২৪ জনপ্রতিনিধির হার, জয়ী ২০ 

সংসদ সদস্য পদে লড়তে ৫৯ জন জেলা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়র পদত্যাগ করেছিলেন।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হওয়ার লড়াইয়ে নেমেছিলেন ৩৯ জন প্রার্থী। তাঁদের মধ্যে জয়ী হয়েছেন ১৬ জন। হেরে যাওয়া ২৩ জন একূল-ওকূল দুকূলই হারিয়েছেন। উপজেলা চেয়ারম্যানের পদও হারিয়েছেন; আবার সংসদ সদস্যও হতে পারেননি।

অন্যদিকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে নির্বাচন করেন দুজন। এর মধ্যে একজন জয়ী হয়েছেন, আরেকজন হেরেছেন। এ ছাড়া পৌরসভার মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করে সংসদ সদস্য হতে নির্বাচন করেন তিনজন। তাঁরা সবাই জয়লাভ করেন। সব মিলিয়ে এবারের জাতীয় নির্বাচনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্য থেকে ২০ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। যদিও হেরেছেন ২৪ জন। নির্বাচনের ফলাফলের তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

অবশ্য নির্বাচনে লড়তে ৫৯ জন জেলা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়র পদত্যাগ করেছিলেন। ১৫ জন জনপ্রতিনিধি বিভিন্ন কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। কেউ কেউ জাতীয় পার্টিকে আসন ছেড়ে দিতে গিয়ে সরে গেছেন। কেউ দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে আদালতের রায়ে শেষ মুহূর্তে নির্বাচন করতে পারেননি। আবার কেউ কেউ উপজেলা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেও মনোনয়নপত্র নেননি।

জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়া ৩৯ জন উপজেলা চেয়ারম্যানের মধ্যে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেন আটজন। এদের সাতজন নির্বাচনী বৈতরণি পার হয়েছেন। তাঁরা হলেন, মুন্সিগঞ্জ-১ আসনে মহিউদ্দিন আহমেদ, সাতক্ষীরা-৪ আসনে এস এম আতাউল হক, চট্টগ্রাম–১২ আসনে মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৪ আসনে এস এম আল মামুন, সিরাজগঞ্জ–৪ আসনে শফিকুল ইসলাম, শেরপুর-৩ আসনে এ ডি এম শহিদুল ইসলাম এবং বগুড়া–৫ আসনে মজিবুর রহমান মজনু। সুনামগঞ্জ–২ আসনের নৌকার প্রার্থী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়া সেনগুপ্তার কাছে হেরে যান। আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের ছোট ভাই।

পদত্যাগ করা ৩২ জন উপজেলা চেয়ারম্যান নৌকা প্রতীক না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। তাঁদের মধ্যে ৯ জন জয়ী হন। আর ২৩ জন হেরে যান।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন শাহজাহান ভূঁইয়া। যদিও এ আসনের (নারায়ণগঞ্জ ১) আওয়ামী লীগের প্রার্থী বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর কাছে হেরে যান তিনি।

অন্যদিকে কুষ্টিয়া-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিন ট্রাক প্রতীক নিয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে (নৌকা) হারিয়ে দেন। ময়মনসিংহ–৬ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মালেক সরকার ৫২ হাজার ২৮৫ ভোট পেয়ে জয়ী হন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোসলেম উদ্দিন হেরে যান।

এক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জয়ী, একজন পরাজিত

জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে জাতীয় নির্বাচনের লড়াইয়ে হেরে যান সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস। সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল মমিন মণ্ডলের কাছে হেরে যান। মমিন মণ্ডল ভোট পান ৭৭ হাজার ৪২২। আবদুল লতিফ বিশ্বাস ভোট পান ৭৩ হাজার ১৮৩।

লালমনিরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে লালমনিরহাট–৩ আসনে নৌকার প্রার্থী হন মতিয়ার রহমান। তিনি এ আসনে জয়ী হন। 

সংসদ সদস্য পদে জয়ী ৩ মেয়র

পৌরসভার তিনজন মেয়র পদত্যাগ করে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী, একজন নৌকার। রাজশাহীর তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ (রাজশাহী-৪) নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে ১ লাখ ৭ হাজার ৯৮৩ ভোট পেয়ে জয়ী হন। এ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য এনামুল হক কাঁচি প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে হেরে যান।

মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে মোহাম্মদ ফয়সাল স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কাঁচি প্রতীকে নির্বাচন করে জয়ী হন। এ আসনে তিনি হারিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মৃণাল কান্তি দাসকে।

এ ছাড়া ময়মনসিংহ-৭ আসনে এ বি এম আনিছুজ্জামান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ট্রাক প্রতীক নিয়ে জয়ী হন। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ৭১ হাজার ৭৩৮। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাফেজ রুহুল আমীন মাদানী হেরে যান।