এনইআইআর চালুতে ‘আপস করবে না’ সরকার, কমতে পারে আমদানি শুল্ক

মোবাইল ফোনফাইল ছবি

দেশে অবৈধ পথে ও চোরাই মোবাইল ফোন আনা বন্ধের লক্ষ্যে ১৬ ডিসেম্বর থেকে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) চালু করতে যাচ্ছে সরকার। এ ক্ষেত্রে নতুন করে সময় বাড়ানো হচ্ছে না। তবে মুঠোফোন আমদানিতে শুল্ক কমানো এবং বর্তমানে ব্যবসায়ীদের মজুতে থাকা অবৈধ মোবাইলগুলো সহজ প্রক্রিয়ায় বৈধতা দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে।

গত রোববার মোবাইল আমদানিতে অত্যন্ত জরুরি ভিত্তিতে শুল্ক ও ভ্যাট কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। চিঠিতে বলা হয়েছে, যেহেতু ১৬ ডিসেম্বরে এনইআইআর সিস্টেম চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সে জন্য এর আগেই শুল্ক ও ভ্যাট–কাঠামো যৌক্তিক করা প্রয়োজন। এমনভাবে শুল্ক ও ভ্যাট হার নির্ধারণ করা উচিত, যাতে উৎপাদন ও আমদানির মধ্যকার বৈষম্য কমে আসে এবং বিনিয়োগ সুরক্ষা নিশ্চিত হয়।

এ বিষয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এনইআইআর চালু হবেই। এটা নিয়ে কোনো আপস হবে না।’ তিনি আরও বলেন, আমদানি শুল্ক কমিয়ে আনার জন্য এনবিআরের সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে। বৈধ আমদানির শুল্ক সহজ হবে।

প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব
ফাইল ছবি

আর অবৈধভাবে আনা যেসব ফোন এখন ব্যবসায়ীদের স্টকে আছে, সেগুলোর বৈধতা দেওয়ার জন্য আলোচনা চলছে। তবে সেটির জন্য ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ওই সব হ্যান্ডসেটের আইএমইআই (মুঠোফোন শনাক্তকরণ নম্বর) জমা দিতে হবে।

এনইআইআর কী

এনইআইআর হলো এমন একটি কেন্দ্রীয় ডেটাবেজ (তথ্যভান্ডার), যেখানে দেশে ব্যবহৃত প্রতিটি মোবাইল হ্যান্ডসেটের আইএমইআই (মুঠোফোন শনাক্তকরণ নম্বর) নিবন্ধিত থাকবে। নির্দিষ্ট এনআইডির সঙ্গে ডিভাইসটি যুক্ত থাকবে অর্থাৎ কোন ফোনটি কার নামে নিবন্ধিত, কোন সিম কোন ডিভাইসে চলছে, ডিভাইসটির মালিকানা বদল হলে কার কাছে গেছে—এসব তথ্য রাষ্ট্রীয় ডেটাবেজে থাকবে।

আরও পড়ুন

‘নকল ফোন আনা বন্ধ হবে’

বিটিআরসি ও এনবিআরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে রোববার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের সঙ্গে একটি ভার্চ্যুয়াল বৈঠক হয়। বৈঠকের একটি সূত্র জানিয়েছে, শুল্ক কমানোর বিষয়ে এনবিআর রাজি হয়েছে। তবে কতটা কমানো হবে, তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী প্রথম আলোকে বলেন, আমদানি করার জন্য আমদানিকারকদের একটি ‘এনলিস্টমেন্টের’ (তালিকা) প্রয়োজন হয় এবং যে কোম্পানি থেকে আমদানি করা হচ্ছে, সেই কোম্পানির কাছ থেকে নথি লাগে। ছোট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তাঁরা সব সময় ওই কোম্পানির নথি দিতে পারেন না। এটা কতটা সহজ করা যায়, তা নিয়ে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করবে বিটিআরসি।

বিটিআরসি চেয়ারম্যান আরও বলেন, পুরো প্রক্রিয়াটি করার একটি উদ্দেশ্য হলো ক্লোন, রিফার্বিশড ও চোরাই ফোন দেশে আনা বন্ধ করা। আমদানিকারকদের প্রমাণ করতে হবে, যে মুঠোফোন তাঁরা আমদানি করছেন, সেটি আসল। এ ক্ষেত্রে তাঁরা যদি ডিলারদের কাছ থেকে কিনে থাকেন, তাহলে ডিলারকে সনদ দিতে হবে যে ফোনটি আসল।

আরও পড়ুন

ব্যবসায়ীদের দাবি

ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার চালুর উদ্যোগের বিরোধিতা করে মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশের (এমবিসিবি) ব্যানারে গত রোববার সকাল থেকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনের সামনে অবস্থান নেন মুঠোফোন ব্যবসায়ীরা। মোট আটটি দাবিতে টানা ১১ ঘণ্টা তাঁরা এই কর্মসূচি পালন করেন।

ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) সংস্কারসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে রোববার বিটিআরসি ভবনের সামনে অবস্থান নেন মোবাইল ব্যবসায়ীরা
ফাইল ছবি

দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যবসায়ীদের শুল্ক পরিশোধ, লাইসেন্স নেওয়া এবং বিটিআরসি ভেন্ডর তালিকায় যুক্ত হতে ছয় মাস সময় দেওয়া। হ্যান্ডসেট আমদানি করতে কোনো ব্র্যান্ডের লিখিত অনুমতি লাগবে না, শুধু সরকারি লাইসেন্স থাকলেই ব্যবসায়ী পণ্য আমদানি করতে পারবে এমন বিধান করা। এখন বিদেশ থেকে আসা রেডি ফোন (সিবিইউ) এবং দেশে যন্ত্রাংশ সংযোজন করা ফোনের (সিকেডি) মধ্যে শুল্কের ব্যবধান কমিয়ে আনা। এনইআইআর প্রকল্প পুরোপুরি সরকারি অর্থে বাস্তবায়ন করা। এনইআইআর চালুর পর মজুত থাকা ফোন বিক্রি করতে অন্তত ছয় মাস সময় দেওয়া এবং দোকানের বিক্রির রশিদকেই বৈধ রেজিস্ট্রেশন কাগজ হিসেবে গ্রহণ করা।

আরও পড়ুন