যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিলে ভারত–চীনের ওপর নির্ভরতা বাড়তে পারে বাংলাদেশের

বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংঘাতময় হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বেলজিয়ামের ব্রাসেলসভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ। সংস্থাটি বলছে, বিতর্কিত ও কারচুপির নির্বাচন হলে বাংলাদেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এর জেরে চীন ও ভারতের ওপর বাংলাদেশ সরকারের নির্ভরশীলতা আরও বাড়তে পারে।

গত বুধবার ক্রাইসিস গ্রুপের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন পূর্বাভাস তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে চলতি অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে সম্ভাব্য নানা সংঘাত ও সংকটের আশঙ্কার কথাও বলা হয়েছে। এতে বাংলাদেশের নির্বাচন ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র ও জঙ্গিগোষ্ঠীর তৎপরতা এবং কক্সবাজারে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে নানা সংকটের কথাও বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পদত্যাগ করে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতি বিরোধীরা যে আহ্বান জানাচ্ছে, তা প্রত্যাখ্যান করতে পারে দলটি। একই সঙ্গে বিএনপির নেতা–কর্মীদের ওপর দমন–পীড়ন চালিয়ে যেতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এতে করে রাজনৈতিকভাবে বিরোধী মতের সমর্থকেরা সংঘাতে জড়াতে পারেন। বিভিন্ন দলের কার্যালয় ও নির্বাচনী প্রার্থীদের ওপরও হামলা হতে পারে। সরকারের বিরুদ্ধে আরও সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলো।

ক্রাইসিস গ্রুপের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ভোট কারচুপির আশঙ্কায় নির্বাচন বর্জন করতে পারে বিরোধী দল এবং তারা আরও সহিংস ও উগ্র হয়ে উঠতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচনে কারচুপি হলে এবং বিতর্কিত হলে সরকারবিরোধী তুমুল বিক্ষোভ শুরু হতে পারে। নির্বাচন স্বচ্ছ না হলে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞার মতো নানা নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। এতে করে ভারত ও চীনের ওপর সরকারের নির্ভরশীলতা আরও বাড়তে পারে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম ও রোহিঙ্গা পরিস্থিতির অবনতি

আগামী কয়েক মাসে পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র সংগঠন কুকি–চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) প্রতিপক্ষ সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ক্রাইসিস গ্রুপ। তারা বলেছে, এ অঞ্চলের সশস্ত্র সংগঠনগুলোর প্রতি সমর্থন বাড়াতে পারে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো। এ ছাড়া নব্য–উগ্রপন্থী গোষ্ঠী জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া পার্বত্য চট্টগ্রামে ঘাঁটি গেড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান বাড়তে পারে। ফলে উত্তেজনাও বাড়তে পারে।

ক্রাইসিস গ্রুপ বলছে, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোয় আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও এর প্রতিদ্বন্দ্বী রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মতো অপরাধী ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘাত বাড়তে পারে। এতে ভুক্তভোগী হতে পারেন বেসামরিক মানুষ। আরসার মতো বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী সহিংসতা চালিয়ে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিরোধিতা করতে পারে।

এ ছাড়া দাতারা সহায়তা কমিয়ে দিলে রোহিঙ্গা শিবিরে খাদ্য ও কর্মসংস্থানের সংকট দেখা দিতে পারে। অনুদানে ঘাটতি দেখা দিলে শিবিরগুলোয় জাতিসংঘ বাধ্য হয়ে সেবা কমাতে পারে। এতে রোহিঙ্গারা, বিশেষ করে তরুণেরা বিভিন্ন অপরাধ চক্র ও সশস্ত্র গোষ্ঠীতে জড়িয়ে পড়তে পারেন। বাড়তে পারে সহিংসতা।