১৬৭ কোটি টাকার রপ্তানি পণ্যের ক্ষতি 

দুর্ঘটনার পর চট্টগ্রাম কাস্টমসের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে রপ্তানি পণ্যের ক্ষয়ক্ষতির এই চিত্র উঠে এসেছে।

সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ
ফাইল ছবি

প্রায় ১০ মাস আগে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে আগুন থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণে রপ্তানির অপেক্ষায় থাকা ১ কোটি ৯৩ লাখ ডলার মূল্যের (১৬৭ কোটি টাকা, ডলারের তৎকালীন মূল্য অনুযায়ী) পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুর্ঘটনার পর চট্টগ্রাম কাস্টমসের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে রপ্তানি পণ্যের ক্ষয়ক্ষতির এই চিত্র উঠে এসেছে। কমিটির প্রতিবেদন প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। শিগগিরই প্রতিবেদনটি কাস্টমস কমিশনারের কাছে জমা দেওয়া হবে।

এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে বিস্ফোরণের ঘটনায় রপ্তানি পণ্যের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র উঠে এল। তবে আমদানি পণ্য ও ডিপোর অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো জানা যায়নি। যদিও আমদানি পণ্যের ক্ষয়ক্ষতি বলতে ছিল দুটি কনটেইনারের পণ্য।

গত বছরের ৪ জুন রাতে বিএম ডিপোতে আগুন থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যসহ ৫১ ব্যক্তি নিহত হন, আহত হন দুই শতাধিক। বিস্ফোরণে ডিপোর একাংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। এ ঘটনায় ডিপোতে কনটেইনার ও ছাউনিতে মজুত থাকা রপ্তানি পণ্য ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুর্ঘটনার পর ১৭ জুলাই কাস্টমস কতৃর্পক্ষ সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। রপ্তানির অপেক্ষায় থাকা পণ্যের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের জন্য এই কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটির সদস্যরা দুর্ঘটনার সাত মাস পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। মূলত ক্ষয়ক্ষতি চিহ্নিত করা হয় কাস্টমস, ডিপো ও রপ্তানিকারকের নথি যাচাই করে। কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্ঘটনার সময় কনটেইনার ও ছাউনিতে কার্টনে পাঁচ কোটি সাত লাখ ডলারের রপ্তানি পণ্য মজুত ছিল।

কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিপোর ১ নম্বর ছাউনিতে থাকা কার্টনভর্তি পণ্য পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ছাউনির সামনেই হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের কনটেইনারে মূলত বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ছাউনিতে মোট ১ লাখ ২৬ হাজার কার্টনে ১ কোটি ৭ লাখ ডলারের রপ্তানি পণ্য ছিল। আবার বিস্ফোরণে যেসব কনটেইনার পুরোপুরি ধ্বংস হয়, সেগুলোতেও ছিল ১ লাখ ৫ হাজার কার্টনে ৭৮ লাখ ডলারের রপ্তানি পণ্য। আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৭ লাখ ৭১ হাজার ডলারের পণ্য। সব মিলিয়ে ১ কোটি ৯৩ লাখ ডলারের রপ্তানি পণ্য পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুর্ঘটনার সময় প্রতি ডলারের বিনিময়মূল্য ছিল ৮৬ টাকা ৭৩ পয়সা। এ হিসেবে টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৬৭ কোটি টাকা। দুর্ঘটনায় ৩ কোটি ১৩ লাখ ডলার বা ২৭১ কোটি টাকা মূল্যের পণ্য অক্ষত ছিল।

ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের এই কমিটির আহ্বায়ক হলেন কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার মো. মুশফিকুর রহমান। কমিটিতে বিজিএমইএ, কনটেইনার ডিপো সমিতি, বিএম ডিপো ও কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের প্রতিনিধিরা সদস্য হিসেবে ছিলেন।

কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপকমিশনার বদরুজ্জামান মুন্সি প্রথম আলোকে বলেন, বিস্ফোরণের ঘটনায় রপ্তানি পণ্যের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণে এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি খসড়া প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে। শিগগির চূড়ান্ত প্রতিবেদন কতৃর্পক্ষের কাছে জমা দেওয়া হবে।

২০১১ সালে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের দুটি প্রতিষ্ঠানের ১৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগে বিএম ডিপো চালু হয়। এই ডিপোর চেয়ারম্যান নেদারল্যান্ডসের নাগরিক রবার্ট প্রঙ্ক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান। পরিচালক হিসেবে আছেন স্মার্ট জিনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবুর রহমান।

কনটেইনার ডিপোগুলোর মূল কাজ রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনা। কারখানা থেকে রপ্তানি পণ্য প্রথমে কাভার্ড ভ্যানে করে বেসরকারি এসব ডিপোতে পাঠানো হয়। কাভার্ড ভ্যান থেকে রপ্তানি পণ্য নামিয়ে রাখা হয় ডিপোর ছাউনিতে। এরপর কনটেইনারে বোঝাই করে বন্দরে নিয়ে জাহাজে তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া ৩৮ ধরনের আমদানি পণ্যের কনটেইনার বন্দর থেকে ডিপোতে এনে খালাস করা হয়।

ডিপো ব্যবসার দুই দশকে এই দুর্ঘটনা ছিল সবচেয়ে বড়। দুর্ঘটনার পর এই ডিপো ব্যবহার করে আমদানি-রপ্তানি ও খালি কনটেইনার সংরক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুর্ঘটনার পর ডিপো পরিচালনাকারীরা স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেন। এরপর গত বছরের ২২ আগস্ট শুধু খালি কনটেইনার সংরক্ষণের অনুমোদন দেয় কাস্টমস। গত বছরের ২৫ অক্টোবর ৯ শর্তে পোশাকপণ্য রপ্তানি কার্যক্রম ব্যবস্থাপনার অনুমোদন দেওয়া হয়। শর্ত পরিপালন করায় গত ৭ নভেম্বর আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পুরোদমে শুরুর অনুমোদন পায় এই ডিপো।