হঠাৎ কেন আলোচনায় ৯০ দশকের সেই ‘পপি গাইড’

এবারের নির্বাচনে কুমিল্লা-২ (হোমনা ও মেঘনা) আসনে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবদুল মজিদছবি: সংগৃহীত

নব্বইয়ের দশকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় ছিল ‘পপি গাইড’। বহু বছর পর আবার আলোচনায় এসেছে পাঠ্যবইয়ের সহায়ক হিসেবে প্রকাশিত ওই গাইড বইটি। কারণটা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই গাইডের লেখক মো. আবদুল মজিদ এবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয় পেয়েছেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মজিদ এবার কুমিল্লা-২ (হোমনা ও মেঘনা) আসনে ‘ট্রাক’ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৪৪ হাজার ৪১৪ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিটল-নিলয় গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা আহমাদ। তিনি ভোট পেয়েছেন ৪২ হাজার ৪৫৩টি।

১৯৯৬ সালে সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন আবদুল মজিদ। তখন থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত হোমনা উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এরপর আহ্বায়ক হন। ২০০৪ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে হোমনা উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

রাজনীতিতে নামার বেশ আগে পপি গাইড লেখা শুরু করেন আবদুল মজিদ, ১৯৮৮ সালে। গাইডের নাম দিয়েছিলেন বড় মেয়ে নাহরিন ফারহানার (পপি) নামে। ২০১৩ সাল পর্যন্ত এই গাইডটি বাজারে ছিল। তবে এখন আর আর প্রকাশিত হচ্ছে না।

আবদুল মজিদ নির্বাচনে জয়লাভের পর ফেসবুকে রেজুয়ানুল হক নামের একজন লিখেছেন, ৩০ বছর আগে তাঁদের সময়ে পপি গাইড পড়েননি এমন শিক্ষার্থী ছিল বিরল। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর ফুলের মালা গলায় দেওয়া আবদুল মজিদ ও তাঁর মেয়ে পপির একটি ছবি অনেকে ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন।

পপি গাইডের লেখকের নির্বাচনে জয় খালিদ হাসান নামের আরেক ব্যক্তিকেও মনে করিয়ে দিয়েছে পুরোনো দিনের কথা। উল্লেখ করেছেন কালের বিবর্তনে এই গাইড বর্তমান প্রজন্মের কাছে প্রায় অচেনা হয়ে পড়ার কথাও।

মেয়ে নাহরিন ফারহানার (পপি) সঙ্গে আবদুল মজিদ
ছবি: সংগৃহীত

গাইড নিয়ে ‘পপি’ যা বললেন


একসময় যাঁরা পপি গাইড পড়েছিলেন, তাঁদের কেউ কেউ এখন আবদুল মজিদের পাশাপাশি তাঁর মেয়ে নাহরিন ফারহানাকেও (পপি) শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। নাহরিন ফারহানা রাজধানীর গুলশান কমার্স কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। সেখানে তিনি ইংরেজি বিভাগের একজন সহকারী অধ্যাপক।

মঙ্গলবার মুঠোফোনে নাহরিন ফারহানা জানান, অনেকেই তাঁর এবং তাঁর বাবার একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। এটা তাঁর চোখেও পড়েছে। তিনি বলেন, ‘বাবা রাজনীতির মানুষ। অনেক কষ্ট করেছেন। এবার তিনি নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। বলার জন্য বলছি না, আমিও ছোটবেলায় পপি গাইড পড়েছি। বাবা গাইডের জন্য যে রচনা লিখতেন, তা আমাকে পড়তে দিতেন।’

নাহরিন ফারহানা ছাড়াও আবদুল মজিদের আরও দুই মেয়ে রয়েছেন। তাঁরা সবাই প্রতিষ্ঠিত। আবদুল মজিদের স্ত্রী রেহানা বেগম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। বর্তমানে তিনি হোমনা উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান।

পরিবারের সঙ্গে আবদুল মজিদ
ছবি: সংগৃহীত

আবদুল মজিদ ২০০৮ ও ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পান। তবে ২০১৪ সালের শেষ সময়ে কেন্দ্রের নির্দেশে মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টিকে আসন ছেড়ে দিতে হয়েছিল তাঁকে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আবদুল মজিদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। পরে তা বাতিল হয়।

১৯৫০ সালে হোমনা উপজেলার জয়নগর গ্রামে জন্ম আবদুল মজিদের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত গণিতে এমএসসি পাস করেছেন। বর্তমানে পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকেন তিনি।

এলাকায় বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছেন বলে প্রথম আলোকে জানান আবদুল মজিদ। পপি গাইড কেন লেখা শুরু করেছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি শিক্ষকতা করেছি। এটি আমার পেশা ও নেশা। তাই শিক্ষার কাজে লাগে এমন কিছু করতে চেয়েছিলাম।’