তফসিলের পর চোরাগোপ্তা হামলা আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা

  • ঢাকায় পুলিশের তল্লাশি কার্যক্রম আরও জোরদার করা এবং নজরদারি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত।

  • নাশকতায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার নির্দেশনা।

বিআরটিসি বাসে আগুন। গতকাল রাতে মিরপুর ১০–এ
ছবি: ফায়ার সার্ভিস

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ঢাকায় চোরাগোপ্তা হামলা এবং গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পুলিশ। এ ধরনের ঘটনা রোধে বিভিন্ন সড়কে তল্লাশি কার্যক্রম আরও জোরদার করা এবং নজরদারি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এ ছাড়া যেকোনো ধরনের নাশকতা রোধে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের আরও কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপি সদর দপ্তরে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে সভা করেছেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। এ সভার মূল আলোচ্য বিষয় ছিল গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে চোরাগোপ্তা হামলা এবং হরতাল–অবরোধে গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় করা মামলাগুলোর তদন্তের অগ্রগতি পর্যালোচনা। সভায় ঢাকার ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ডিএমপির বিভিন্ন বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া নাশকতার মামলাগুলোর তদন্তের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারাও এ সভায় যোগ দেন।

ডিএমপি সূত্র বলছে, বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্যে এসেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ঢাকায় নাশকতার ঘটনা বেড়ে যেতে পারে। এটি কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, এ নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে।

অবশ্য এ সভার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ডিএমপির পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি। এমনকি বিষয়টি নিয়ে নাম উদ্ধৃত হয়ে ডিএমপির কর্মকর্তারা কথা বলতে চাননি।

সভার আলোচনার বিষয়ে ডিএমপির এক উপকমিশনার (ডিসি) পদমর্যাদার কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ২৮ অক্টোবরের পর থেকে এখন পর্যন্ত ঢাকায় ৮০টির মতো যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে ডেমরা ও মিরপুর অঞ্চলে। ডেমরা অঞ্চলে ১১টি গাড়িতে এবং মিরপুর অঞ্চলে ৮টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সঠিক নজরদারির অভাবে এ ধরনের ঘটনা বাড়ছে। যে কারণে প্রতিটি থানা এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। একই সঙ্গে নাশকতার বিভিন্ন ঘটনায় করা মামলার তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি।

গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ধরন সম্পর্কেও সভায় আলোচনা হয়। সভায় উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বাস পার্কিং করে রাখা হয় এমন এলাকাগুলোয় টহল বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এবারের অগ্নিসংযোগের ঘটনাগুলোয় যাত্রীবেশে গাড়িতে উঠে পেছনের আসনে আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে।

যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ঠেকাতে ডিএমপির এই সভা শেষ হয় গতকাল বিকেল চারটার দিকে। এর প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা পর গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে মিরপুরের বেড়িবাঁধ এলাকায় দুটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো এক খুদে বার্তায় জানানো হয়, বাস দুটি মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির। রাত সাড়ে নয়টার দিকে মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া রাত সোয়া ১১টায় মিরপুর বেড়িবাঁধের দ্বীপনগর এলাকায় আরেকটি বাসে আগুন দেওয়া হয়।

বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা রোধে গত রোববার (১২ নভেম্বর) পরিবহন মালিক–শ্রমিকদের জন্য ১০টি নির্দেশনা দিয়েছিলেন ডিএমপি কমিশনার। এসব নির্দেশনার মধ্যে ছিল বিভিন্ন স্টপেজে যাত্রীদের ছবি তুলে রাখা, বাসের দুটি দরজা থাকলে পেছনের দরজা অবশ্যই বন্ধ রাখা, রাতে বিচ্ছিন্নভাবে বাস পার্ক না করা, কোনো উন্মুক্ত স্থানে একাধিক বাস রাখলে নিজস্ব নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা, নির্ধারিত স্থান (স্টপেজ) ছাড়া বাসে যাত্রী ওঠা–নামা না করানো।

অবশ্য বাসে আগুন দেওয়ার পেছনে সরকারের লোকজন জড়িত বলে অভিযোগ করে আসছে বিএনপি। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী একাধিকবার ভার্চ্যুয়াল ব্রিফিংয়ে এমন দাবি করেছেন।

ডিএমপির গতকালের সভায় উপস্থিত থাকা একটি সূত্র জানায়, বাসে যাঁরা অগ্নিসংযোগ করছেন, তাঁদের অনেকেই পেট্রল পাম্প থেকে মোটরসাইকেলের জন্য প্রথমে জ্বালানি তেল সংগ্রহ করেন। পরে সেই জ্বালানি তেল যানবাহনে আগুন দেওয়ার কাজে ব্যবহার করেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে বাসে অগ্নিসংযোগের পর মোটরসাইকেলে করে দ্রুত পালিয়ে যাচ্ছেন। এ ধরনের নাশকতা রোধে তল্লাশি কার্যক্রম আরও জোরদার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় যাঁরা এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছেন, তাঁদের শনাক্ত করতে এলাকাভিত্তিক নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার।