হায় হায় পার্টি হায় হায় করতেই থাকুক: প্রধানমন্ত্রী
বিরোধীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যারা নাই নাই, গেল গেল, হায় হায় করে বেড়াচ্ছে, সেই হায় হায় পার্টি হায় হায় করতেই থাকুক। মাঝেমধ্যে তাঁদেরও তো একটু বলতে দিতে হবে। আর আমরা আমাদের কাজ করে যাই। দেশ এগিয়ে যাক এবং বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘জনগণের ওপর আমাদের ভরসা আছে, জনগণ আমাদের পাশে আছে। আর জাতিই পিতাই তো বলে গেছেন ‘বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না’, কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রোববার ‘জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২২’ উদ্যাপন ও ‘জাতীয় মৎস্য পদক-২০২২’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের মূল অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে বাধা দিয়েছিল, সেই বাধা অতিক্রম করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ্বকে আমরা এ বার্তা পৌঁছে দিয়েছি যে বাংলাদেশ পারে, আমরা পারি।’ করোনা মহামারির পর রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ ও রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ফলে বিশ্ব মন্দার পরিস্থিতি বিবেচনা না করেও যাঁরা ঢালাও সমালোচনা করেন এবং বাংলাদেশকে অচিরেই শ্রীলঙ্কার কাতারে এনে দাঁড় করাতে চান, তাঁদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমাদের মাছের কোনো অভাব হবে না এবং নতুন রপ্তানি আইটেম যুক্ত করতেও সক্ষম হব। যাঁদের জলাধার আছে, তাঁরা যেন সেই জলাধারকে মাছ চাষের আওতায় আনার ব্যাপারে বিশেষ মনোযোগ দেন।’
‘নিরাপদ মাছে ভরব দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সারা দেশে ২৩ থেকে ২৯ জুলাই জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ পালিত হচ্ছে।
হাওর অঞ্চলে মৎস্য উৎপাদনের বিশাল সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু হাওর না, বাঁওড়, খাল, বিল, বিভিন্ন জলাধার এত জায়গা আমাদের। আমার তো মনে হয়, যার যেখানে এ ধরনের জলাধার আছে, তাঁরা যদি এ মৎস্য উৎপাদন করার দিকে একটু নজর দেন, শুধু মাছও না মাছের সঙ্গে কাঁকড়া, শামুক, ঝিনুক সব কিছুই চাষ করা যায়।’ তিনি বলেন, ‘কাজেই এসব করতে পারলে আমাদের নিজেদের কোনো অভাব থাকবে না। রপ্তানির ক্ষেত্রে আমরা নতুন নতুন পণ্য দিতে পারব।’
প্রধানমন্ত্রী সারা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে খাদ্য ও মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন এবং তরুণ প্রজন্মকে এ লক্ষ্যে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। ফলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি পণ্যের সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পাশাপাশি কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক মৎস্য খাতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় মৎস্য পদক-২০২২ প্রদান করেন। মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মাহবুবুল হক পুরস্কার পর্বটি সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. ইয়ামিন চৌধুরী স্বাগত বক্তব্য দেন।
‘জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২২’ উদ্যাপন উপলক্ষে গণভবন লেকে মাছের পোনা অবমুক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে মৎস্য খাতে দেশের উন্নয়নবিষয়ক একটি তথ্যচিত্রও প্রদর্শিত হয়। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্র–সংলগ্ন মাঠে তিন দিনব্যাপী কেন্দ্রীয় মৎস্য মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
প্রেশার কুকারে বেশিক্ষণ সিদ্ধ করলেও মাছের কাঁটা নরম হয়
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ‘‘মাছে ভাতে বাঙালি’’ এবং এই মাছে ভাতে বাঙালি হিসেবেই যেন আমরা থাকতে পারি।’ তিনি বলেন, মাছ প্রক্রিয়াজাত করে অক্ষত রেখে এর কাঁটা নরম করে ফেলে খাওয়ার উপযোগী করা যায় এবং এটা খুব বেশি কঠিন কাজ নয়। ঘরে ঘরে এ পদক্ষেপ নেওয়া যায়। এ প্রসঙ্গে তিনি প্রেশার কুকারে একটু বেশিক্ষণ মাছ সিদ্ধ করলেও এর কাঁটা নরম হয়ে যায় এবং বাচ্চাদেরও খাওয়ানো যায় বলেও উল্লেখ করেন। নিজের পরিবারেও প্রধানমন্ত্রী এ রকম করেন বলে একটু রান্নার রেসিপিও দিয়ে দেন তিনি।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা এ ধরনের ইন্ডাস্ট্রি যদি তৈরি করি এবং প্রেশার দিয়ে মাছ অক্ষত রেখে এর কাঁটা নরম করে যদি একে টিনজাত করতে পারি, প্রক্রিয়াজাত করে দেশে বিদেশে রপ্তানি করতে পারি, পৃথিবীর বহু দেশ এই মাছ আমাদের দেশ থেকে আমদানি করবে। অথবা মাছের তৈরি বিভিন্ন পণ্য আমরা রপ্তানি করতে পারব।’ তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এ ক্ষেত্রে আমাদের তরুণ প্রজন্ম আরও এগিয়ে আসবে। এতে তাঁদের কর্মসংস্থান যেমন হবে এবং দেশের বেকারত্ব দূর হবে। আর সেই সঙ্গে দেশও রপ্তানিযোগ্য পণ্য পাবে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদাও মিটবে। সেভাবেই দেশকে আমরা আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব বলে বিশ্বাস করি।’
এ মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণে আরও বেশি সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সমুদ্রসীমা থেকে আহরণযোগ্য ‘‘সি উড’’ (সমুদ্রের তলদেশে জলজ উদ্ভিদ) একটি মূল্যবান সম্পদ। এটা আমরা যত বেশি উৎপাদন করতে পারব, তত বেশি বিদেশেও রপ্তানি করতে পারব এবং দেশেও এটার চাহিদা বাড়ছে।’ সেই সঙ্গে শামুক ও ঝিনুক চাষের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, এটাও একটি বড় রপ্তানি পণ্য হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে। কাজেই এদিকে একটু গুরুত্ব দেবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘একসময় আমাদের মেঘনা নদীতে পিংক পার্ল (মুক্তা) হতো। সেটাও গবেষণা আমরা করছি। কিন্তু সেটাতে খুব বেশি সাফল্য আসছে না। সে দিকটা আরেকটু নজর দেওয়া দরকার। যদিও আমাদের খুব বড় সাইজের (মুক্তা) আসে না, আমাদের ঝিনুক অনেক ছোট। কিন্তু আমাদের রাইস পার্ল যেটা, এটাও কিন্তু অনেক মূল্য আছে। এটা আমাদের খুব ভালো একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে। কাজেই সেদিকেও একটু দৃষ্টি দেবেন।’