চিকিৎসাধীন চার জুলাইযোদ্ধা আদৌ বিষপান করেছেন কি না, তা তদন্ত করে দেখছে সরকার। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এ কথা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক বলেন, ‘জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চারজন জুলাইযোদ্ধা বিষপান করেছেন। আজকেও একজন আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। আপনারা বলছেন, বিদেশ থেকে চিকিৎসক এনে সেবা দিয়েছেন। তারপরও তাঁরা এমন কেন করছেন?
জবাবে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘উনারা (জুলাইযোদ্ধা) আদৌ বিষপান করেছেন কি না, খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। এটা নিয়ে আমাদের সরকারি পর্যায়ে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে যে উনারা যেটা পান করেছেন, এটা আসলেই বিষ কি না।’
প্রধান উপদেষ্টার এই উপ-প্রেস সচিব আরও বলেন, দীর্ঘদিন কেউ চিকিৎসাধীন থাকলে তাঁর মধ্যে হতাশা দেখা দিতে পারে। সরকারের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে তাঁদের মানসিকভাবে যতটা সম্ভব সমর্থন দেওয়ার। এরপরও যদি কারও মধ্যে হতাশা থাকে, সরকারের সংশ্লিষ্ট যাঁরা দায়িত্বশীল আছেন তাঁরা এ বিষয়ে আরও যত্নবান হবেন এবং তাঁদের যত বেশি সম্ভব মানসিকভাবে সমর্থন জুগিয়ে যাবেন।
জুলাইযোদ্ধাদের চিকিৎসা দেওয়া সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরে আবুল কালাম আজাদ বলেন, সরকারি–বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে এ পর্যন্ত ১৫ হাজার ৩৯৩ জন চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। ৩৩৮ জন এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের মাধ্যমে ৪০ জন আর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ১১ জন জুলাইযোদ্ধা উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও রাশিয়ায় গেছেন। তাঁদের চিকিৎসা বাবদ সরকারের ৬১ কোটি ২ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।
আরও ২৮ জন জুলাইযোদ্ধাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও তুরস্কে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, বিভিন্ন হাসপাতালে যাঁরা চিকিৎসাধীন, তাঁদের যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, চীন, মালয়েশিয়া ও নেপাল থেকে ২৬ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এসে ইতিমধ্যে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দিয়েছেন। এই চিকিৎসকদের শুধু যাতায়াত খরচ দেওয়া হয়েছে। এ বাবদ সরকারের ৩৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে।
সরকার জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে আবুল কালাম আজাদ বলেন, এখন পর্যন্ত ৮৩৪টি শহীদ পরিবারের মধ্যে ৬৩০টি শহীদ পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে ৬৩ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র দেওয়া হয়েছে। সঞ্চয়পত্রের জন্য ব্যাংক চেক দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট যাঁরা আছেন, তাঁদের ওয়ারিশ নির্ধারণ–সংক্রান্ত বিষয় নিষ্পত্তি সাপেক্ষে সঞ্চয়পত্র দেওয়া হবে।
প্রধান উপদেষ্টার এই উপ-প্রেস সচিব আরও জানান, গণ-অভ্যুত্থানে ‘এ’ ক্যাটাগরির আহত ৪৯৩ জনকে ২ লাখ টাকা করে ৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়েছে। ‘বি’ ক্যাটাগরির আহত ৯০৮ জনকে ১ লাখ টাকা করে ৯ কোটি ৮ লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়েছে। ‘সি’ ক্যাটাগরির আহত ১০ হাজার ৬৪২ জনকে ১ লাখ টাকা করে মোট এককালীন ১০৬ কোটি ৪২ লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়েছে।
এখন পর্যন্ত শহীদ পরিবারগুলোর সঞ্চয়পত্র প্রদান, আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও চেক প্রদান বাবদ মোট ২৮৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলেও জানান আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম, জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ উপস্থিত ছিলেন।