ট্রাকচাপায় মরেনি, কুকুরটিকে মেরে ফেলা হয়েছে

তিন মাস আগে তোলা কুকি নামের কুকরটির ছবি
ছবি: সংগৃহীত

একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কর্মরত রোমানা আফরোজ বললেন, ‘কুকুরটি ট্রাকচাপায় মরেনি, কুকুরটিকে মেরে ফেলা হয়েছে। অথচ ট্রাকচাপায় মরেছে বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এক বছর বয়সী কুকুর ট্রাকচাপায় মরলে শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়ার কথা, অথচ মৃত কুকুরটির শরীরে তেমন কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না।’

রাজধানীর আফতাব নগরে এ কুকুর হত্যার অভিযোগে রোমানা আফরোজ বুধবার বাড্ডা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তিনি কুকুর হত্যার সুবিচার চান।

রোমানা আফরোজ মারা যাওয়া কুকুরটির নাম রেখেছিলেন কুকি। কুকুরটি যাতে বংশবৃদ্ধি করতে না পারে, তার জন্য অস্ত্রোপচার (স্পে) করা, জলাতঙ্কের টিকা দেওয়া এবং গলায় বেল্ট পরিয়ে দিয়েছিলেন। আফতাব নগরের লোহার ব্রিজের কাছে রাস্তায় থাকা কুকিসহ মোট ১০টি কুকুরকে রোমানা আফরোজ নিয়মিত খাবার দেওয়াসহ দেখভাল করেন। এলাকাবাসীও তা জানেন।

আফতাব নগরের বাসিন্দা রোমানা আফরোজ সাধারণ ডায়েরিতে উল্লেখ করেছেন, আফতাব নগর সোসাইটির সাধারণ ও আনসারের পোশাক পরা নিরাপত্তাকর্মীরা আগে থেকেই কুকুরগুলোকে লাঠি ও ইট দিয়ে মারা এমনকি বুট জুতা দিয়েও আঘাত করতেন বিভিন্ন সময়। কুকুরের ক্ষতি করারও হুমকি দিয়ে আসছিলেন।

রোমানা আফরোজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘৬ ডিসেম্বর সকাল সাতটায় কুকুরগুলোকে খাবার দিতে গিয়ে কুকিকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। নিরাপত্তাকর্মীদের কাছে জানতে চাইলে প্রথমে তাঁরা কিছু জানেন না বলে বলেন। এরপর স্বীকার করেন, আগের দিন রাতে ট্রাকচাপায় একটি কুকুর মারা গেছে। এটুকু বললেও ট্রাকচাপায় মারা যাওয়া কুকুরটির মরদেহ কোথায় আছে তা জানেন না বলে জানান। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজির পর আফতাব নগরের শেষ মাথায় গিয়ে দেখতে পাই, কুকুরটির মাথা বালিতে চাপা দিয়ে ফেলে রাখা হয়েছে। শরীরে তেমন কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। গলায় বেল্টও নেই।’

রোমানা আফরোজ কুকুরটির দেহ তাঁর বাসার সামনে এনে রাখেন। বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ যাওয়ার আগপর্যন্ত কুকুরটির মরদেহ তাঁর বাসার সামনেই রেখেছিলেন। পরে রাজধানীর কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতালে বাড্ডা থানার পুলিশ কুকুরটির ময়নাতদন্ত করিয়েছে। এরপর কুকুরটিকে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে।

রোমানা আফরোজ বলেন, কুকুরটিকে মেরে ফেলার আগের দিনও নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে তাঁর কথা–কাটাকাটি হয়। এরপরই কুকুরটির মরদেহ পাওয়া যায়। এ ছাড়া কুকি নির্দিষ্ট জায়গা ছেড়ে কোথাও যেত না। তাই এ কুকুরটিকে মেরে ফেলা হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। রোমানা আফরোজ অভিযোগ করে বলেন, সোসাইটির নিরাপত্তাকর্মীরা এর আগেও বলেছেন, অনুমোদন ছাড়া রাস্তার কুকুরকে নাকি খাওয়ানোও যাবে না।

বাড্ডা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নাদিম মাহমুদ কুকুর হত্যার অভিযোগের তদন্ত করছেন। তিনি সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, কুকুরটি ট্রাকচাপায় মরেছে, নাকি মেরে ফেলা হয়েছে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। হাসপাতালে নিয়ে কুকুরটির ময়নাতদন্ত করে মরদেহ কুকুরটির দাবিদারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রোমানা আফরোজ বললেন, কুকুর হত্যার অভিযোগ করা থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত বাড্ডা থানার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে তিনি সার্বিক সহযোগিতা পেয়েছেন। কুকুর হত্যার অভিযোগ বলে কেউ বিষয়টি নিয়ে অবজ্ঞা বা অবহেলা করেননি।
পুলিশ কর্মকর্তা নাদিম মাহমুদ বললেন, ‘আমরা যেকোনো অভিযোগই গুরুত্বের সঙ্গে নিই। কুকুর হত্যার অভিযোগ বলে তা নিয়ে অবহেলা করার সুযোগ নেই।’