অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিল প্রত্যাহার দাবি শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের

মে দিবস উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব ও পুরানা পল্টন মোড় এলাকায় মিছিল-সমাবেশ করে নিজেদের দাবিদাওয়া তুলে ধরেন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা
ছবি: সাজিদ হোসেন

অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিল প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। তাঁরা বলেছেন, শ্রমিকের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের চেষ্টা সহ্য করা হবে না। শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা করতে হবে। মহান মে দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাব ও পুরানা পল্টন মোড়ের সমাবেশে বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা এসব কথা বলেন।

মে দিবস উপলক্ষে আজ সোমবার প্রেসক্লাব ও পুরানা পল্টন মোড়ে মিছিল ও সমাবেশ করে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ), জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন, গার্মেন্টস ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশন, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট, বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশন, জাতীয় শ্রমিক জোট, রিকশা ভ্যান ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ হকার ইউনিয়ন।

গত ৬ এপ্রিল অত্যাবশ্যক পরিষেবা বিল-২০২৩ জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে। পরে বিলটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। এই বিল পাস হলে সরকার জনস্বার্থে প্রয়োজন মনে করলে কোনো অত্যাবশ্যক পরিষেবার ক্ষেত্রে ধর্মঘট নিষিদ্ধ করতে পারবে। কোনো ব্যক্তি বেআইনি ধর্মঘট শুরু করলে বা চলমান রাখলে সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

অত্যাবশ্যক পরিষেবার আওতায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, ই-কমার্স ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক বা ডিজিটাল সেবা; ডিজিটাল আর্থিক সেবা; বিদ্যুৎ সঞ্চালন, বিতরণ, সরবরাহ ও বিক্রয় এবং এ-সংক্রান্ত স্থাপনার রক্ষণাবেক্ষণ ও সম্প্রসারণ; স্থলপথ, রেলপথ, জলপথ বা আকাশপথে যাত্রী বা পণ্য পরিবহনসেবা এবং সংস্থা বা কারখানার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোনো পরিষেবাও রয়েছে।

বিলে বলা হয়েছে, কিছু ক্ষেত্র বিবেচনায় সরকার চাকরি বা চাকরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো পরিষেবাকে অত্যাবশ্যক পরিষেবা হিসেবে ঘোষণা করতে পারবে। যেমন কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে জনকল্যাণমূলক সেবা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এ রকম চাকরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো পরিষেবাসহ কয়েকটি ক্ষেত্রে সরকার অত্যাবশ্যক পরিষেবা ঘোষণা করতে পারবে।

শ্রমিকনেতারা বলেন, ইপিজেডসহ নতুন গড়ে ওঠা শিল্পকারখানায় আইনি বাধা ও সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে উঠছে না। ফলে শ্রমিকেরা সংখ্যায় বাড়লেও সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছেন। বাজারদরের সঙ্গে সংগতি রেখে বাঁচার মতো মজুরি নির্ধারণের কথা উঠলেই সামনে আনা হচ্ছে শিল্পসংকট, বাজারসংকট, করোনার অভিঘাত আর যুদ্ধ পরিস্থিতিকে।

আরও পড়ুন

শ্রমিকনেতারা আরও বলেন, গার্মেন্টসহ নানা সেক্টরের মজুরি নির্ধারণে চলছে টালবাহানা। শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের দাবি জাতীয় দ্রুততম মজুরি নির্ধারণের বিষয় নিয়ে চলছে দীর্ঘসূত্রতা। শ্রমিকদের সংগঠন গড়ার স্বাধীনতাকে নানাভাবে সংকুচিত করে রাখা হয়েছে। সর্বশেষ শ্রমিকদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সর্বোচ্চ উপায় হিসেবে ধর্মঘট করার অধিকারও অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা আইনের খড়্গের নিচে আটকে রাখার চেষ্টা চলছে।

অগণতান্ত্রিক ধারাগুলো বাতিল করে গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রবর্তনের দাবি জানিয়ে শ্রমিকনেতারা আরও বলেন, শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তা, কর্মক্ষেত্রে নিহত-আহতদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে।

সমাবেশে বক্তব্য দেন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, শাহ মো. আবু জাফর, সাইফুজ্জামান বাদশা, রাজেকুজ্জামান রতন, চৌধুরী আশিকুল আলম, কামরুল আহসান, শামিম আরা, চিকিৎসক ওয়াজেদুল ইসলাম খান, বাদল খান, নইমুল আহসান জুয়েল, রিপন চৌধুরী, আমিরুল হক আমিন, ফিরোজ হোসেন, আবুল কালাম আজাদ, নুরুল আমিন, মাহবুবুল আলম, আজিজুন নাহার, আব্দুর রাজ্জাক, খলিলুর রহমান, কামরূল আহসান, আমিরুল হক আমিন, আনোয়ার আলী, শাহানা ফেরদৌসী লাকী, সাব্বাহ আলী খান কলিন্স, কামরুল হাসান, নগর নেতা কিশোর রায়, তাপস কুমার রায়, হাজি পিনচু প্রমুখ।