গেটম্যান-মাইক্রোচালককে দায়ী করল আরেকটি কমিটি, ১১ সুপারিশ

গত ২৯ জুলাই ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী ট্রেন পর্যটকবাহী একটি মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে নিয়ে যায়
ফাইল ছবি

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ট্রেন দুর্ঘটনায় গেটম্যান সাদ্দাম হোসেন ও মাইক্রোবাসচালক গোলাম মোস্তফার দায় পেয়েছে রেলওয়ের আরেকটি তদন্ত কমিটি। এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে রেল লেভেল ক্রসিংয়ে স্বয়ংক্রিয় অ্যালার্ম বা সাইরেনের ব্যবস্থাসহ ১১টি সুপারিশ করেছে কমিটি।

গত ২৯ জুলাই বেলা দেড়টার দিকে ভয়ংকর ওই দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত হন। ওই দিন বড়তকিয়া স্টেশন এলাকায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী ট্রেন পর্যটকবাহী একটি মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে নিয়ে যায়।
এর আগে ১৬ আগস্ট রেলওয়ের বিভাগীয় পর্যায়ের পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি এই দুর্ঘটনার জন্য গেটম্যান ও চালককে দায়ী করে। ওই কমিটির প্রধান ছিলেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনসার আলী।

আজ মঙ্গলবার সকালে রেলওয়ের চার সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটিও প্রতিবেদন দেয়। কমিটির প্রধান অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (রেলপথ) আরমান হোসেন। বাকি সদস্যরা হলেন—অতিরিক্ত প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা জাকির হোসেন, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মোস্তফা জাকির হোসেন ও অতিরিক্ত প্রধান সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী তারেক মো. শামস তুষার।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত কমিটি দুর্ঘটনার জন্য মাইক্রোবাসচালক ও গেটম্যানকে দায়ী করেছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে দায়ী করা চালক গোলাম মোস্তফা দুর্ঘটনার দিন ঘটনাস্থলে নিহত হন। আর গেটম্যান সাদ্দাম হোসেনকে চাকরিচ্যুত করতে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তিনি কারাগারে আছেন। তিনি রেলওয়ের স্থায়ী কর্মী নন। একটি প্রকল্পের আওতায় গেটম্যানের দায়িত্বে ছিলেন।

তদন্ত কমিটি বলছে, তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন, স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য, ট্রেনচালক, পরিচালক (গার্ড), গেটম্যান ও দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের সাক্ষ্য নিয়েছেন। তাঁদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন দিয়েছেন।

তদন্ত কমিটির একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনার জন্য মাইক্রোবাসচালক ও গেটম্যানের দায় রয়েছে। গেটম্যান ঘটনাস্থলে ছিলেন না, তবে তিনি ব্যারিয়ার বা প্রতিবন্ধক দণ্ড ফেলেছিলেন। এরপর অন্য কোথাও চলে যাওয়ার কারণে কেউ না কেউ তা তুলে ফেলেন। আর মাইক্রোবাসচালক আইন অমান্য করেছেন। তাঁদের দুজনের কারণে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
তদন্ত কমিটির ১১ সুপারিশ

লেভেল ক্রসিং এলাকায় ট্রেন দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য ১১টি সুপারিশ করেছে কমিটি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, প্রতিটি লেভেল ক্রসিংয়ে স্বয়ংক্রিয় অ্যালার্মিং বা সাইরেনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। ট্রেন নির্ধারিত দূরত্বে এলে সাইরেন বেজে উঠবে। প্রতিটি লেভেল ক্রসিংয়ে স্বয়ংক্রিয় গেট রাখতে হবে। কেউ চাইলেও যেন তুলে না ফেলতে পারে। লেভেল ক্রসিংয়ে দায়িত্বরত গেটম্যানদের খাকি পোশাক দিতে হবে। লেভেল ক্রসিংগুলোয় নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা, ক্রসিংয়ে গেটম্যানদের ঘরে ল্যান্ড ফোনের ব্যবস্থা ও বিদ্যুৎ–সংযোগ দিতে হবে।

প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকায় লেভেল ক্রসিংয়ে অন্তত তিনজন গেটম্যানকে দায়িত্ব দেওয়ার কথাও সুপারিশে বলা হয়েছে। তাঁদের জন্য আবাসনের সুবিধা রাখতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া লেভেল ক্রসিং এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে।
লেভেল ক্রসিংয়ের আগে স্বল্প উচ্চতার গতিরোধক স্থাপন করা, লেভেল ক্রসিং এলাকায় পারাপারের নিয়মকানুন নিয়ে গণমাধ্যমে প্রচারণা চালানোর কথাও সুপারিশে বলা হয়েছে।