সময়ের মুখ

ঋণ পরিশোধ করলে মনও ভালো থাকে

বেতন দিতে না পারায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বিদ্যালয় ছাড়তে হয় সোহরাব আলীকে। এখন তাঁর বয়স ৭৫। ৬১ বছর পর সম্প্রতি সেই বিদ্যালয়ে গিয়ে বকেয়া বেতন পরিশোধ করেন তিনি। ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বাসিন্দা সোহরাব আলীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আজাদ রহমান

সোহরাব আলী
প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আপনি তো এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পরিচিত মুখ।

সোহরাব আলী: দেশের মানুষ এভাবে আমাকে ভালোবাসবে, তা আমি নিজেও ভাবিনি।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আপনাকে নিয়ে খবর প্রকাশের পর কে কী বলেছে?

সোহরাব আলী: পত্রিকার খবর আমি পড়ার আগেই একের পর এক ফোন আসতে শুরু করে। অনেকে বাড়িতে এসে দেখা করে গেছেন। মিডিয়ার (গণমাধ্যম) লোকেরাও বাড়িতে এসেছেন। আত্মীয়স্বজনও ফোন করে প্রশংসা করেছেন।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আপনি তো শৈলকুপা উপজেলার ফুলহরি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। কী মনে করে এত বছর পর বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে গেলেন?

সোহরাব আলী: আমি চাইনি ঋণ রেখে আমার মৃত্যু হোক। এটা খুব খারাপ হবে। সেই চিন্তা থেকেই বিদ্যালয়ে যাই টাকা পরিশোধ করতে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আপনাকে কী বলেছিলেন?

সোহরাব আলী: তাঁরা বেতন গ্রহণ করেন। কয়েকজন শিক্ষক আমার সঙ্গে ছবি তোলেন। তাঁরা জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আমি এত আগের ঘটনা মনে রেখেছি কীভাবে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আপনি ৩০০ টাকা পরিশোধ করেছেন। আসলে পাওনা কত ছিল?

সোহরাব আলী: চার মাসের বেতন বকেয়া ছিল। মাসে চার টাকা করে। এখনকার বাজারমূল্য অনুমান করে ৩০০ টাকা দিয়েছি।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: টাকা দেওয়ার পর এখন কেমন লাগছে?

সোহরাব আলী: নিজের মধ্যে একটা ভালো লাগা কাজ করছে। মনে হয় আমি একটু হলেও ভালো কিছু করতে পেরেছি।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আপনি অবসরের আগে কী করতেন?

সোহরাব আলী: ব্যবসা করতাম। এর আগে পুলিশে যোগ দিয়েছিলাম। ১৯৬৮ সালে চাকরি ছেড়ে দিই। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ব্যবসা শুরু করি।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: পুলিশের চাকরি কেন ছেড়েছিলেন?

সোহরাব আলী: তখন বেতন খুব কম ছিল। কাজও অনেক ঝুঁকির ছিল। সে কারণে ছেড়ে দিয়েছিলাম।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: মুক্তিযুদ্ধের সময় কোথায় ছিলেন?

সোহরাব আলী: ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিই। পরে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করি। পুলিশের প্রশিক্ষণ থাকায় তখন সুবিধা হয়েছিল। তবে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় আমার নাম আসেনি।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: পরিবারে কে কে আছেন?

সোহরাব আলী: স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: সবার উদ্দেশে আপনি কিছু বলবেন?

সোহরাব আলী: আমি মনে করি ঋণ নিয়ে কবরে যাওয়া ঠিক নয়। ঋণের টাকা পরিশোধ করা জরুরি। এটা করলে মানুষের নৈতিকতা বৃদ্ধি পাবে, নিজের মনও ভালো থাকবে। ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করার যে প্রবণতা, তা কমলে মানুষে মানুষে বিশ্বাস বাড়বে।