সংক্রমণ কমছে, সতর্কতার পরামর্শ

  • জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও ফ্রান্সে সংক্রমণ বাড়ছে।

  • সর্বশেষ এক সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্রে।

  • ইউরোপ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল ও আফ্রিকায় সংক্রমণ কমছে।

করোনাভাইরাস
প্রতীকী ছবি

সারা বিশ্বে করোনার সংক্রমণ ক্রমে কমে আসছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সর্বশেষ এক সপ্তাহে কয়েকটি দেশে সংক্রমণ বেড়েছে। এই তালিকায় আছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্সসহ কয়েকটি দেশ। বাংলাদেশে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিম্ন পর্যায়ে। 

বর্তমান সময়ে সারা বিশ্বে সংক্রমণের পেছনে আছে মূলত করোনাভাইরাসের অমিক্রন ধরন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ সংক্রমণ হচ্ছে অমিক্রনে। গত বছরের ২৬ নভেম্বর করোনাভাইরাসের অমিক্রন ধরন প্রথম শনাক্ত হয়েছিল। চার সপ্তাহের মধ্যে অমিক্রন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। অমিক্রনের রয়েছে পাঁচ শতাধিক উপধরন (সাবলাইনেজ)।

বাংলাদেশেও অমিক্রনের উপধরন এখন সক্রিয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশে কয়েক মাস ধরে অমিক্রনের বিভিন্ন ধরনই সক্রিয় আছে। নমুনা পরীক্ষায় বর্তমানে এক্সবিবি.১ নামের উপধরনটি বেশি পাওয়া যাচ্ছে।’

আইইডিসিআরের পরিচালকসহ দেশের জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, দেশে সংক্রমণের হার খুবই কম। মৃত্যুও কমে এসেছে। পরিস্থিতি অনেকটাই স্বস্তিদায়ক। তবে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।

বৈশ্বিকভাবে করোনা সংক্রমণ কমছে। তবে কিছু দেশে সংক্রমণ ও মৃত্যু দুই–ই বাড়ছে। বাংলাদেশে পরিস্থিতি সর্বনিম্ন পর্যায়ে।

বৈশ্বিক পরিস্থিতি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের সর্বশেষ সাপ্তাহিক রোগতাত্ত্ব্বিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ১৪ ডিসেম্বর। প্রতিবেদনে ৫ থেকে ১১ ডিসেম্বর—এই সাত দিনের বৈশ্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, সাত দিনে সারা বিশ্বে ৩৩ লাখ ২৬ হাজার ৩১০ জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অর্থাৎ প্রতিদিন ৪ লাখ ৭৫ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সর্বশেষ সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা তার আগের সপ্তাহের চেয়ে ২ শতাংশ বেশি।

আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই বৃদ্ধি খুব আশঙ্কাজনক না হলেও শীতপ্রধান দেশগুলোতে বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা নিতে হবে। এসব দেশে শীতের সঙ্গে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

এ অবস্থায় বুধবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে আশা প্রকাশ করা হয়, আগামী বছর থেকে করোনাকে ঘিরে জনস্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি অবস্থা আর থাকবে না। আগামী জানুয়ারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি কমিটি বৈঠকে বসবে। এই কমিটি মূলত সংস্থার প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুসকে পরামর্শ দিয়ে থাকে।

কিছু দেশে এ সময়ে সংক্রমণ বাড়তে দেখা গেছে। জাপানে নতুন শনাক্ত হয়েছে ৮ লাখ ৪৯ হাজার ৩৭১ জন। আগের সপ্তাহের চেয়ে তা ১৩ শতাংশ বেশি। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে শনাক্ত হয়েছে ৪ লাখ ৪৮ হাজার ৬৩৪ জন নতুন রোগী। যা আগের সপ্তাহের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি। জাপানের প্রতিবেশী দেশ দক্ষিণ কোরিয়ায়ও বাড়ছে সংক্রমণের হার। দেশটিতে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৯২ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে এক সপ্তাহে। এটি আগের সপ্তাহের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি। ফ্রান্সে শনাক্ত হয়েছে ৩ লাখ ৬৬ হাজারের বেশি, যা আগের সপ্তাহের চেয়ে ৫ শতাংশ কম। শতাংশের হিসাবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। 

সর্বশেষ এক সপ্তাহে করোনায় বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে ৭ দিনে ২ হাজার ৯৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ দেশটিতে এখনো দৈনিক তিন শর বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে করোনায়। ওই সময়ে জাপান, ব্রাজিল ও ফ্রান্সে করোনায় মৃত্যু হয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৩৫৮, ৬০৩ ও ৪৭৮ জন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ছয়টি অঞ্চলের মধ্যে ওই সপ্তাহে দুটি অঞ্চলে শুধু করোনার সংক্রমণ বেড়েছে। সেই দুটি অঞ্চল হলো পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও আমেরিকা অঞ্চল। দুই অঞ্চলে যথাক্রমে সংক্রমণ আগের সপ্তাহের তুলনায় ৩ ও ২৭ শতাংশ বেড়েছে। বাকি অঞ্চলগুলোর মধ্যে ইউরোপে ১১ শতাংশ, দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় ৩৩ শতাংশ, পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ২ শতাংশ ও আফ্রিকায় ৭৩ শতাংশ সংক্রমণ কমেছে। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬৪ কোটি ৬৭ লাখ ৪০ হাজার ৫২৪ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৬৬ লাখ ৩৭ হাজার ৫১২ জন। 

বাংলাদেশ পরিস্থিতি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওই সাপ্তাহিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের পরিসংখ্যান নেই। এক সপ্তাহে কোনো দেশে আক্রান্ত বা মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে গেলে দেশটির পরিস্থিতির আলাদা উল্লেখ থাকে প্রতিবেদনে।

তবে ৫ থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করোনা পরিস্থিতি নিয়ে যে তথ্য গণমাধ্যমে পাঠিয়েছে, তাতে দেখা যায়, ওই সপ্তাহে বাংলাদেশে নতুন করে ১৬৯ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন। আর মারা যান দুজন। এর আগের সপ্তাহে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১১০ জন এবং মারা গিয়েছিলেন ৩ জন।

গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত সারা দেশে ১৬  জন নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। তবে এ সময়ে করোনায় কারও মৃত্যু হয়নি।

দেশের মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা কমে এসেছে। খুব কম মানুষকে মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা যায়। এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাস্ক ব্যবহারকে আমরা আর বাধ্যতামূলক বলছি না, তবে মাস্ক ব্যবহারের সুপারিশ আমরা করছি।’