আদালতে হাজির হয়ে জামিন নিলেন বাঁশখালীর নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর

নোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন চট্টগ্রাম–১৬ আসনের (বাঁশখালী) সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ও তাঁর অনুসারীরা। গত ৩০ নভেম্বর সকালে, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনেফাইল ছবি

আচরণবিধি লঙ্ঘন ও সাংবাদিকদের মারধরের অভিযোগে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) করা মামলায় চট্টগ্রাম-১৬ আসনের (বাঁশখালী) আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ বুধবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালতে হাজির হয়ে তিনি জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তা মঞ্জুর করেন।

বাদীর আইনজীবী জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘন ও সাংবাদিকদের মারধরের মামলায় বাঁশখালীর সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন। বাদীপক্ষ থেকে তাঁর জামিনের বিরোধিতা করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন মঞ্জুর করেন।

গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর ইসির নির্দেশে মামলাটি করেন বাঁশখালী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হারুন মোল্লা। এতে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ও অজ্ঞাতপরিচয় ২০ থেকে ৩০ জনকে আসামি করা হয়। আদালত ওই দিন মামলাটি গ্রহণ করে আসামি মোস্তাফিজুরকে হাজির হতে ৩ জানুয়ারি তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ৩০ নভেম্বর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যান আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। পাঁচজনের বেশি কর্মী-সমর্থক নিয়ে ঢোকার নিয়ম না থাকলেও ১০০ থেকে ২০০ জনকে নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঢুকে পড়েন তিনি।

এতে আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়। মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে বেরিয়ে আসার পর তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। এ সময় সাংবাদিকেরা আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে প্রশ্ন করলে সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রেগে যান। তিনি কয়েকজন সাংবাদিককে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। তাঁদের হুমকি দেন। তাঁর সঙ্গে থাকা নেতা-কর্মীরাও সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন। মোস্তাফিজুর চলে যাওয়ার সময় তাঁর গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকেরা প্রতিবাদ জানাতে চাইলে তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা তাঁদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন।

এ বিষয়ে বেসরকারি ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের পক্ষ থেকে ‘নির্বাচন-পূর্ব অনিয়ম’ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণকল্পে গঠিত নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা জজ আবু সালেম মোহাম্মদ নোমানের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়। এর ভিত্তিতে কমিটি মোস্তাফিজুরের ব্যাখ্যা তলব করে। পরদিনই প্রতিনিধির মাধ্যমে ব্যাখ্যা পাঠান নৌকার এই প্রার্থী।

কমিটি নিজস্ব অনুসন্ধানে মোস্তাফিজুরের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের গালাগাল ও মারধর করে মাটিতে ফেলে দেওয়া এবং প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগের সত্যতা পায়। নির্বাচন কমিশনের কাছে দেওয়া কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, মোস্তাফিজুর সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮-এর ৮ (খ) বিধি লঙ্ঘন করেছেন।

এর আগে গত বছরের ২২ ডিসেম্বর বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে নৌকার মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজুরের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করে পুলিশ। পরে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য মোস্তাফিজুরকে ‘হুমকিস্বরূপ’ উল্লেখ করে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন দেওয়া হয়।

দলের কেন্দ্রীয় এক নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য, প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মিছিলসহ নানা কারণে তিনি সমালোচিত হন।