স্বাবলম্বী হওয়ার পথে সংগ্রামের গল্প শোনালেন তৃণমূলের নারীরা

ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের সোশ্যাল গার্ডেন হলরুমে ‘বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক’–এর অষ্টম জাতীয় সম্মেলনে অতিথিরা। ঢাকা, ৭ অক্টোবর
ছবি: প্রথম আলো

‘২০১৪ সালের আগে গৃহিণী ছিলাম। কথা বলার ভাষা ছিল না। প্রশিক্ষণ পেয়ে এখন জীবন পরিবর্তন করতে পেরেছি। নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হয়েছি।’ এভাবেই বলছিলেন বরিশালের নারী রীতা ব্রহ্ম। তিনি বলছিলেন স্বাবলম্বী হওয়ার পথে তাঁর সংগ্রামের কথা। এই সংগ্রামের স্বীকৃতি হিসেবে ১৫ অক্টোবর তিনি পুরস্কার নিতে যাচ্ছেন ইতালি।

সুনামগঞ্জের একটি মাদ্রাসার শিক্ষক রোমেনা আক্তার জানান, তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি ব্যবসা করছেন। তিনি বলেন, ‘কিছু লোক চায়, আমরা যেন ঘর থেকে বের হতে না পারি; যাতে ঘরে কাজ করি আর তাঁদের যত্ন করি।’

আজ শনিবার ‘বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক’–এর অষ্টম জাতীয় সম্মেলনে অংশ নিয়ে নেটওয়ার্কের সদস্য তৃণমূলের এমন আরও স্বাবলম্বী নারীরা জানান, তাঁদের বেশির ভাগই একসময় গৃহিণী ছিলেন। এখন তাঁদের অনেকে সংগঠক, ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি। সমাজ ও পরিবারে তাঁদের মর্যাদার জায়গা তৈরি হয়েছে। ‘নারীরাই ক্ষুধামুক্তির মূল চাবিকাঠি’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এ সম্মেলনে অংশ নেন প্রায় ৮০০ নারী।

রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের সোশ্যাল গার্ডেন হলরুমে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বেসরকারি সংস্থা দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের তৃণমূলের নারী প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন ‘বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক’। ২০০৬ সালে গঠিত এ নেটওয়ার্কে ৯ হাজারের বেশি নারী যুক্ত। এ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সারা দেশে বনিয়াদি প্রশিক্ষণ, বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও নারীদের নিজেদের মধ্যে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়।

সম্মেলনে অতিথির বক্তব্যে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহান বলেন, নিজেকে ‘নেত্রী’ বলার মতো আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে নারীদের। সম্মেলনে তিনি তেমন নারীদেরই দেখা পেয়েছেন। নারীরা এখন নিজেদের শক্তি বুঝতে পেরেছেন। ৫০ বছর আগে এটা আশাও করা যেত না। দেশের নারীরা অনেকটাই এগিয়েছেন, নিজেকে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলেছেন। তবে এখনো বাল্যবিবাহ, নারী নির্যাতনের মতো ঘটনা অনেক বেশি ঘটছে। তৃণমূলের নারীরা একে অপরের পাশে দাঁড়ালে নির্যাতন, বাল্যবিবাহ কমে আসবে।

আরেক অতিথি মানবাধিকার সংগঠক হামিদা হোসেন বলেন, দেশে মানবাধিকার স্থাপন করতে গেলে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নানা পদক্ষেপ নিতে হয়। তৃণমূলের নারীদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। নারীর বিরুদ্ধে ঘটা ঘটনার ক্ষেত্রে মানবাধিকার ও নারীবিষয়ক সংগঠনগুলো একসঙ্গে কীভাবে কাজ করতে পারে, সেটা দেখা দরকার।

দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের বৈশ্বিক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও এ দেশে নিযুক্ত প্রতিনিধি (কান্ট্রি ডিরেক্টর) বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নারীমুক্তি মানেই নারীশক্তি। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন সম্ভব। নেটওয়ার্ক তা করে দেখিয়েছে। এখানে একজন নারী অপরজনকে সহায়তা করে প্রজ্বলিত করেছেন। এভাবে এগোলে আত্মনির্ভরশীল, সমৃদ্ধ ও মর্যাদার বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।

নারী উদ্যোক্তা তাজিমা হোসেন মজুমদার বলেন, নারীদের স্বাবলম্বী হয়ে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করতে হবে। তা না হলে এগোতে পারবেন না তাঁরা।

সম্মেলনে নারী নেতৃত্ব বিকাশ কর্মসূচির প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের কর্মসূচি পরিচালক নাছিমা আক্তার। স্বাগত বক্তব্য দেন বিকশিত নারী নেটওয়ার্কের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাশিদা আক্তার। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন বিকশিত নারী নেটওয়ার্কের টাঙ্গাইল জেলা সভাপতি আঞ্জু আরা।