক্যানসারের আধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতি সম্পর্কে ডা. এ টি এম কামরুল হাসান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক গাইডলাইন মেনে দুই ধরনের চিকিৎসাপদ্ধতি দেওয়া হয়। কোলন ক্যানসারের ক্ষেত্রে হচ্ছে সার্জারি এবং কেমোথেরাপি। আর রেক্টাল ক্যানসারের ক্ষেত্রে সার্জারি, কেমো ও রেডিওথেরাপি দিতে হয়। তবে অবস্থাভেদে ইমিউনো-থেরাপিও দরকার হতে পারে। আর বাংলাদেশে বিশ্বমানের ক্যানসার চিকিৎসা রয়েছে। বিশেষ করে ক্যানসারের ওষুধ উৎপাদনে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। শুধু দরকার ক্যানসারের প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ।’