যৌন নিপীড়ন রোধে আইন থাকলেও প্রয়োগ নেই

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ৫৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় বক্তারাছবি: সংগৃহীত

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আজ নারীদের জন্য সংবেদনশীল পরিবেশ নেই। যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে আইন থাকলেও বাস্তবে এর প্রয়োগ নেই। আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় সংগঠনের সুফিয়া কামাল ভবন মিলনায়তনে এ সভার আয়োজন করা হয়। সংগঠনের ৫৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন উপলক্ষে ‘বৈষম্যকে চ্যালেঞ্জ করি, সমতার চেতনা প্রতিষ্ঠা করি’ শীর্ষক এ সভা হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম। তিনি বলেন, নারীর জীবনের মূল সংকট বৈষম্য। এই বৈষম্য কোন কোন জায়গায় আছে, তা চিহ্নিত করতে হবে। লড়াকু নারীর জীবনে যে সাহস সঞ্চার হয়েছে, তাকে সংগঠিত করতে হবে। নারী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নারীর সমতা, ন্যায়বিচার ও মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

আলোচক হিসেবে সভায় বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সালমা আলী বলেন, যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে বিভিন্ন আইন থাকলেও তার বাস্তব প্রয়োগ নেই। আইনের প্রয়োগ করতে হলে সম্মিলিতভাবে নারী আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে। নতুন প্রজন্মের কাছে আন্দোলন দৃশ্যমান করতে হবে।

গ্লোবাল টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, দেশে অসাম্যতার বিরুদ্ধে একটা লড়াই চলছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আজ নারীদের জন্য সংবেদনশীল পরিবেশ নেই। রাষ্ট্র ও সমাজ নারীর প্রাপ্যটুকু দিতে চায় না। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে নারী নেতৃত্বের কথা বলা হলেও এখানে বৈষম্য আছে। বৈষম্য যে অপরাধ—এটা নীতিনির্ধারণী ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব না হলে বৈষম্য দূর হবে না।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক নাসিম আক্তার হোসাইন বলেন, নারী কি তার নিজের কথা বলতে পারে? এটা আজ মৌলিক প্রশ্ন। এর সঙ্গে নারীর স্বার্থ, গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ সংরক্ষিত। নারীর মুক্তির জন্য দেয়ালের বাইরে এসে কাজ করতে হবে। নারীর কাজের অর্থনৈতিক মূল্য দিতে হবে।

সভায় আরও বক্তব্য দেন বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক শায়লা নাসরিন, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের পরিচালক শাহনাজ সুমী এবং ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আদনান মুস্তারি।

সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম। ঘোষণায় বলা হয়, নারীর প্রতি বৈষম্য কেবল নারীর বিষয় নয়, এটি সামাজিক বিষয়। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের নারীসমাজের অগ্রগতি দৃশ্যমান হলেও নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নের পথে সহিংসতাসহ বিভিন্ন সামাজিক ও পারিবারিক বাধার বিস্তার ঘটেছে।

সভার শুরুতে সংগীত পরিবেশন করেন মৃদুলা সমাদ্দার। কবিতা আবৃত্তি করেন দোলন কৃষ্ণ শীল। সভা সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সম্পাদক উম্মে সালমা বেগম।